চুরির অপবাদে কিশোরকে পিটিয়ে জখম, ৩ দিনেও গ্রেফতায় হয়নি আসামি
কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওয়াঞ্চলীয় ইটনা উপজেলায় ছিলনী বড়হাটি গ্রামে আনচিন্নু (১৪) নামে ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরকে চুরির অপবাদ দিয়ে অমানবিকভাবে পিটিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে সে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে।
এ ঘটনায় আহত কিশোরের বাবা দিনমজুর মজিবুর রহমান হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগকারীরা জানান, একই গ্রামের তফসির মিয়া (৪০) ও তার ছোটভাই হাদিস মিয়া (৩৬) পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্য কিশোর আনচিন্নুকে নির্মমভাবে মারপিট করে।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) এ ঘটনা ঘটলেও রোববার (১৯ মার্চ) পর্যন্ত তিন দিনেও কোন আসামিকে গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কিশোরটির পরিবারসহ স্থানীয়রা।
মামলা বিবরণীতে জানা গেছে, ঘটনার দিন ওই কিশোর তার মায়ের কাছ থেকে দুই টাকার একটি কয়েন নিয়ে আসামি তফসির মিয়ার দোকানে চকলেট কিনতে যায়। সেসময় দোকানে কেউ না থাকায় সেখানে দাঁড়িয়ে কয়েনটি নিয়ে খেলছিল। খেলার এক পর্যায়ে সেই কয়েনটি ওই দোকানের ভেতরে চলে যায়। কিশোরটি তখন দোকানের ভেতরে ঢুকে কয়েনটি আনতে যায়। ওই সময় দোকানদার তফসির চলে এসে তাকে দোকানে ভেতরে দেখে পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এসময় কিশোরটি মূল ঘটনা বললেও আসামিরা সেখানে থাকা লোহার রড দিয়ে এলোপাথারিভাবে মেরে মারাত্মক জখম করে। এক পর্যায়ে তাকে বেঁধে দোকানের এক কোণায় আটকে রাখে। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় তার বাবা সেখান থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
ঘটনাটি জানাজনি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে। তারা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন। তারা বলেন, একজন স্কুল ছাত্রকে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনা শিশু অধিকার ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
রোববার (২৯ মার্চ) দুপুরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মামলার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সব ধরণের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এদিকে শিশু নির্যাতনের অপরাধে তিনদিনেও আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় কিশোরগঞ্জের একাধিক মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠন তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা এ ঘটনায় পুলিশী তৎপরতার শৈথিল্যের অভিযোগ করে জানান, থানার পাশেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন দিন ধরে আহত অবস্থায় কিশোরটি চিকিৎসাধীন থাকার পরেও আসামী গ্রেফতার না হওয়া রহস্যজনক।
এদিকে আহত আত্মীয় ফরিদ মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, কিশোর আনচিন্নু এখনও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন। তার দরিদ্র পিতাকে প্রভাবশালীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। তারা আহত কিশোর ও তার পরিবারের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার কামনা করেন।