ক্যাপটিভের গ্যাস সরিয়ে নিতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শিল্পে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম কমানোর পক্ষে মত দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের বিশেষ কমিটি। ইউনিট প্রতি গড়ে ৬৭ পয়সা কমালেও রাজস্বে তারতম্য হবে না বলে মনে করছে শিল্প সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত বিদ্যুৎ বিভাগের ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা কমিটি।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাপটিভে (শিল্পকারখানার নিজস্ব ব্যবস্থায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ) সরবরাহকৃত গ্যাস থেকে ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করলে রাজস্ব অপরিবর্তিত থাকবে। ভোল্টেজ লেভেল ভেদে ২৩০ কেভিতে ৭.২৩ টাকা, ১৩২ কেভিতে ৭.২৮ টাকা, ৩৩ কেভিতে ৭.৩৮ টাকা ও ১১ কেভিতে ৭.৪৮ টাকা ট্যারিফ প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ফ্লাট রেটে ইউনিট প্রতি ৮.০৫ টাকা, অফ পিকে ৭.৩৪ টাকা ও পিক আওয়ারে ১০.১৯ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কমিটি শিল্প গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য মূল্য হ্রাসের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবারের তাগিদ দিয়েছে। এ জন্য সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিকে ডুয়েল সোর্সের ব্যবস্থা করা জরুরি। যারা হ্রাসকৃত ট্যারিফে বিদ্যুৎ নেবেন তাদের ক্যাপটিভ প্ল্যান্টে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা, ভবিষ্যতে আর ক্যাপটিভ প্ল্যান্টে গ্যাস সরবরাহ না করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে গ্যাস সরবরাহ উন্মুক্ত থাকলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলস পড়ে থাকবে। একই সঙ্গে শিল্প মালিকদের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন জাতীয়ভাবে আর্থিক অপচয় হবে।

প্রতিবেদনে সারাদেশে ৬৫টি শিল্প হাব চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্যাপটিভ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল তাদের এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, বর্তমানে গ্যাস ভিত্তিক প্রায় ২৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। যাতে ব্যবহৃত গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৫০০ এমএমসিএফডি। কেইস স্টাডিতে দেখা গেছে ক্যাপটিভে ব্যবহৃত ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস স্থানান্তর করলে উৎপাদন ব্যয় ৬৭ পয়সা কমানো সম্ভব। বিদ্যুতের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য শিল্পে বিদ্যুতের মূল্য তুলনামূলক বেশি রাখা হয় (গড় দর ৮ টাকা)। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।

ক্যাপটিভ সংক্রান্ত বৈঠকে জ্বালানি বিভাগের সচিব বলেছেন, ‘ক্যাপটিভ ও কমার্শিয়াল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। যতদিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত না হবে ততদিন ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু রাখতে হবে। তবে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে গ্যাসের অপচয় বেশি হচ্ছে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে এক সভায় বলা হয়, মাস্টার প্ল্যানে ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পরিকল্পনায় বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এখন যদি শিল্পাঞ্চলে ক্যাপটিভ পাওয়ারকে উৎসাহিত করা হয় বিদ্যুৎ বিভাগের উৎপাদিত বিদ্যুৎ অব্যবহৃত থেকে যাবে। ফলে সরকারের বিশাল আর্থিক ক্ষতি হবে।

পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল গড়ার তাগিদ দিয়ে নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রায় ১৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম বাংলাদেশ। ২৫০০ মেগাওয়াট রয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার। শীতকালের কারণে দিনে চাহিদা সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। যে কারণে বেশিরভাগ সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে বন্ধ। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ ঠিকই দিতে হয়। এ কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার।

অনেকদিন ধরেই শীত মৌসুমে বিদ্যুৎ রফতানির কথা বলে আসছে। পাশাপাশি ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বন্ধ করে দেওয়ার আলোচনাও চলছে বেশ জোরেশোরে। নতুন ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের অনুমোদন ২০১৫ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্ত অনেকটা কাগজে সীমাবদ্ধ। ব্যয় কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্যাপটিভে ঝুঁকে আছেন। পেছনের দরজা দিয়ে অনেকে অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছেন ঠিকই।