১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতটি ছিল ভয়াবহতম একটি রাত। মানবেতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় সেই কালো রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী মেতেছিল জান্তব উল্লাসে। ঢাকা শহর হয়েছিল ধ্বংসস্তূপ। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ রাতটি এসেছে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের আতঙ্ক নিয়ে।
১৯৭১ সালের পর এতোগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও এমন আতঙ্কের রাত আর আসেনি ২৫শে মার্চে। করোনা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই ভীতি, আতঙ্ককে।
'অপারেশন সার্চলাইট' নামে কুখ্যাত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে বাঙালির জাতীয়তাবাদী, স্বাধিকার আন্দোলনকে সশস্ত্র হামলার দ্বারা দমন করতে চেয়েছিল নরপশুরা।
এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে পরিচালিত, যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত 'অপারেশন ব্লিটজ'-এর পরবর্তী সামরিক আক্রমণ।
২৫শে মার্চের পাকিস্তানি সামরিক অপারেশনের আসল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।
কিন্তু অকুতোভয় বাঙালিরা পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এবং সূচনা ঘটায় স্বাধীনতা যুদ্ধের। ২৫শে মার্চের গণহত্যা বাঙালিদের ক্রুদ্ধ ও প্রতিবাদমুখর করে তোলে। আপামর বাঙালি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারি পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
২৫শে মার্চের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিক পর্যায়গুলো। বছরের পর বছর তীব্র গণআন্দোলন শেষে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর বাঙালিরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিল যে ক্ষমতার পালাবদল হবে এবং আওয়ামী লীগ ৬ দফা অনুসারে সরকার গঠন করবে। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ এ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খান পিপিপি'র জুলফিকার আলি ভুট্টোর প্ররোচনা ও চাপে জাতীয় সংসদের কার্যাবলী মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।
পিপিপি'র জুলফিকার আলি ভুট্টো এও বলেন যে, তিনি বাঙালিদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চান। এই স্থগিতকরণের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে একটি গণসমাবেশের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে সমুজ্জ্বল সেই জনসমাবেশ এতই সফল ছিল যে, পাকিস্তান সরকার সেনাছাউনি ও পূর্বপাকিস্তানের সরকারি প্রতিষ্ঠানে সীমিত হয়ে পড়ে আর পুরো দেশ চলে যায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির অধীনে।
এমনই পরিস্থিতিতে জেনারেল ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠকের উদ্দেশ্যে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা আসেন এবং এরপর ভূট্টো তার সাথে যোগ দেন। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা না হস্তান্তরের উদ্দেশ্য নানা তালবাহানা শুরু করে আলোচনার নামে। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর ভয় ছিল যে ক্ষমতা জনরায় অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুকে হস্তান্তরিত করা হলে পাকিস্তান পিপলস পার্টির কর্তৃত্ব হ্রাস পাবে। এজন্য পাকিস্তানী জেনারেলরা পিপিপি'র ভুট্টোকে গোপনে সমর্থন যোগাতে থাকে এবং শেষ দিকে বাঙালিকে ন্যায্য রাজনৈতিক ক্ষমতার বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য পুরো বাঙালি জাতির উপর সেনা আক্রমণ চালায়।
ইতিহাসের বিবরণ অনুযায়ী, ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মার্চের শুরুতে ১৪তম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করেন। এদের পেছনে ছিলেন জেনারেল গুল হাসান। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েতা হতে ১৬তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন এবং খরিয়ান থেকে ১৯তম ডিভিশনকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার আদেশ দেয়া হয়।
পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসান পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর সামরিক হামলার বিরোধী ছিলেন বলে অপারেশনের পূর্বেই তাদেরকে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেয়া হয়। সেখানে বেলুচিস্তানের কসাই নামে নিন্দিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও জিওসি করে পাঠানো হয়।
মার্চের ১৭ তারিখ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সিওএস জেনারেল হামিদ টেলিফোন করে জেনারেল রাজাকে অপারেশনের পরিকল্পনা করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ১৮ মার্চ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের জিওসি কার্যালয়ে বসে জেনারেল রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনাটি জেনারেল ফরমান নিজ হাতে হালকা নীল রঙের একটি অফিস প্যাডের ৫ পাতা জুড়ে লিড পেন্সিল দিয়ে লিখে নেন।
এটা ধারণা করা হয় যে বাঙালি সেনারা অপারেশনের শুরুর সময় বিদ্রোহ করবে, তাই পরিকল্পনাকারীরা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে আলাপকালে বাঙালি সৈন্যদের অপারেশনের পূর্বেই নিরস্ত্র করার এবং বাঙালি রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারের প্রস্তাব দেন। পরিকল্পনাটি ২০ মার্চে আবার জেনারেল হামিদ এবং লে. জেনারেল টিক্কা পর্যালোচনা করেন।
