দেশে লুটপাটের রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছে: জিএম কাদের

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে লুটপাটের রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছে: জিএম কাদের

দেশে লুটপাটের রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, দেশে লুটপাটের রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছে, যে যত লুটপাট করতে পারবে, সে তত সম্মানিত ব্যক্তি। যে যত বড় লুটেরা সে তত দেশপ্রেমিক হিসেবে গলায় মালা নিয়ে ঘুরবে।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাপার বনানী কার্যালয়ে জাতীয় কৃষক পার্টির সাথে মত বিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়, আমলাতন্ত্রের যোগসাজসে কিছু ব্যবসায়ী নামধারী লুটপাট করে দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। কোন ব্যবসা নেই, কিন্তু হাজার-কোটি টাকা আয় করছে তারা। যারা দেশের মানুষের সম্পদ লুট করছে তাদের জন্যই সরকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যারা দেশের জন্য ভালো কাজ করতে চাচ্ছেন, তারা যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না।

জিএম কাদের বলেন, আমরা তিনশো আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারো দয়া-দাক্ষিণ্যে নয়, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, নিজস্ব একটি দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো। সাধারণ মানুষই দেশের মালিক হবে। দেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে কারা-কিভাবে দেশ চালাবে। যদি ঠিক মত দেশ না চলে তাহলে দেশের মানুষ আবার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন ও সরকার পরিবর্তনই হচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা। শহীদের রক্তের সাথে আমরা কখনোই বেঈমানী করবো না। আমরা শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করবো।

তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ সুশাসন চায়, দেশের মানুষ ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চায়। যেখানে গরীব ও দুঃখি মানুষের পাশে দাঁড়াবে সরকার। আমাদের সরকার গরীব ও দুঃখি মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। দেশের সম্পদ লুট করে যারা হাজার কোটি টাকার মালিক, তাদের পাশে দাঁড়ায় সরকার।

তিনি বলেন, যেহেতু ডলার সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাই সরকার সকল জমি কৃষি কাজের আওতায় আনতে উপদেশ দিচ্ছেন। কিন্তু, যারা কৃষিকাজ করে দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখছেন, তাদের বাঁচিয়ে রাখতে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখলে আমরা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবো না। কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনে কৃষি ঋণ মওকুফ করতে হবে। ব্যাংক থেকে যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়, তাদের ঋণ সরকার মাফ করে দেয় কিন্তু কৃষকের ১০ হাজার টাকা ঋণ মওকূফ হয়না। লুটেরারা হাজার কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক ফাঁকা করে ফেলে আর কৃষকদের টাকায় সেই ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখা হয়। ব্যাংক লুটেরাদের জন্য কোন শাস্তির ব্যবস্থা হয় না, রিশিডিলিউয়িংয়ের মাধ্যমে তাদের উপরের দিকে তোলা হয়। ব্যাংক লুটেরাদের এমপি- মন্ত্রী বানানো হয়। আবার, ১০ হাজার টাকা ঋণের জন্য কৃষক ঘরে ঘুমাতে পারে না। সামান্য টাকার জন্য পুলিশ কৃষকদের হয়রানি করছে। কৃষকদের বাঁচাতে যতটা ভর্তুকি লাগে তা সরকারকে দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের কৃষকদের বাঁচাতে পল্লী রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী যেনো সাধারণ কৃষকের নাগালের মধ্যে থাকে সেজন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যে মূল্য কৃষকরা দিতে পারে, সেই মূল্যেই তাদের নিত্যপণ্য দিতে হবে। দেশের এমন দুর্দিনে আমাদের কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কৃষক ঋণ খেলাপী হয়ে নির্যাতিত হলে, কৃষকের প্রয়োজন হলে ন্যায্য মূল্যে সার না পেলে অথবা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হলে জাতীয় পার্টি তাদের পাশে থাকবে। কৃষকরা যেনো ন্যায্য মূল্য পায় সে জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকার বাজারে কোন পণ্যের দাম যদি ৫শো টাকা হয়, গ্রামের কৃষক কেন ১শো টাকার কম পাবে? কৃষকরা যেনো ন্যায্য মূল্য পায় সেজন্য জাতীয় পার্টির নেতা-কমীঁরা প্রয়োজনে আন্দোলন করবে। ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, ৬৮ হাজার গ্রামের কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কৃষিতে নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। ৭৪ সালে সাত কোটি মানুষের দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে আর এখন ১৮ কোটি মানুষের দেশে খাদ্য সংকট হচ্ছে না। উপজেলা পরিষদ সৃষ্টির মাধ্যমে ১৮ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিলেন। তারা কৃষি ও পশুপালন থেকে শুরু করে দেশের গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট আর দলবাজীর কারণে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায়।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষক পার্টির সভাপতি সাহিদুর রহমান টেপা সভাপতিত্ব করেন। কৃষক পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শেখ আলমগীর হোসেন, শেখ হুমায়ুন কবির শাওন, কাজী জামাল উদ্দিন, রমজান আলী ভূঁইয়া, আব্দুল কুদ্দুস শাওন আবুল কাশেম, মোঃ মইনুদ্দিন খান, মোঃ মনির উদ্দিন, এনামুল হক বেলাল, প্রকৌশলী এম মুনিম চৌধুরী বুলবুল প্রমুখ।