ফেনীর উত্তরাঞ্চলের দুই জেলা ফুলগাজী ও পরশুরামের মানুষের মুহুরী নদীর বাঁধ ভাঙার ফলে বন্যার বিষয়ে কিছুটা অভ্যস্ত থাকলেও বন্যার বিষয়ে একেবারেই অভিজ্ঞতা ছিল না ফেনীর দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উপজেলা ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর, দাগনভুঞা ও সোনাগাজী এলাকার সাধারণ মানুষের। ফলে বন্যার আগাম প্রস্তুতি কিংবা বন্যা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ধারণা না থাকায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় সাধারণ মানুষ। বন্যায় করণীয় সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, প্রতিবছর ১৩ অক্টোবর দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালন করা হয়। প্রতিবার দিবসটি উপলক্ষে ঘূর্ণিঝড় কিংবা আগুন লাগলে করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ কিংবা আলোচনা হলেও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে কিংবা পরবর্তীতে করণীয় সম্পর্কে তেমন ধারণা দেয়া হয় না। ফলে ফেনীর বেশিরভাগ মানুষই এ দুর্যোগের বিষয়ে অনভিজ্ঞ। আগামী থেকে বন্যার বিষয়ে দুর্যোগ প্রশমন দিবসে জোর দেয়া এবং স্থানীয়দের এসব বিষয়ে প্রস্তুত করে তোলার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
চলতি বছরের আগস্টের শেষ দিকে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী। আগস্ট মাসের শেষ ১০ দিন বন্যার প্রকোপে ফেনীর কৃষি, ঘরবাড়িসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এখনো জনপদে স্পষ্ট। এখন চলছে পুনর্বাসনের কাজ। প্রবল বৃষ্টি এবং ভারত হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ১৯ আগস্ট রাতে ডুবতে শুরু করে ফেনীর উত্তরাঞ্চল। এরপর ১০দিনে সম্পূর্ণ ফেনী জেলা বন্যায় নিমজ্জিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, ফেনীর মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে বোঝে শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড়। বন্যা, খরা, আইলার মতো এসব দুর্যোগের বিষয়ে তেমন কিছু জানেনা এ জেলার মানুষ। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
ছাগলনাইয়ার নিজকুঞ্জরা এলাকার কাশেম চৌধুরী নামে বয়োবৃদ্ধ একজন জানান, আমার ৭৫ বছর বয়সে এমন বন্যা আমি দেখিনি। এলাকার মধ্যে আমাদের বাড়ি সব থেকে উঁচু তবে এখানেও পানি উঠেছে। এ এলাকার মানুষ বন্যার সঙ্গে অভ্যস্ত না। যখন পানি বাড়ছিল তখনও সবাই মনে করেছে রাতের মধ্যে নেমে যাবে। বন্যার পানি এ এলাকায় প্রবেশ যখন করছিল তবুও কেউ এলাকা ছেড়ে যায়নি, হঠাৎ সব পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ফলে আসবাপত্রসহ, ফ্রিজ, টিভি সব পানিতে ডুবে ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ঘোপাল ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া গ্রামের বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন জানান, বন্যায় দোকান-ঘরবাড়িসহ তার প্রায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে ফেনী নদী। নদীর পানি বাড়লে জোয়ারে কিছু পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে এটা আমাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয় ছিল।।কিন্তু এভাবে পানির তীব্র স্রোতে ঘর ভাসিয়ে নেবে সেটি এলাকার কেউ ধারণা করতে পারেনি। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের প্রস্তুতি থাকে। আমি তো দূরের কথা আমার বাবারাও এমন বন্যা দেখেনি। আমরা জানিওনা কিভাবে কি করতে হবে কোথায় যেতে হবে। যার কারণে আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ফেনী সদরের ফাজিলপুর এলাকার এমদাদুল হক নামে একজন বলেন, আমার নিজের চোখে পানির এমন ভয়াবহতা কখনও দেখিনি। ফেনী নদীর পানি বাড়লেও কখনও ফাজিলপুরে পানি ওঠেনি, যার কারণে আমরা ওভাবে চিন্তিতও ছিলাম না। কিন্তু সকালে বৃষ্টি হলে সন্ধ্যায় ঘরের সামনে গলা সমান পানি। না পেরেছি আসবাবপত্র সরাতে না পেরেছি ঘরের ধান-চাল সরাতে। সব পানিতে ডুবে শেষ হয়ে গেছে। আমরা জানিওনা বন্যা হলে কি করতে হয়, নিজেরা আটকে ছিলাম ঘরে। পরে উদ্ধারকর্মীরা এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
একই কথা বলছেন দাগনভুঞার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছি।তবে ঘরের কিছু সরিয়ে আনতে পারিনি। পরনের জামা কাপড় নিয়ে বের হয়ে গেছি। ৩ দিন পর বাড়িতে গিয়ে দেখি ঘরের ফ্রীজ ভাসতেছে।পাশাপাশি আলমিরাতে থাকা কাপড়চোপড়, আসবাপত্র, টিভি সব নষ্ট হয়ে গেছে।
