সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী ছিলেন দেশপ্রেমিক। বাংলাদেশে এটি বিরল বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
ড. মুহিত বলেন, অনেকের এ থেকেও দেশপ্রেম হবে না। আমার মনে হয় তাদের দেশ থেকে একটি জাহাজে করে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেই। আমরা যারা মানুষের জন্য কাজ করি, তাদের মূলমন্ত্র হলো দেশপ্রেম।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর স্মরণসভায় এসব কথা বলেন ড. আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেন, সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী স্কুল জীবনে আমাদের বাড়িতে থাকতেন। তিনি ’৬৮ সালে চাকরি পান। সেই সময় ওয়াশিংটনে তিনি আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। মুয়াজ্জেম যখনই ঢাকায় আসতেন সবসময় আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতেন।
ড. মোমেন বলেন, তার মৃত্যুর আগে এই প্রথম তিনি বাসায় আসেননি। তার অসুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতালে তার সঙ্গে ৪০ মিনিট গল্প করি। আমি আশা করেছিলাম তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার ব্যবহারের মধ্যে হিউমার সবসময় উপস্থিত ছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বীকৃতি পেতে সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর অবদান ছিল। ওয়াশিংটনে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুয়াজ্জেম আলীর সঙ্গে সম্পর্ক সুগাঢ় হয়েছিল। এটি আমার স্মৃতিতে খুবই উজ্জ্বল, সেই সময় তার সান্নিধ্যে ভালো কেটেছে। আমরা যখন সবাই মিলে একটি অসভ্য সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ালাম তখন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা স্বাধীন হলাম, এ স্বাধীনতায় তার অবদান ছিল।
স্মরণসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালনে সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোন পরিস্থিতিতে তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন। মন্ত্রী হওয়ায় প্রথম ফোনটা পেয়েছিলাম মুয়াজ্জেম ভাইয়ের কাছ থেকে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী এমন ব্যক্তি যার সঙ্গে প্রথম দেখায় মনে হয়েছে অনেক দিনের সম্পর্ক। এক সময় আমি ও স্যার একই বিল্ডিংয়ে থাকতাম। তার কাছে আমি নিজেই অনেক কিছু শিখেছি।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার যে ভূমিকা তা অবিস্মরণীয়। সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর আরেকটি বড় কৃতিত্ব— ১৯৯৯ সালে তিনি যখন ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেই সময় ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
স্মরণসভায় সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করার আহ্বান জানান সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানে সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীর ছেলে নওশের আলী বক্তব্য রাখেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএসসি পাস করেন। স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন এই কূটনীতিক।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের ঘোষণার খবরে ফেনীতে তৎক্ষানক আনন্দ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) ১১ টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে শহরের ট্রাংক রোডে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা উল্লাস করেন এবং আনন্দ মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের 'ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না'এই মুহূর্তে খবর এলো, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হলো', 'এ মুহূর্তে খবর এলো, সন্ত্রাসী লীগ নিষিদ্ধ হলো', , 'ছাত্রলীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও', 'হৈ হৈ রৈ রৈ, সন্ত্রাস লীগ গেলি কই'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। এসময় একে অপরকে মিষ্টি মুখ করান শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা।
মিছিল শেষে খেজুর চত্ত্বরে সমাবেশে মিলিত হয় শিক্ষার্থীরা। এতে বক্তব্য রাখেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল জুবায়ের, জামাল উদ্দিন ও সানী মজুমদার। এসময় সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিমসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা অংশ নেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর অন্যতম প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, ছাত্রলীগ গত ১৬ বছর ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এবারের আন্দোলনেও ফেনীতে তারা ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে হামলা ও গুলি চালিয়ে আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ তাদের দোসরদের নিষিদ্ধ করা হবেনা আমার ভাইদের রক্তের দাগ মুছবেনা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর অন্যতম প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন বলেন, মুজিববাদী সংগঠনকে এ বাংলায় জায়গা দেয়া হবেনা। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করায় বাংলার মানুষ খুশি হয়েছে, পরবর্তী আওয়ামী লীগ ও যুবলীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। এসময় তিনি রাষ্ট্রপতিকে অপসারণসহ সংবিধান বাতিল করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি আজ সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। তার আগেই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল সরকার।
সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করেছে ছাত্রলীগ।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারন সম্পাদক ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে এই প্রত্যাখান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনেও যৌক্তিক সংস্কার ও সমাধানের জন্য ছাত্রলীগ ছাত্রলীগ ভূমিকা রেখেছে।
এছাড়া, অবৈধ, অসাংবিধানিক ও দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে সদ্য নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠনটি।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে তিনি এই নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের ওপর আঘাত করেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ সরকার। এই সরকারের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। তাহলে দেশ স্বাধীনের আগে ও পরে মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ছাত্রলীগের মতো সংগঠনকে কীভাবে নিষিদ্ধ করল?
অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ছাত্রলীগ নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ এ মাটির সংগঠন এবং আগামী দিনেও থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফজলে রাব্বি (৩৫) মারা গেছেন। তিনি দুই দিন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বুধবার(২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পৌর শহরের ইমামবাড়ী এলাকায় নিজ বাড়িতে আসার পর উনার মৃত্যু হয়। তিনি কাজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কান্দিপাড়া শাখার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
জানা যায়, গত সোমবার সকালে গফরগাঁও থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার পথে নগরীর শেষ মোড় এলাকায় সিএনজির সাথে বালু ভর্তি ড্রামট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় এতে সাদিয়া আক্তার (২৫) নামে এক গর্ভবতী নারী ঘটনাস্থলে মারা যান ও শিক্ষক ফজলে রাব্বিসহ ৫ জন যাত্রী গুরুতর আহত হয় ।
স্থানীয়রা গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে । ফজলে রাব্বি দুই দিন চিকিৎসা শেষে বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে বাড়িতে আসার পর সন্ধ্যায় মারা যান। নিহতের পিতা নাজিম উদ্দীন মাষ্টার ঘটনাটি নিশ্চিত করে।
নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কান্দিপাড়া শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান দিদার শোক প্রকাশ করেছেন।