করোনাভাইরাস: বয়স্কদের মৃত্যু হার বেশি

  করোনা ভাইরাস
  • ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

 প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্ত দেশের সংখ্যাও। এখন পর্যন্ত চীনসহ ৮৯টি দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা গেছে। এসব দেশে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের অধিকাংশের বয়সই ৬০ এর অধিক।

আইইডিসিআরে রয়েছে পর্যাপ্ত কীট: এখন পর্যন্ত আইইডিসিআরে'র কাছে ২ হাজারের বেশি কীট। রয়েছে। কীটের তুলনায় এখন পর্যন্ত অনেক কম পরীক্ষা করা হয়েছে। কীট আনার প্রক্রিয়াটি চলমান থাকবে। কীট শেষ হওয়ার আগেই আবার কীট আসবে, সে পদ্ধতি চালু রয়েছে। ভাইরাস থেকে প্রতিদিন কীট তৈরি করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান এবং ইটালির সার্বিক পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশে অবস্থানরত কোন বাংলাদেশীর করোনায় আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ইতালিতে একজন, আরব আমিরাতে একজন, সিঙ্গাপুরে ৫ জন বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে সিঙ্গাপুরের তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন, একজনের অবস্থা স্ট্যাবল ও একজন এখনও গুরুতর অবস্থায় আইসিইউতে আছেন। আর ইতালিতে আক্রান্ত বাংলাদেশী হোম আইসোলেশনে আছেন।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ হাজার ৮৭৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত চীনসহ ৮৯টি দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে নতুন চারটি দেশ ভূটান, ক্যামেরুন, সার্বিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ৯৮ হাজার ১৯২ জন। আর মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৫৫ হাজারের বেশি রোগী।

আইইডিআরের কর্মকর্তারা জানান, করোনায় আক্রান্তের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টি নজরে এসেছে। ২০ বছরের নীচে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয়নি এবং এই বয়সীদের আক্রান্তের সংখ্যাও কম। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি ৬০ বছরের পর থেকে। সব দেশেই দেখা গেছে, বয়স যত বেড়েছে মৃত্যুর হারও বেড়েছে। যেসব দেশে মারা যাচ্ছে সেখানে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বয়সের যেমন সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি আগের রোগও বড় কারণ।

এ বিষয়ে আইইডিসিআর'র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনায় আক্রান্তের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বয়সের একটি বিষয়ও রয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষেরই বেশি মৃত্যু হচ্ছে। আর ২০ বছরের নীচে বয়স এমন কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকতে চাই। যেকোন সময় বাংলাদেশেও যাত্রীদের মাধ্যমে করোনার উপস্থিতি হতে পারে। আমরা আগে থেকেই বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি নিয়ে রেখেছি, যে এটি দ্রুত শনাক্ত করব। এই দ্রুত শনাক্তকরণে আমরা শুধুমাত্র যারা যাত্রী এসেছেন তা নয়, দেশের মধ্যেও কারো কোনো তথ্য পেলে আমরা দ্রুত তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইস্যুলেট করে ফেলতে পারব। করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ৩৩টি দেশে নিয়ে আমরা বেশি ভাবছি এবং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই করোনার মৃদু সংক্রমণ হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ইতালির মতো দেশেও কিন্তু বাড়িতে বসে চিকিৎসা হচ্ছে। বাড়িতে আইসোলেশন নিশ্চিত করা গেলে বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি: এখন পর্যন্ত ১১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের নমুনা গতকাল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে ১১১ জনের কারো মধ্যেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এছাড়া হটলাইনের মধ্যে ১৯৫টি কল এসেছে। এর মধ্যে ১৭৮টি করোনা সংক্রান্ত কল। যারা আক্রান্ত দেশে ভ্রমণ করে এসেছেন বা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে গেছেন তাদের মধ্যে রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে তাদের বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। এখনও তিনজন আইসোলেশনে আছেন। গত ২১ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত ৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে।

ইরান, ইতালি এবং ভারতের পরিস্থিতি: ইতালিতে মোট রোগী ৩ হাজার ৯১৬ জন, যার মধ্যে ১ হাজার ৬০ জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৭ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫২৩ জন। আর ইরানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫১৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৯১ জন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০৭ জন, যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই মারা গেছেন ১৫ জন। অন্যদিকে ভারতে ৩১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে দিল্লিতে ৩ জন, হরিয়ানাতে ১৪ জন (বিদেশী পর্যটক), কেরালাতে ৩ জন, রাজস্থানে দুইজন (বিদেশী পর্যটক), তেলাঙ্গানায় ১ জন এবং উত্তর প্রদেশের ৮ জন।

করোনার উপসর্গ দেখা দিলে করণীয়: যারা করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ভ্রমণ করে এসেছেন এবং যাদের মধ্যে ভাইরাসটির উপসর্গ দেখা দিয়েছে অর্থাৎ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং গলাব্যথা থাকলে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অথবা নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে আইইডিসিআরে না আসার জন্যও অনুরোধ দেয়া হয়েছে। কারণ সরাসরি আইইডিসিআরে আসার ক্ষেত্রে কোন গণপরিবহন ব্যবহার করলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে, তাই এ ক্ষত্রে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়। মৃদু অসুস্থ থাকলে বাড়ি থেকে হটলাইনে ফোন করার জন্য বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইইডিসিআরের টিম বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে। যদি কারো শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালে গেলেও সেখান থেকে আইইডিসিআর থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করা হবে। তবে বাড়িতে বসে থাকলে তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে না।

যেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে: নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। অপরিষ্কার হাতে চোখ-নাক স্পর্শ করা যাবে না। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। অসুস্থ পশু-পাখীর সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে। মাছ-মাংস-ডিম ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে। অসুস্থ হলে ঘরে থাকা উচিত। বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যকীয় হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আক্রান্ত দেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা, ভ্রমণ অত্যাবশ্যকীয় হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।