সোনাগাজীর বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, সোনাগাজীর মানুষ ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জানে।তখন আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়, এবারের বন্যায় ছিলনা কোন সতর্কতা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল পুরো জেলা। কি থেকে কি হয়েছে নিজেরাই বুঝে উঠতে পারিনি। এসব বিষয়ে আমাদের সতর্কতা বাড়ানো উচিত। ঘূর্ণিঝড়ের করণীয় যেভাবে জানানো হয় বন্যার করণীয় সম্পর্কেও জানানো উচিত।
অন্যদিকে ফুলগাজী পরশুরামে ক্ষয়ক্ষতি হলেও সেখানকার মানুষ বলছেন তারা বন্যার পানিতে অভ্যস্ত। তবে এবারের বন্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ফুলগাজীর দরবারপুরের বাসিন্দা মোবারক হোসেন। বন্যায় তার বসতভিটা ও বিলীন হয়ে গিয়েছিল। তিনি জানান, মুহুরী নদীর বাঁধ প্রতিনিয়তই ভাঙে। এবারের বন্যার আগেও ভেঙেছে তবে এমন দশা হতে পারে কেউ কল্পনাও করেনি। বন্যা পূর্ববর্তী অবস্থা দেখে ঘরবাড়ি থেকে জানে বেঁচে অন্যর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম, ঘরের কিছু জিনিস নিতে পারলেও জানের ভয়ে সব বের করতে পারিনি। তবে এ সময়ে কি করতে হয় আমরা জানি, তবে এবারের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন।
ফুলগাজী পরশুরামের একাধিক বাসিন্দা জানান, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে তারা এক বছরে ৩ বার ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। তবে ২৪ আগস্টের বন্যা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আগামীতে এমন ভয়াবহতা রোধে অগ্রিম পূর্বাভাস ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
জেলা প্রশাসন হতে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, জেলায় ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর, ২৫০টি আধাপাকা ঘর বন্যায় সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর এবং ২ হাজার ৬৩২টি আধাপাকা ঘরের আংশিক ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৬৪ হাজার ৪১৫টি ঘরবাড়িতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া ৫৪টি মসজিদ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মোট ৬ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৪৪টি মন্দিরে ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষিখাত, প্রাণিসম্পদ, বিদুৎ ও সড়কে বিশাল অংকের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে বন্যায় বিপর্যস্ত হওয়া সাধারণ মানুষ বলছেন বন্যার কোনো পূর্বাভাসই জানতেন না তারা। বিশেষ করে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর, দাগনভুঞা ও সোনাগাজীর মানুষ তাদের এলাকায় বন্যা হতে পারে এমন চিন্তাও করেননি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।। তারা বলছেন, পূর্বাভাস ফেলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
ছাগলনাইয়ার একরাম উদ্দিন বলেন, যেখানে আমাদের দাদারা এমন বন্যা দেখেনি আমাদের দেখার ত প্রশ্নই আসেনা। বন্যার কথা শুনে ভেবেছি ফুলগাজী পরশুরামে হয়েছে। আমাদের এদিকে আসার ত সম্ভাবনা নেই। যার কারণে আমাদের কোন প্রস্তুতিও ছিলনা। অগ্রিম পূর্বাভাস ফেলে হয়ত বিহৎ আকারের ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা হলেও কম হতো।
তিনি বলেন, সরকারি যে প্রতিষ্ঠান গুলো আবহাওয়ার তথ্য দেয় তারা অনেক সময় ভুল তথ্য দেয়। দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের ১০ নম্বর বিপদ সংকেত কিন্তু বৃষ্টিও হয়না। বন্যা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। স্থায়ী সামাধান ও উদ্যোগের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি মানুষকে অবগত করা প্রয়োজন তবেই ভবিষ্যতে মানুষ সতর্ক থাকতে হবে।
সদর উপজেলার রহিম উল্ল্যাহ বলেন, এবারের বন্যা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের যদি পূর্ব প্রস্তুতি থাকত এত ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতাম না। সরকারিভাবে এটির উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন যাতে আগামীতে বন্যার পূর্বাভাস আগে থেকে দেয়া যায়। না হয় এবারে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা আবার হলে ফেনীর মানুষ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেনা। এসময় তিনি এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ কিংবা সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজনের দাবি জানান।
একদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সদ্য সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের ভাই। অন্যদিকে আবার সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনীও। মুহাম্মদ আজিজ খানকে ঠেকানোর সাধ্য আছে কার! সত্যিই তাই যেন হয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
