মজুরি কমিশনের স্লিপ না, টাকা চান পাটকল শ্রমিকরা
চলতি মাসের ১৬ জানুয়ারি নতুন মজুরি কমিশনের পে-স্লিপ দেওয়া হয় খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের। নতুন মজুরি কমিশনের পে-স্লিপ দেওয়ার প্রায় দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো টাকা পায়নি পাটকল শ্রমিকরা। মজুরির অভাবে এখন চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে খুলনা শিল্পাঞ্চলে।
শিল্পাঞ্চল ঘুরে জানা যায়, মজুুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা ২ দফায় আমরণ অনশন পালনের পরে পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করে। এরপর এ মাসের ১৬ জানুয়ারি শ্রমিকদের মাঝে নতুন মজুরি কমিশনের পে-স্লিপ দেওয়া হয়। তবে মজুরি স্লিপ দেওয়ার দু’সপ্তাহ পরেও স্থায়ী শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। মজুরি না পেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন পাটকলের শ্রমিক ও কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন মজুরি স্কেল অনুযায়ী ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মজুরি বেড়েছে শ্রমিকদের। মজুরি স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের পরে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে মজুরি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মজুরি কমিশন ঘোষণার আগে খুলনার ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ৯ হাজার ৩৯৭ জন স্থায়ী শ্রমিকের সাপ্তাহিক মজুরি ছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। নতুন মজুরি স্কেল অনুযায়ী যা বেড়ে এখন সাপ্তাহিক মজুরি ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। শ্রমিকদের প্রতি সপ্তাহে মজুরি বেড়েছে সোয়া তিন কোটি টাকা।
শ্রমিকরা জানান, সবশেষ গত ১৬ জানুয়ারি স্থায়ী শ্রমিকদের নতুন মজুরি স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী মজুরি স্লিপ দেওয়া হয়। কিন্তু মজুরির টাকা মেলেনি। পাটকল শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহের মজুরি বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সব মিলে মোট বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, শ্রমিকরা নতুন মজুরি স্কেলের স্লিপ হাতে পেয়েছে কিন্তু কেউই মজুরি পায়নি। শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। দরিদ্র শ্রমিকরা আর কতো কষ্ট করবে। তাদের মধ্যে একদিকে ক্ষোভ জন্মাচ্ছে, আরেকদিকে ক্ষুধা। ধার দেনা করে এতদিন কোনো রকমে চললেও আর তো সম্ভব হচ্ছে না। এতো আন্দোলন সংগ্রামের পরে দাবি পূরণের আশ্বাস ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হলেও কার্যত কোনো সুফল পাচ্ছে না শ্রমিকরা।
শ্রমিক নেত্রী শাহানা শারমিন বলেন, প্রায় ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া শ্রমিকদের। টাকা না পেয়ে আর্থিক সংকটে রয়েছেন শ্রমিক ও তাদের পরিবার। নতুন বছরে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সবকিছু থমকে আছে। নতুন মজুরি কমিশন অনুযায়ী শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দ্রুত প্রদানের দাবি জানান তিনি।
এদিকে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে পাটকলের অস্থায়ী বদলি শ্রমিকদের মাঝে। মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের সাথেই বিজেএমসির নির্দেশনা অনুযায়ী বদলি শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টি পাটকলে ২ হাজার ৫১২ জন বদলি শ্রমিক কমর্রত ছিলেন। কাজ বন্ধ করায় বেকার হয়ে পড়েছেন সবাই। বিপাকে পড়েছেন বদলি শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
প্লাটিনাম জুটমিলের বদলি শ্রমিক হোসেন আনোয়ার বলেন, প্রায় ১২ বছর ধরে বদলি শ্রমিক হিসেবে জুটমিলে কাজ করি। হঠাৎই মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের পরে আমাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছি। দিশেহারা হয়ে এখন চাকরি খুঁজছি অন্য কোনো পেশায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এমন বিপদে আগে কখনো পড়তে হয়নি।
এসব ব্যাপারে বিজেএমসি’র খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী বনিজ উদ্দিন মিঞা জানান, মিলের নিজস্ব ফান্ডে টাকা না থাকায় শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম, জেজেআই ও কার্পেটিং জুটমিলে ২৮ হাজার ৪৩৩ টন পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। এসব পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় ২২৭ কোটি টাকা। মজুদ পণ্য দ্রুত বিক্রি না হলে সরকারের ভর্তুকি ছাড়া এ অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য নেই পাটকলগুলোর।
তিনি আরও বলেন, বদলি শ্রমিকরা স্থায়ী শ্রমিকের অবর্তমানে মিলে কাজ করতেন। কিন্তু বর্তমানে মিলগুলোতে উৎপাদন কম থাকায় সম্প্রতি বিজেএমসি থেকে চিঠি দিয়ে বদলি শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী বদলি শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।