দেশপ্রেমিক ছিলেন সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর স্মরণসভা

সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর স্মরণসভা

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী ছিলেন দেশপ্রেমিক। বাংলাদেশে এটি বিরল বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ড. মুহিত বলেন, অনেকের এ থেকেও দেশপ্রেম হবে না। আমার মনে হয় তাদের দেশ থেকে একটি জাহাজে করে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেই। আমরা যারা মানুষের জন্য কাজ করি, তাদের মূলমন্ত্র হলো দেশপ্রেম।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর স্মরণসভায় এসব কথা বলেন ড. আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেন, সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী স্কুল জীবনে আমাদের বাড়িতে থাকতেন। তিনি ’৬৮ সালে চাকরি পান। সেই সময় ওয়াশিংটনে তিনি আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। মুয়াজ্জেম যখনই ঢাকায় আসতেন সবসময় আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতেন।

ড. মোমেন বলেন, তার মৃত্যুর আগে এই প্রথম তিনি বাসায় আসেননি। তার অসুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতালে তার সঙ্গে ৪০ মিনিট গল্প করি। আমি আশা করেছিলাম তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার ব্যবহারের মধ্যে হিউমার সবসময় উপস্থিত ছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বীকৃতি পেতে সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর অবদান ছিল। ওয়াশিংটনে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুয়াজ্জেম আলীর সঙ্গে সম্পর্ক সুগাঢ় হয়েছিল। এটি আমার স্মৃতিতে খুবই উজ্জ্বল, সেই সময় তার সান্নিধ্যে ভালো কেটেছে। আমরা যখন সবাই মিলে একটি অসভ্য সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ালাম তখন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা স্বাধীন হলাম, এ স্বাধীনতায় তার অবদান ছিল।

স্মরণসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালনে সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যেকোন পরিস্থিতিতে তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন। মন্ত্রী হওয়ায় প্রথম ফোনটা পেয়েছিলাম মুয়াজ্জেম ভাইয়ের কাছ থেকে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী এমন ব্যক্তি যার সঙ্গে প্রথম দেখায় মনে হয়েছে অনেক দিনের সম্পর্ক। এক সময় আমি ও স্যার একই বিল্ডিংয়ে থাকতাম। তার কাছে আমি নিজেই অনেক কিছু শিখেছি।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার যে ভূমিকা তা অবিস্মরণীয়। সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর আরেকটি বড় কৃতিত্ব— ১৯৯৯ সালে তিনি যখন ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেই সময় ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

স্মরণসভায় সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করার  আহ্বান জানান সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানে সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর ছেলে নওশের আলী বক্তব্য রাখেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএসসি পাস করেন। স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন এই কূটনীতিক।