গ্রাম বাদে সব এলাকার রাস্তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ মেরামত করবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। রোববার (০৩ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ কথা জানান তিনি।
বিভিন্ন রাস্তার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংসদীয় কমিটিতে। অনেক স্থানে রাস্তার কাজ শেষ হতে না হতেই তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। অথচ সরকারের মন্ত্রী ও আমলারা বিদেশ সফর করে অভিজ্ঞতা নিয়ে এ বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলেও তা কোনো কাজে আসেনি।
এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির উদ্বেগের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে এ জন্য কম টাকায় বেশি কাজ করার প্রবণতাকে দায়ী করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এতে কি পরিমাণ অর্থ অপচয় হচ্ছে, তা নির্ধারণে স্টাডি করার সুপারিশ করা হয়।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এর আগে কমিটির তৃতীয় বৈঠকে নতুন রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারে অর্থ অবচয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে রাস্তা নিম্নমানের হওয়ার কারণে জাতীয় সম্পদের যে অবচয় হয়, তা সীমিতভাবে হলেও বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে একাউন্টিবিলিটি স্টাডি করার পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
কমিটির বৈঠকের কার্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, বহুল আলোচিত ওই বিষয়টি উত্থাপন করেন কমিটির সরকার দলীয় সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, রাস্তার কাজ শেষ করার কিছু দিন পরই রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি গ্রামীণ ও এলজিইডির প্রেক্ষাপটে হলেও শহরের অবস্থাও কিন্তু একই। একটি রাস্তা ছয়/সাত বছর টিকে থাকার কথা থাকলেও দুই/তিন বছরের মধ্যে সংস্কার করতে হয়। এতে দ্বিগুণ বা তারও বেশি অর্থ ব্যয় হয়।
এ সময় কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বৈঠকে বলেন, গত সংসদে পরিকল্পনামন্ত্রী, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও সিটি মেয়রসহ একটি টিম নিউজিল্যাণ্ডে গিয়েছিল। আরেকটি টিম মালেশিয়া ও ব্যাংকক গিয়েছিল। তারা দেশগুলো পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট দিয়েছিলেন। যে রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলার কথা না, সে রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলছে। এতে রাস্তাগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। অন্যদিকে জনগণের অর্থের অবচয় হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জবাবে মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বিষয়টি খুবই পরিচিত। প্রায়ই আলোচনা হয়। এটা দুর্নীতি, অনিয়ম, অবচয়, গাফিলতি, অলসতা আর আর্থিক অসঙ্গতি। অর্থাৎ কম টাকায় বেশি কাজ করার প্রবণতার কারণে রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে গ্রামীণ রাস্তা বাদে সব রাস্তা মেরামত করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এছাড়া লোকবল, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সমস্যা সমাধান করে বিভাগীয় পর্যায়ে আইএমইডির অফিস চালু করা হবে। যাতে কাজগুলো ভালোভাবে মনিটর করা যায়।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে বিভাগওয়ারী প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপনের লক্ষ্যে কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং হাফিজ আহমদ মজুমদার, মনজুর হোসেন, রওশন আরা মান্নান ও আদিবা আনজুম মিতার সমন্বয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বস্তিতে বসবাসরত অনগ্রসর শিশুদের উন্নত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ কোনো প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।