অবশেষে অপারেশন শুরু হয় ঢাকায় ২৫ মার্চ রাতের শেষ প্রহরে এবং অন্যান্য গ্যারিসনকে ফোন কলের মাধ্যমে তাদের জিরো আওয়ারে (অপারেশন শুরুর পূর্বনির্ধারিত সময়) তাদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়। ঢাকার সৈন্যদের কমান্ডে ছিলেন রাও ফরমান আলি এবং অন্যান্য সব স্থানের সৈন্যদের কমান্ডে ছিলেন জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা। জেনারেল টিক্কা এবং তার কর্মকর্তারা ৩১তম কমান্ড সেন্টারের সব কিছু তদারকি করা এবং ১৪তম ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত ছিলেন।
২৫শে মার্চে গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে নিরস্ত্র মানুষের উপর সামরিক আক্রমণের জন্য কুখ্যাত এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার জ্বলন্ত সাক্ষী। ২৫শে মার্চের ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যেও ফিনিক্স পাখির মতো বাঙালি জাতির উত্থান ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে হানাদারদের পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল ও ঐতিহাসিক গৌরবের।
গাইবান্ধায় আলেফ উদ্দিন (৫০) নামের এক অটোভ্যান চালককে হত্যা করে অটোভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছিনতাই করতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে বিষয়টি মোবাইলফোনে বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলফিকার আলী ভুট্টো।
হত্যার শিকার ভ্যানচালক আলেফ উদ্দিন জেলার সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম পিয়ারাপুর গ্রামের (মিয়ার বাজার) গ্রামের মৃত ইউসুফ উদ্দিনের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, শুক্রবার সকালে উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের বুড়ির ঘর নামক এলাকার একটি আমন ধানের খেতে পানিতে ভাসমান অবস্থায় মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়দের খবরে ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাতনামা মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না ততদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পরে জানা যায়, নিহত ওই ব্যক্তির নাম আলেফ উদ্দিন। তিনি পেশায় একজন অটোভ্যান চালক ছিলেন। এ সময় ওসি নিহতের পরিবারের বরাতে জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলেফ ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান নিয়ে সদর উপজেলার বালুয়া বাজার থেকে পলাশবাড়ির দিকে যায়। পথিমধ্যে পলাশবাড়ি উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের বুড়িরঘর নামক স্থানে তাকে হত্যা করে মরদেহ ধানক্ষেতে ফেলে দিয়ে তার অটো ভ্যানটি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ওসি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে অটোভ্যানটি ছিনতাই করতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এজাহার পেলেই মামলা করা হবে। এছাড়া হত্যার কারণ ও জড়িতদের সনাক্তে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
নেত্রকোনা বারহাট্টায় ফিসারীতে খাদ্য দেওয়ার সময় বজ্রপাতে সেলিম সিদ্দীক (৫০) নামের এক মৎস্য চাষির মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬ টায় উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডেমুরা গ্রামের বাঘাই বিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম মিয়া একই গ্রামের মাকসু সিদ্দীকের ছেলে।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সেলিম মিয়া ফিসারীর ব্যবসা করতেন। প্রতিদনের ন্যায় আজও সন্ধ্যায় বাঘাই বিলে ভাড়া নেওয়া ফিসারীতে মাছের খাবার দিতে গিয়েছিলেন। খাবার দেওয়ার সময় হঠাৎ বজ্রসহ ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে এতে আহত হন। বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়ায় গ্রামের লোকজন ফিসারীর কাছে গিয়ে তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সেলিমের ভাগিনা মো: স্বপন মিয়া জানান, মামা ফিসারীতে খাবার দিতে গেলে হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি মারা যান। মামার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
বারহাট্টা থানার ওসি মো: কামরুল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। যেহেতু বজ্রপাতে মৃত্যু লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার প্রচুর আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই–আগস্ট মাসের পৈশাচিক গণহত্যার বিচার অচিরেই শুরু করব, তখন দেখবেন, আমাদের অনেক দ্বিধা, অনেক প্রশ্ন দূর হয়ে যাবে।’
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের শ্রী শ্রী মহাপ্রভুর আখড়া পূজামণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বর্তমান সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গঠিত হয়ে যাবে। এর কাজ কিন্তু ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমাদের প্রসিকিউশন টিম গঠিত হয়েছে প্রায় এক মাস হয়ে গেছে। আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিম গঠিত হয়েছে দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই দেশে আমরা কেউ সংখ্যালঘু নই, কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠ নই। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সবাই বাংলাদেশে সমান মর্যাদা, সমান অধিকার ভোগ করে থাকব। সবাই সবার ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করব। সবাই শান্তি ও সুখে থাকব।’
