বহুদিন পর জাপার পোস্টারে রওশন

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বহুদিন পর জাপার পোস্টারে রওশন

বহুদিন পর জাপার পোস্টারে রওশন

বহুদিন পর জাতীয় পার্টির পোষ্টারে ফিরেছে রওশন এরশাদের ছবি, পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রচারিত পোস্টারে জিএম কাদের’র পাশাপাশি রওশন এরশাদের ছবি শোভা পাচ্ছে।

পোস্টারে বড় করে দেওয়া হয়েছে জিএম কাদের’র ছবি। আর পোস্টারের উপরের কোনে এরশাদের সঙ্গে জায়গা পেয়েছে রওশন এরশাদের ছবি। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি করা হয়েছে পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ওবিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপিকে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি মতপার্থক্য বেড়ে গেলে দলীয় পোস্টার-ব্যানার থেকে সরিয়ে ফেলা হয় রওশন এরশাদের ছবি। বিশেষ করে রওশন এরশাদ একতরফাভাবে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল আহ্বান করলে প্রকাশ্য হয়ে পড়ে দ্বন্দ। গত ৩১ আগস্ট রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে২৬ নভেম্বর পার্টির কাউন্সিল আহ্বান করেন। পাশাপাশি একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠনকরা হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় মাঠে নেমে পড়ে জিএম কাদের পন্থীরাও। একদিনের ব্যবধানে রওশন এরশাদকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে স্পিকারকে চিঠি দেন। যদিও শেষ পর‌্যন্ত সেই চিঠির কোন কার‌্যকারিতা দেখা যায় নি। রওশন পন্থী বলে পরিচিত কয়েকজন নেতাকেও বহিষ্কার করেন জিএম কাদের।

অন্যদিকে রওশন এরশাদ একের পর এক জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করতে থাকেন। রওশন এরশাদ ঘোষিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিও নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন পৃথকভাবে। এভাবে রওশন ও কাদের পন্থীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। জাতীয় পার্টির ভাঙ্গন অনেকটাই অনিবার‌্য বলে মনে করছিলেন অনেকেই। তেমনি অবস্থায় পটুয়াখালী জেলা জাপার সম্মেলনের ব্যানারে রওশন এরশাদের ছবি ব্যবহার নিয়ে লঙ্কাকান্ড ঘটে যায়। জিএম কাদের পন্থীরা হামলা করে সেই সভা ভন্ডুল করে দেন। রওশন পন্থী জিয়াউল হক মৃধার করা এক মামলায় জিএম কাদের এর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। এতে করে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েন জিএম কাদের। অচলাবস্থার দেখা দেয় জাপার নেতৃত্বে।

সম্প্রতি চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরলে বরফ গলতে শুরু করে জাপার। হোটেল ওয়েস্টিনে অবস্থানরত রওশন এরশাদের সঙ্গে একাধিক দফায় সাক্ষাত করেন জিএম কাদের। আবার দেবর-ভাবি মিলে একত্রে সাক্ষাত করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠক শেষে ফেরার পরও একাধিক দফায় রওশনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন জিএম কাদের। এসব বৈঠকে ভাবিকে সঙ্গে নিয়েই দল পরিচালনার করার প্রতিশ্রুতি দেন জিএম কাদের। তারই পরিণতি দেখা যাচ্ছে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে। রওশন এরশাদকেই প্রধান অতিথি করা হয়েছে। অবশ্য পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একই স্থানে দু’জন উপস্থিত থাকলে রওশনেই সম্মানীয় বলে বিবেচিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিগত কাউন্সিলের পর পার্টির কোন অনুষ্ঠানে দেখা যায় নি রওশন এরশাদকে।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠা ৩৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বেলা ২টায়রাজধানীর মুক্তাঙ্গন (সচিবালয় সংলগ্ন) থেকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। শ্যামপুর- কদমতলীথানা জাতীয় পার্টির উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেনজাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতিসৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি। বেলা ৩টায় রাজধানীরকাকরাইলস্থ জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীউপলক্ষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয়পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।

সামরিক শাসক থাকা অবস্থায় ১৯৮৪ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তখন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জণ করলে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচন। এরপর ১৯৮৬ সালে ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। এরশাদের দাবী ছিলো, তিনি ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু রাজনৈতিকদলগুলো অংশ না নেওয়ায় সংকটের কারণে নিজে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদ মারা গেলে পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দের সূত্রপাত হয় দেবর ভাবির মধ্যে। এরশাদের মৃত্যুতে শুন্য হওয়া জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদ নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। জিএম কাদের এবং রওশন এরশাদ পাল্টাপাল্টি চিঠি দেন স্পিকারকে। শেষ পর্যন্ত রওশনের চিঠিকে মূল্যায়ন করেন স্পিকার।