চেয়ারের চাকা ঘুরলেই চলে শুক্কুরের সংসার
চট্টগ্রাম থেকে: হুইল চেয়ারে ঘুরে বেড়ান বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অলিতে-গলিতে। বিক্রি করেন পান-সিগারেট-চিপস। এভাবেই স্ত্রী-সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দেয়ার যুদ্ধে নেমেছেন প্রতিবন্ধী শুক্কুর মিয়া।
পায়ে হেঁটে কিছু করতে পারেন না, পারেন না দাঁড়াতে, তাতে কী হয়েছে, দুই হাততো আছে। হুইল চেয়ারেই খুলে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ পানের দোকান। শুক্কুরের ইচ্ছেশক্তি দেখে রীতিমত হতবাক হবে যে কেউ।
চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান মোড়ে দেখা হয় প্রতিবন্ধী শুক্কুর মিয়ার সঙ্গে। তার বর্তমান বাড়ি নগরীর চকবাজারের দেবপাহাড় এলাকায়।
জানতে চাইলে শুক্কুর মিয়া বার্তা ২৪.কম-কে বলেন, জন্মের কিছুদিন পর থেকে জ্বর ছিল। তারও কিছুদিন পরে গিয়ে পা অবশ হতো। যখন আমি বুঝতে পারি, ঠিক তখনই ধরা পড়ে প্যারালাইসিস। এরপরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। ভাইয়েরা আমাকে দেখতো। কিন্তু দিন যত গেছে ততই আমি অর্থ সংকটে পড়েছি। তাই সরকার থেকে পাওয়া এ হুইল চেয়ারেই দোকান খুলেছি।
শুক্কুর আরও বলেন, এর আগেও আমার একটা দোকান ছিল। কিন্তু লোকসানের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। হুইল চেয়ারে বসে নগরীর, চকবাজার, জামালখান, কাজির দেউড়িসহ কয়েকটি এলাকায় যাই। পান-সিগারেট বিক্রি করি।
পরিবারে কে কে আছে জানতে চাইলে শুক্কুর বলেন, এক ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। বড় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও মেঝোটা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের খরচটা আমার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আর্থিক সহযোগিতা পেলে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আমার স্বল্প পুঁজিতে প্রতিদিন ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এ নিয়ে আসলে তেমন কিছু হয় না। যদি কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়ায়, তাহলে আমি ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। সবার কাছে আমি সহযোগিতা কামনা করছি।
শুক্কুরের ভ্রাম্যমাণ দোকানে আসা রিকশাচালক সেলিম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, প্রতিদিনই তাকে দেখি। অনেক মায়া হয়। কোন কিছু বাইরে থেকে পেলেও তার দোকানে থাকলে তার থেকেই কিনি। আমাদের হাত-পা আছে বলে রিকশা চালাচ্ছি। আর তার নেই বলে তাকে এতো কষ্ট করে চলতে হচ্ছে।
শ্রমিক রহিম উদ্দিন বলেন, হুইল চেয়ারে বসা অনেক মানুষ দেখেছি। কিন্তু তার মত ব্যবসা করছে এ রকম দেখিনি। আসলে ইচ্ছা শক্তি এবং পরিবারের প্রতি মায়া থেকে হয়তো সে এ ব্যবসা খুলেছে।