এসময় সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) তোফাজ্জল হোসেন, পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক হোসেন, সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ হোসেন, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অমর কৃষ্ণ দাস উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম নগরীর জেএম সেন হলে শারদীয় দুর্গাপূজার মণ্ডপে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিবৃতি প্রদান করেছেন নগর বিএনপি। তাদের মতে, পরিবেশন নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ধরনের আচরণ অনাকাঙ্খিত এবং নিন্দনীয়।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
দলটির ওই দুই নেতা বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের প্রত্যেকের একে অপরের ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় আচরণ এবং যার যার স্বতন্ত্র আচার উৎসবের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই জোরজবরদস্তি কিংবা চাপিয়ে দেয়ার মতো কিছু যেন করা না হয়।
তারা আরও বলেন, জেএম সেন হলে যা ঘটেছে, তার জন্য কার দায় কতটুকু, এর পেছনে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এটুকু নি:সন্দেহে বলা যায়, যারা মঞ্চে উঠে গান করেছেন, তারা সুবিবেচনার পরিচয় দেননি। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামান্তর। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার্থী ভক্তরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করেছেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, আমাদের দল বিএনপি, আমরা সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি, ধর্ম যার যার কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশি। ভবিষ্যতে আমাদের মধ্যকার সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড রুখে দেয়ার জন্য আমরা প্রশাসন ও নির্বিশেষে সকল জনসাধারণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে জেএমসেন হল পূজা মণ্ডপের মঞ্চে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি গানের দল দুটি গান পরিবেশনা করে। সেই গানের ভিডিও পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা তৈরি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ওই গানের দলের ছয় সদস্য গান পরিবেশন করতে মঞ্চে ওঠে। সংগঠনটি শাহ্ আবদুল করিমের লেখা বিখ্যাত গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের লেখা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’-শীর্ষক গান দুটি পরিবেশন করে। এর মধ্যে শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান-গানটির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমাদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে ওই গানের দলটি পূজা মণ্ডপে এসে গান পরিবেশ করেছে বলে জেনেছি। তবে ওই সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি-র সভাপতি সেলিম জামানও দাবি করেছেন পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই তাদের একটি দল পূজা মণ্ডপে গান করতে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘পূজা উদযাপন পরিষদের সজল বাবু আমাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি ফোন করে বলেন ‘‘আপনারা একটু আসেন। আপনাদের একটু ফ্লোর (সুযোগ) দেব। কিছু দেশাত্মবোধাক গান গাইবেন।’’ সে আমন্ত্রণে গিয়ে আমাদের দলটি দুটি সম্প্রীতির গান করে। কিন্তু এটি নিয়ে একটা পক্ষ প্রচারণা চালাচ্ছে ষড়যন্ত্র করতেই আমরা গান করতে গিয়েছি। আমরা তো জোরপূর্বক কিছুই করিনি। দাওয়াত পেয়েই গিয়েছিলাম।’
এ ঘটনায় ওইদিন রাতে শিল্পী দলের জনের মধ্যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে পুশিল জানিয়েছেন, এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে শহীদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়ীক সংঘাত লাগানোর চেষ্টা ছিল কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই ইসলামিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্তকেও খোঁজা হচ্ছে।
পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছে, শহীদুল করিম তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মো. নুরুল ইসলাম, দারুল ইরফান একাডেমীর শিক্ষক। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে ওই ঘটনায় পূজা উদযাপন কমিটি এক নেতা ও গান গাওয়া ছয় জনের বিরুদ্ধে নগরীর পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত, গান পরিবশেন করা চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো মামুন। এর মধ্যে ঘটনার দিন রাতে আটক হওয়া শহীদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলামকে গান পরিবেশন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও গোলমাল সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।