বরই চাষে ভাগ্য ফেরানোর গল্প

  • রাজবাড়ী থেকে বাগান ঘুরে এসে, মো. আকরাম হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বড়ই চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

বড়ই চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

কৃষি আবাদ ছেড়ে ভাগ্য ফেরাতে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন কাসেম। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি তার। নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে বছর দুয়েক পর তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়। দেশে এসে আবারও নিজের আগের পেশায় নিয়োজিত হন। এভাবেই কেটে যায় বছর ছয়েক। তবে সম্প্রতি বরই চাষের দিকে ঝুঁকেছেন তিনি। এ বছরই ১২০ শতাংশ জমিতে বাগান করে প্রায় তিন লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা করছেন।

রাজবাড়ী জেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের লহ্মীপুর গ্রামের কাসেম গত বর্ষা মৌসুমে ১২০ শতাংশ জমিতে বরইয়ের চারা রোপণ করেন। নিয়মিত পরিচর্যা আর যত্নে মাস ছয়েকের মধ্যেই বরই গাছে ফুল আসে। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপেল কুল, বাউকুল, নারকেল কুল ও কাশ্মীরি আপেল কুল এই চার জাতের বরই শোভা পাচ্ছে তার বাগানে।

বিজ্ঞাপন
গাছগুলোতে বরই ধরে আছে

কাসেম বার্তা২৪.কম-কে জানান, সাধারণত এত অল্প সময়ের মধ্যে গাছে বরই আসে না। তারপরও আমার বাগানে ভালো বরই ধরেছে।

বাজারে এই সব বরইয়ের চাহিদাও বেশ ভালো। স্থানীয় খুচরা বাজারে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বাজারে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের উৎপাদিত এসব বরই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাউকুল চাষ

তিনি আরও জানান, ১২০ শতাংশ জমিতে চাষ করা বরইয়ের বাগান থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকার বেশি বরই বিক্রি হয়েছে। বাগানে আরও বরই রয়েছে। ধারণা করছি লাখ তিনেকের মত বরই বিক্রি করতে পারব। বাগানের বয়স এখনো এক বছর হয়নি, তারপরও যে বরই ধরছে আগামী বছর এর থেকে আরও বেশি ধরবে বলে ধারণা করছি।

বরইয়ের জাতের ভিন্নতার কারণে পাকতে ১২ থেকে ১৫ দিনের হেরফের হয়ে থাকে। বাউকুল আর কাশ্মীরি কুলের চেয়ে আপেল কুল ও নারকেল কুল আগে পাকে। যার ফলে বাগানে এখন আপেল ও নারকেল কুল নেই। তবে বাউ ও কাশ্মীরি কুল এখনো আছে।

রাতে বরই খেতে বাদুর ও অন্যান্য পাখি আসে, যার জন্য বাগানের চারপাশ উঁচু করে জাল টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাঠ চরে-বেড়ানো গরু ও ছাগল যাতে বাগানে প্রবেশ করে ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য বাগানের চারপাশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। গাছে নিয়মিত পানি দেওয়ার জন্য বাগানের বিভিন্ন জায়গায় মাটি খুঁড়ে গর্ত করা হয়েছে। সেচ মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে এসব গর্ত ভরা হয়। তারপর এখান থেকে পানি নিয়ে গাছের গোঁড়ায় দেওয়া হয়।

বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ

জানা যায়, বাগান বরই শূন্য হওয়ার পর গাছের ডালপালা কেটে ফেলা হবে। তখন জমিতে অন্যান্য ফসল চাষ করা যাবে। বৃষ্টির পর মূল গাছ থেকে নতুন করে ডালপালা গজিয়ে পুনরায় বাগান ছেয়ে যাবে। এভাবে বছরের পর বছর ধরে একই বাগানে ফল ধরতে থাকবে।

শুধু কাসেম নয়। এ এলাকার অনেক কৃষক এখন লাভবান হচ্ছেন বরই চাষে। বরই চাষ লাভজনক হওয়ায় এলাকার অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কয়েকজন কৃষক জানান এবার বর্ষা মৌসুমে তারা নতুন করে বরইয়ের বাগান করবেন। বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষে ঝুঁকছেন এ এলাকার কৃষকরা।