পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

লাফিয়ে লাফিয়ে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার দলীয় সিনিয়র সংসদ সদস্যরা। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি তারা পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। কেউ আবার এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিষয়টির অবতারণ করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। এরপর আলোচনায় অংশ নেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এত সুদক্ষ একটি মন্ত্রিসভা, তার দু’জন মন্ত্রী এখানে আছেন। তাদের অনুরোধ করতে চাই। পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে গেছে। জনগণের মধ্যে একটা রিঅ্যাকশন হচ্ছে। আজকে পর্যন্ত যে খবর আছে প্রায় ২০০ টাকা হয়ে গেছে পেঁয়াজের কেজি।

তিনি বলেন, আমরা এতো জনপ্রিয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। কি কারণে প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম? বাণিজ্যমন্ত্রী যখন সংসদে বলেন ১০০ টাকার নিচে নামবে না, তখন তো ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে যায়। তাই অনুরোধ করব প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আমদানি করছেন বলেছেন। তারপরেও কেন দাম বাড়ছে? ব্যাপারটা বোধগম্য না। এতে আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বলেছিলেন পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করবেন না। পেঁয়াজের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের মধ্যে রিঅ্যাকশন খারাপ হবে।

এরপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল হল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেটির কারণে দাম একটু বেড়েছে। একটু না আজকে পত্রিকায় দেখলাম ২০০ টাকা কেজি। এটা আমরা কোনদিন কল্পনা করি নাই। ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় নাই বর্ষার কারণে। সাধারণত এগুলো আমরা আগেই ‍মূল্যায়ন করি। আমাদের বাৎসরিক চাহিদা কত আমাদের আছে কত। আর যেটা ঘাটতি সেইটা আগেই তুরস্ক, মিশরসহ মিয়ানমার থেকে আগেই আমদানি করার ব্যবস্থা করি। টিসিবি সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রীকে বলবো যারা পেঁয়াজ আমদানি করে তাদের সুযোগ সুবিধা দেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের যখন কোন একটা পণ্যের দাম বাড়ে আমরা তার ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করি। আমি মনে করি এই মুহুর্তে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য অন্তত কিছু দিন পেঁয়াজের শুল্ক শূন্য করে দেন। আমি যখন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম কয়েক ঘণ্টার জন্য লবণের দাম বেড়েছিল তখন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী ছিলেন তাকে অনুরোধ করার পরি শুল্ক ফ্রি করে দিয়েছিলেন। এই খবর প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে লবণের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে যায়। এরকম একটা ঘোষণা দেন যে পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক লাগবে না ডিউটি লাগবে না, তাহলে এর একটা প্রভাব পড়বে।

সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, আসলে বাজারে কিন্তু পেঁয়াজ আছে। বেশ পেঁয়াজ আছে। দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণ নাই। প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছিলেন আমরা যেন পেঁয়াজ কম ব্যবহার করি। সেটাও অনেকে শুনেছেন অনেকে কার্যকরও করেছেন। কিন্তু গতকাল ছিল ১৫০ টাকা কেজি আজকে (বৃহস্পতিবার) ২০০ টাকা কেজি। এইভাবে যদি দাম বাড়ে এটা একটা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

তিনি বলেন, সরকার যেহেতু দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে লিপ্ত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন এই সময়ে যারা দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ী, যারা এটা করছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই এই সংসদে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওয়াদাবদ্ধ। দেশের জনগণকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে। এটা কোনো ভাবেই মানা যায় না। এর একটা ব্যবস্থা হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী আছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী আছেন, নিশ্চয়ই একটি পদক্ষেপ নেবেন। দেশবাসীকে আশস্ত করবেন মানুষ যেন এর সুবিধা ভোগ করে।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গত পরশু দিন বাণিজ্যমন্ত্রী সংসদে এক প্রশ্নে বলেছেন পেঁয়াজের মূল্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। এই কথা বলার পরদিন হয়ে গেল ১৫০ টাকা আর আজকে (১৪ নভেম্বর) ২০০ টাকা কেজি।  খবরে দেখলাম ভারতে কৃষক কান্না করছে, পেঁয়াজের মূল্য ৮ টাকা কেজি।

তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এত ভাল সম্পর্ক, সেই সম্পর্কের পরে সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য ব্যক্তিগত পদক্ষেপ নিতেন, তাহলে মনে হয় সংকট থাকত না। পেঁয়াজ নাই এরকম তো না। দোকানে যাই আর মার্কেটে যাই দেখি পেঁয়াজ আছে। প্রচুর পেঁয়াজ আছে। এরপর দাম বাড়ছে। একটা অভিযান করার দরকার ছিল। এটা একটা ষড়যন্ত্র। এই সরকারের অনেক অর্জন সরকারকে বদনাম করার একটা একটা পথ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাণিজ্য মন্ত্রীকে বলবো বের করুন এটা ষড়যন্ত্র কি না? মানুষ যে কিনতে পারে না, শুধু তাই না সরকারের বিরাট একটা বদনাম হচ্ছে। ৫টা ভাল কাজও অনেক সময় ম্লান হয়ে যায় খারাপ কাজের জন্য।

তিনি আরও বলেন, সরকার ফেনসিডিলের জন্য দেখা যায় তাদের ধরেন, পরে তারা রাস্তাঘাটে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে মরে যায়। এরকম পেঁয়াজের মূল্য যারা বৃদ্ধি করল ওরা একটা বন্দুকযুদ্ধে মরে যাক না, উদাহরণ তৈরি হবে। জরুরি ভিত্তিতে অভিযান নেওয়া হোক।

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেঁয়াজ নিয়ে যে রসিকতা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনী উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।