সঙ্গরোধে থাকবেন যেভাবে

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাসের প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। এ মহামারি ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি কয়েকটি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। কিন্তু থামছে না বিপর্যয়, প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। আক্রান্ত থামাতে পুরো বিশ্ব একটি নিয়মই মেনে চলার চেষ্টা করছে, সেটি হলো সঙ্গরোধ বা হোম কোয়ারেন্টাইন।

তবে সঙ্গরোধে থাকার পরও বেড়ে চলেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর প্রধানকারণ সঠিকভাবে সঙ্গরোধে থাকার নিয়মাবলী না জানার কারণে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতর সঙ্গরোধে থাকার বিষয়ে কিছু নিয়মাবলী মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

যা মেনে চলবেন: 

বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন। সম্ভব না হলে, অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকুন। ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করুন।

আলো বাতাসের সুব্যবস্থা সম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকুন এবং অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন। যদি সম্ভব হয় তাহলে আলাদা গোসলখানা এবং টয়লেট ব্যবহার করুন। সম্ভব না হলে, অন্যদের সাথে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমান ও ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করুন।

বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।

আপনার সাথে কোন পশুপাখি রাখবেন না।

বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক পরে থাকাকালীন এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকুন। মাস্ক ব্যবহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে আসলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলুন।

টিস্যু পেপার ও মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন। ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।

আপনার খাওয়ার বাসনপত্র- থালা, গ্লাস, কাপ ইত্যাদি, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার সঙ্গরোধ (কোয়ারেন্টাইন) শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মতে একজন হতে অন্যজনের সঙ্গরোধের (কোয়ারেন্টাইন) সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন।

সঙ্গরোধ থাকাকালীন (কোয়ারেন্টাইন) সকলের সাথে মোবাইল ও ইন্টারনেটের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন।

শিশুকে তার মতো করেন বোঝান। তাদের পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী দিন এবং খেলনাগুলো খেলার পর জীবাণুমুক্ত করুন।

আপনার দৈনন্দিন রুটিন যেমন, খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি মেনে চলুন। সম্ভব হলে বাসা থেকে অফিসের কাজ করুন।

বইপড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা উপযুক্ত নিয়মগুলোর সাথে পরিপন্থী নয় এমন যেকোনো বিনোদনমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন বা ব্যস্ত রাখুন।

পরিবারের সদস্য যারা সুস্থ আছেন এবং যাদের দীর্ঘমেয়াদী রোগসমূহ (যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, অ্যাজমা প্রভৃতি) নেই এমন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তিনি ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন, অবস্থান বদল করবেন না।

সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইন) আছেন এমন ব্যক্তির সাথে কোনো অতিথিকে দেখা করতে দিবেন না।

পরিচর্যাকারী খালি হাতে ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না। সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইন) থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে, বাতাস ঘরে ঢুকলে, খাবার তৈরির আগে ও পরে, খাবার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে, গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে, হাত অপরিষ্কার মনে হলে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইন) থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ঐ রুমে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখুন। এসব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন।

ঘরের মেঝে, আসবাবপত্রের সকল পৃষ্ঠতল, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করুন। পরিষ্কারের জন্য ১ লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম (২ টেবিল চামচ পরিমাণ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করুন। ঐ দ্রবণ দিয়ে উক্ত সকল স্থান ভালোভাবে মুছে ফেলুন। তৈরিকৃত দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।

সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইন) থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহৃত কাপড় গুড়া সাবান/ কাপড় কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলুন এবং ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলুন।

নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখুন। মল-মূত্র বা নোংরা হওয়া কাপড় ঝাঁকাবেন না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে তা খেয়াল করুন।

সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইন) থাকার সময় কোনো উপসর্গ দেখা দিলে (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি), অতি দ্রুত আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বরে অবশ্যই যোগাযোগ করুন এবং পরবর্তী করণীয় জেনে নিন।