গাইবান্ধায় আলেফ উদ্দিন (৫০) নামের এক অটোভ্যান চালককে হত্যা করে অটোভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছিনতাই করতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে বিষয়টি মোবাইলফোনে বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলফিকার আলী ভুট্টো।
হত্যার শিকার ভ্যানচালক আলেফ উদ্দিন জেলার সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম পিয়ারাপুর গ্রামের (মিয়ার বাজার) গ্রামের মৃত ইউসুফ উদ্দিনের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, শুক্রবার সকালে উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের বুড়ির ঘর নামক এলাকার একটি আমন ধানের খেতে পানিতে ভাসমান অবস্থায় মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়দের খবরে ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাতনামা মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না ততদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পরে জানা যায়, নিহত ওই ব্যক্তির নাম আলেফ উদ্দিন। তিনি পেশায় একজন অটোভ্যান চালক ছিলেন। এ সময় ওসি নিহতের পরিবারের বরাতে জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলেফ ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান নিয়ে সদর উপজেলার বালুয়া বাজার থেকে পলাশবাড়ির দিকে যায়। পথিমধ্যে পলাশবাড়ি উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের বুড়িরঘর নামক স্থানে তাকে হত্যা করে মরদেহ ধানক্ষেতে ফেলে দিয়ে তার অটো ভ্যানটি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ওসি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে অটোভ্যানটি ছিনতাই করতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এজাহার পেলেই মামলা করা হবে। এছাড়া হত্যার কারণ ও জড়িতদের সনাক্তে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
নেত্রকোনা বারহাট্টায় ফিসারীতে খাদ্য দেওয়ার সময় বজ্রপাতে সেলিম সিদ্দীক (৫০) নামের এক মৎস্য চাষির মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬ টায় উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডেমুরা গ্রামের বাঘাই বিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম মিয়া একই গ্রামের মাকসু সিদ্দীকের ছেলে।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সেলিম মিয়া ফিসারীর ব্যবসা করতেন। প্রতিদনের ন্যায় আজও সন্ধ্যায় বাঘাই বিলে ভাড়া নেওয়া ফিসারীতে মাছের খাবার দিতে গিয়েছিলেন। খাবার দেওয়ার সময় হঠাৎ বজ্রসহ ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে এতে আহত হন। বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়ায় গ্রামের লোকজন ফিসারীর কাছে গিয়ে তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সেলিমের ভাগিনা মো: স্বপন মিয়া জানান, মামা ফিসারীতে খাবার দিতে গেলে হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি মারা যান। মামার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
বারহাট্টা থানার ওসি মো: কামরুল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। যেহেতু বজ্রপাতে মৃত্যু লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার প্রচুর আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই–আগস্ট মাসের পৈশাচিক গণহত্যার বিচার অচিরেই শুরু করব, তখন দেখবেন, আমাদের অনেক দ্বিধা, অনেক প্রশ্ন দূর হয়ে যাবে।’
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের শ্রী শ্রী মহাপ্রভুর আখড়া পূজামণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বর্তমান সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গঠিত হয়ে যাবে। এর কাজ কিন্তু ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমাদের প্রসিকিউশন টিম গঠিত হয়েছে প্রায় এক মাস হয়ে গেছে। আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিম গঠিত হয়েছে দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই দেশে আমরা কেউ সংখ্যালঘু নই, কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠ নই। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সবাই বাংলাদেশে সমান মর্যাদা, সমান অধিকার ভোগ করে থাকব। সবাই সবার ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করব। সবাই শান্তি ও সুখে থাকব।’
এসময় সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) তোফাজ্জল হোসেন, পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক হোসেন, সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ হোসেন, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অমর কৃষ্ণ দাস উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম নগরীর জেএম সেন হলে শারদীয় দুর্গাপূজার মণ্ডপে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিবৃতি প্রদান করেছেন নগর বিএনপি। তাদের মতে, পরিবেশন নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ধরনের আচরণ অনাকাঙ্খিত এবং নিন্দনীয়।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
দলটির ওই দুই নেতা বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের প্রত্যেকের একে অপরের ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় আচরণ এবং যার যার স্বতন্ত্র আচার উৎসবের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই জোরজবরদস্তি কিংবা চাপিয়ে দেয়ার মতো কিছু যেন করা না হয়।
তারা আরও বলেন, জেএম সেন হলে যা ঘটেছে, তার জন্য কার দায় কতটুকু, এর পেছনে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এটুকু নি:সন্দেহে বলা যায়, যারা মঞ্চে উঠে গান করেছেন, তারা সুবিবেচনার পরিচয় দেননি। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামান্তর। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার্থী ভক্তরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করেছেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, আমাদের দল বিএনপি, আমরা সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি, ধর্ম যার যার কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশি। ভবিষ্যতে আমাদের মধ্যকার সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড রুখে দেয়ার জন্য আমরা প্রশাসন ও নির্বিশেষে সকল জনসাধারণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে জেএমসেন হল পূজা মণ্ডপের মঞ্চে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি গানের দল দুটি গান পরিবেশনা করে। সেই গানের ভিডিও পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা তৈরি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ওই গানের দলের ছয় সদস্য গান পরিবেশন করতে মঞ্চে ওঠে। সংগঠনটি শাহ্ আবদুল করিমের লেখা বিখ্যাত গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের লেখা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’-শীর্ষক গান দুটি পরিবেশন করে। এর মধ্যে শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান-গানটির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমাদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে ওই গানের দলটি পূজা মণ্ডপে এসে গান পরিবেশ করেছে বলে জেনেছি। তবে ওই সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি-র সভাপতি সেলিম জামানও দাবি করেছেন পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই তাদের একটি দল পূজা মণ্ডপে গান করতে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘পূজা উদযাপন পরিষদের সজল বাবু আমাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি ফোন করে বলেন ‘‘আপনারা একটু আসেন। আপনাদের একটু ফ্লোর (সুযোগ) দেব। কিছু দেশাত্মবোধাক গান গাইবেন।’’ সে আমন্ত্রণে গিয়ে আমাদের দলটি দুটি সম্প্রীতির গান করে। কিন্তু এটি নিয়ে একটা পক্ষ প্রচারণা চালাচ্ছে ষড়যন্ত্র করতেই আমরা গান করতে গিয়েছি। আমরা তো জোরপূর্বক কিছুই করিনি। দাওয়াত পেয়েই গিয়েছিলাম।’
এ ঘটনায় ওইদিন রাতে শিল্পী দলের জনের মধ্যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে পুশিল জানিয়েছেন, এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে শহীদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়ীক সংঘাত লাগানোর চেষ্টা ছিল কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই ইসলামিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্তকেও খোঁজা হচ্ছে।
পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছে, শহীদুল করিম তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মো. নুরুল ইসলাম, দারুল ইরফান একাডেমীর শিক্ষক। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে ওই ঘটনায় পূজা উদযাপন কমিটি এক নেতা ও গান গাওয়া ছয় জনের বিরুদ্ধে নগরীর পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত, গান পরিবশেন করা চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো মামুন। এর মধ্যে ঘটনার দিন রাতে আটক হওয়া শহীদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলামকে গান পরিবেশন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও গোলমাল সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।