ষড়যন্ত্র ভেদ করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ফাইল ছবি

সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ফাইল ছবি

সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেদ করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় সংসদ নেতা এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সময় ও গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতেই হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে এসেছি। আমি জানি দেশের কিছু লোকের এটা পছন্দ হয় না। একটি চক্র আছে যারা নানাভাবে একটা ঘটনা ঘটিয়ে দেশের বিরুদ্ধে একটা বদনাম করতে পারলেই বেশি খুশি হয়।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প বন্ধ করার জন্য যারা বিদেশে তদ্বির করে বিশ্বব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দেয়, তারা দেশের কত বড় শত্রু সেটা সবাইকে বিবেচনা করতে হবে। এরা কখনো জনগণের স্বার্থ দেখে না, নিজের স্বার্থ দেখে। কিন্তু সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেদ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। বাংলাদেশ বিজয়ের পতাকা নিয়েই বিশ্বে মাথা উচুঁ করে চলবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

তিনি বলেন, দেশের কোন মানুষের ঘর অন্ধকার থাকবে না। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালাব। ৯২ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ২৩৪টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আগামী এক বছরের মধ্যে শতভাগ মানুষের ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারব।

সংসদ নেতা বলেন, গ্রামের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষ দেশের উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। গ্রামের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর শিক্ষিত জাতিই পারে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়তে। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা শিক্ষাখাতে বিনামূল্যে বই বিতরণসহ সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। তার সুফল জাতি পাচ্ছে। ২১ ভাগ দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে পেরেছি, আরও কমাব। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। জনগণের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান এই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজ থেকে অনিয়ম দূর করার জন্য সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মাদক বিরোধী অভিযান চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। মাদক-সন্ত্রাস নামক দুষ্টচক্র থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে, তার কারণ সামরিক স্বৈরাচাররা অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করতে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল, দুর্নীতির সুযোগ করে দিতে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করেছিল। দেশে গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা ছিল না। তখন দেশের মানুষ থেকেছে অবহেলিত, বঞ্চিত। যার কুফলটা আমাদের দেশ ও সমাজ ভোগ করে। অতীত সরকারের সময় (বিএনপি) পুরস্কার না পেয়ে বারবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তিরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ। তার পরেও দুর্নীতির বিষাক্ত জিনিস সবার মাঝে, প্রতি স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছি, তা অব্যাহত থাকবে। আমাদের উন্নয়নের কর্মসূচি যথাযথভাবে কার্যকর হয় সেই ব্যবস্থা করে যাব।

ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। কুয়াশার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় রেল দুর্ঘটনায় কিছু মানুষ মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে আমরা আছি। উল্লাপাড়ায় আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছু মানুষ আহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার পেছনে কোন চক্রান্ত বা দুরভিসন্ধি আছে কি না, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কারণ দেশে একটা ঘটনা ঘটার পর পরই আরো ঘটনা ঘটে। এর পেছনেও কিছু আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপির আমলে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করে দিচ্ছি। রেলে জনবল নিতে হবে, প্রশিক্ষণও দিতে হবে। তবে একটা দুটো ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে যদি ট্রেন বন্ধ করতে হয়, তবে গাড়ি দুর্ঘটনার পর কি গাড়িও বন্ধ করে দিতে হবে? কোথায় কখন মেট্টোরেল দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা তৈরি করা বন্ধ করে দেব? প্লেনও ক্র্যাশ হয়, আবার হারিয়েও যায়। তবে কি প্লেনও বন্ধ হয়ে যাবে? কেউ তো প্লেনে চলাচল বন্ধ করেনি। দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। সময় ও গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে অবশ্যই চলতে হবে।

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, বিশ্বের বহু দেশে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও তিন-চারটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়া নির্মাণ করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, সকল বর্জ্য রাশিয়াই নিয়ে যাবে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের ট্রেনিং দিয়ে নিয়ে আসছি। এক্সপার্ট আমরা তৈরি করছি। রূপপুরের পর দক্ষিণে একটি দ্বীপ খুঁজছি, সেখানেও আরেকটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করব। আর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, এটা সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন। এর চিমনি এতো ফুট উঁচুতে, কোন বাতাস সুন্দরবনে যাবে না। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই সিমেন্ট ব্যবহারে লাগে। লাইন লেগেছে এই ছাইগুলো নিতে। এতে কোনভাবেই পরিবেশ নষ্ট হবে না, বরং পাঁচ লাখ গাছ লাগানো হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে কোন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বুয়েটে আন্দোলনের আগেই আইজিপিকে ফোন করে নির্দেশ দেই, ফুটেজগুলো সংগ্রহ ও জড়িতদের গ্রেফতার করতে। কিন্তু ছাত্ররা ফুটেজ নিতে বাধা দেওয়া হলো। কেন বাধা দেবে? জড়িতরা কি বাধা দিচ্ছে, মনে প্রশ্ন জেগেছে। কোন দল করে আমরা দেখতে চাই না, অপরাধী অপরাধীই। নুসরাত হত্যাকাণ্ডেও দল দেখিনি, কাউকে ছাড় দেইনি। এটা আমার নীতির ব্যাপার। সমাজকে দুষ্টচক্র থেকে রক্ষা করতে হবে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, একজন ভিসি নিয়োগ দিলেই তার বিরদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। শিক্ষকরা তাদের স্বার্থের জন্য ছাত্রদের ব্যবহার করবে কেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা বন্ধ করে ছাত্রদের লেখাপড়া নষ্ট করা হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে আমরা সেসনজট বন্ধ করেছি। কিন্তু চক্রান্ত করে সেটা আবার সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে দিতে পারি না, আমরা দেব না। আইনেই রয়েছে, কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তা প্রমাণ হবে, প্রমাণ করতে না পারলে অভিযোগকারীদেরও শাস্তির বিধান আছে। এ ক্ষেত্রেও আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।