কুমিল্লায় ২১ ফেব্রুয়ারির রাতে শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় দেশব্যাপী ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের গুণবতী ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শুক্রবার পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জামাল হোসেন। এ সময় তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।
বিকেলে ইউএনও বলেন, শহীদ মিনার ভাঙার বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। ঘটনা তদন্ত করতে উপজেলা কৃষি অফিসার জোবায়ের আহমেদকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম মীর হোসেন। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে কলেজের পক্ষ থেকে পৃথক আরো একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক সারোয়ার ওসমানকে ওই কমিটির প্রধান ও কলেজের অপর দুই শিক্ষককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা কলেজ চত্বরের শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন। রাত পৌনে ১টার দিকে সবাই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পরে গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা শহীদ মিনারে ভাঙচুর চালায়।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল লতিফ বলেন, কলেজের শহীদ মিনারটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে এটি কেউ না ভাঙলে এভাবে নিচে পড়ে যাওয়ার কথা নয়। কলেজের নৈশপ্রহরী শামসুল আলমের বরাত দিয়ে অধ্যক্ষ আরো বলেন, রাত প্রায় ২টার দিকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে শহীদ মিনার চত্বরে যান ওই নৈশপ্রহরী। সেখানে গিয়ে দেখেন শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দুটি স্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন বলেন, কলেজের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করা হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় এখনই ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় ব্যক্তিরাই জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, শহীদ দিবসে শহীদ মিনারের প্রতি এমন আক্রোশ মেনে নেওয়া যায় না, আশা করবো দ্রুত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জড়িতদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবে। অপরাধীরা রক্ষা পেয়ে গেলে এমন ঘটনা আরো ঘটতে থাকবে।