ক্ষমতার দাপট আর রাজনৈতিক প্রভাবের জোড়া ‘সাফল্যে’ ভর করে বিমানবন্দররের ১২ একর জমি দখলে নিয়েছিল মুহাম্মদ আজিজ খানের মালিকানাধীন সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)। শুধু তাই নয়। দখলের পর ৬০০ কোটি টাকার সেই সরকারি সম্পদের ওপর বেসরকারি কনটেইনার ডিপো গড়ে তুলে ব্যবসাও করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। গত ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গার নাজিরপাড়ায় (চড়ি হলদা) অবস্থিত ওই জায়গা এভাবেই অবৈধভাবে ভোগ করে আসলেও রাজনৈতিক প্রতাপের কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
তবে বেআইনীভাবে দখলে রাখা জায়গা ছেড়ে দিতে এসএপিএলকে কয়েকবার নোটিশ দিয়েছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কিন্তু সেই নোটিশকে পাত্তাই দেয়নি এসএপিএল। এক পর্যায়ে উচ্ছেদের জন্য সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটও পাঠানো হয়েছিল। এবার আরও বড় ক্ষমতা দেখায় সামিট। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে উচ্ছেদ না করেই ফিরে আসতে বাধ্য করেছিল। তবে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন সবাই কথা বলছে সামিটের এই দখলদারী নিয়ে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও জায়গাটি পুনরুদ্ধারে তৎপর হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে এসএপিএল দখল করা জমিতে কনটেইনার ডিপো স্থাপন করে। সে সময় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও কিছুই করতে পারেনি। উল্টো ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টার্মিনালটি মূল স্থাপনার বাইরে টিন দিয়ে আরও সম্প্রসারণ করে তারা। এর প্রায় এক যুগ পর বিমানবন্দরের দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই বেবিচকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে এসএপিএল কর্তৃপক্ষকে একটি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে সেখানে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য বলা হয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আহাম্মেদ জামিল নোটিশটি স্বাক্ষর করেছিলৈন। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের পক্ষে নোটিশ গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অপারেশন) ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার।
যদিও ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদারের দাবি এসএপিএল অবৈধ দখলদার নয়। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের কেনা সম্পত্তির ওপর কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড বিমানবন্দরের কোনো জায়গা দখল করেনি। আর বেবিচক থেকে দেওয়া নোটিশের বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে।’
তবে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। জানা যায়, ১৯৯২ সালে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীন টার্মিনাল ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরির কারণে তৎকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে পতেঙ্গা থানার দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজায় সাগরপাড়ে ২৭ দশমিক ৮১৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অধিগ্রহণকৃত জায়গায় যেতে অনীহা জানায়। সে কারণে তাঁদের জন্য বিমানবন্দরসংলগ্ন বিজয়নগর এলাকায় জায়গা অধিগ্রহণ করা হয় এবং সেখানেই তাদের পুনর্বাসন করা হয়। অন্যদিকে আগে ক্রয় করা ২৭ দশমিক ৮১৫ একর জায়গায় বিমানবন্দরের নতুন আবাসিক কলোনি নির্মাণের প্রস্তাব নেওয়া হয়। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানের অভাবে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড সেখান থেকে ১২ একর জায়গা দখল করে নেয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জায়গা ছেড়ে দিতে বারবার তাগাদা দিলেও সামিটের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রতিবারই পিছু হটতে হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জমি উদ্ধারে গিয়েও ফিরে আসতে হয়।
তবে বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারি জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আলমগীর। তিনি বলেন, ‘শুনেছি বিমানবন্দরের বেশ কিছু জায়গা বেদখল রয়েছে। সেগুলো উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার হরিণপালা গ্রাম থেকে নিষিদ্ধ ও ভেজাল ২ হাজার কেজি কীটনাশক জব্দ করে ধ্বংস করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় কীটনাশকের মালিককে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকালে এ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানান পিরোজপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক দেবাশীষ রায়।
তিনি জানান, কৃষি কাজের জন্য নিষিদ্ধ ও ভেজাল ২ হাজার কেজি ডায়াজনিন ও বাসুডিন মজুদ করে বিক্রি করছিলেন আল মদিনা এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মো. আব্দুস সালাম। সালামের গোডাউন থেকে কীটনাশকগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
তিনি আরও জানান, ফসলের জন্য ক্ষতিকর এ কীটনাশকগুলো অনেক আগেই সরকার নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও কীটনাশকগুলো ভেজাল ছিল যা ক্রয় করে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছিল।
ভেজাল কীটনাশকগুলো যশোরের অভয়নগর থেকে সংগ্রহ করেছিল বলে জানান আব্দুস সালাম।
বর্তমান বাস্তবতার আলোকে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন 'সড়ক নিরাপত্তা আইন' প্রণয়ণের দাবি জানিয়েছে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছেন হেলথ সিস্টেম রিসার্চ ডিভিশন এন্ড আরটিআই প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক সেলিম মাহমুদ চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সেলিম মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত ডিকেড অব একশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ এ উল্লেখিত বিষয়সমূহ বিশেষ করে সেফ সিস্টেম এপ্রোচ অন্তর্ভুক্ত করার আলোকে নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ণ করতে হবে।
তিনি জানান, এই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সড়ক ব্যবহারকারীদের জীবনের নিরাপত্তা; রোডক্র্যাশ জনিত মানুষের মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার হ্রাস; টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৬ ও ১১.২ অর্জন ও রোডক্র্যাশ হ্রাসের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন ও পরিবেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশের প্রচলিত সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ এ বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান আইনটিতে মূলত পরিবহন ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এতে প্রচলিত সড়ক ব্যবহারকারীর আচরণগত ঝুঁকিসমূহ যেমনঃ বেপরোয়া গতি, হেলমেট ব্যবহার না করা, মদ্যপ বা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় গাড়ী চালানো, সীটবেল্ট বা চাইল্ড রেস্ট্রিয়েন্ট ব্যবহার না করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
প্রচলিত আইনে জাতিসংঘ ঘোষিত ডিকেড অব একশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ এ উল্লেখিত মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট বা বহুমুখি পরিবহন ব্যবস্থা ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং রোডক্র্যাশ পরবর্তী সাড়া প্রদান ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান তিনি।
এ ছাড়াও বর্তমান আইনে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ব্যবহারকারী যেমন: পথচারী, সাইক্লিস্ট, শিশু এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। যথাযথ মানদন্ড অনুসরণ করে রোড ক্র্যাশের তদন্ত করা এবং রেকর্ড সংরক্ষণ করার বিষয়ে বর্তমান আইনি কাঠামোতে কোন বিধান রাখা হয়নি বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা একটি মন্ত্রণালয় কিংবা একটি দপ্তরের একার কাজ নয়। এতে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণ যেমন দরকার তেমনি প্রয়োজন লীড এজেন্সী নির্ধারণ করা, যা আইনী কাঠামোর দ্বারা স্বীকৃত হতে হবে। বর্তমান আইনি কাঠামোতে সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোন লীড এজেন্সি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, শুধু আইন করলেই হবে না, আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসকল আইন আছে তার কিছুটাও যদি বাস্তবায়ন হতো তাহলেও কিছুটা উন্নতি হতো। সড়কে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘ যে মডেল দিয়েছে তার আলোকে আমরা নতুন 'সড়ক নিরাপত্তা আইন' প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইপিআরবি এর রোড সেফটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কাজী বোরহান উদ্দিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান, ব্র্যাক সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম খালিদ মাহমুদ, স্টেপস্ টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ ওয়ালী নোমান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ শরাফত-ই-আলম, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমানসহ কোয়ালিশনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।