তাপসের বার্ষিক আয় ১০ কোটি টাকা, ইশরাকের ৯১ লাখ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

(বাঁ দিক থেকে) তাপস ও ইশরাক

(বাঁ দিক থেকে) তাপস ও ইশরাক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিস) নির্বাচনে হেভিওয়েট দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত শেখ ফজলে নূর তাপসের বার্ষিক আয় ৯ কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬ টাকা। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বার্ষিক আয় ৯১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৯ টাকা।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস পেশায় আইনজীবী বার-এট-ল (ব্যারিস্টার) ডিগ্রিধারী তাপসের কৃষি খাত থেকে বছরে আয় ৩৫ হাজার টাকা, বাড়ি/দোকান ভাড়া বাবদ ৪২ লাখ ৫০ হাজার ৩৯৮ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৮ টাকা, আইন পেশা থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার এবং চাকরি থেকে বেতন বাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এছাড়া তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় হিসেবে কৃষিখাতে ২২ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়ি ভাড়ায় ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮২ টাকা, ব্যবসায় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮৮ টাকা ও আমানত ৪৪ লাখ ১৯ হাজার ১২২ টাকা কথাও উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।

ঢাকা-১০ আসন থেকে পদত্যাগ করে মেয়র পদের এই প্রার্থী অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে নগদ ২৬ কোটি তিন লাখ তিন হাজার ৫৫৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৯৭ লাখ ২০৬ টাকা দেখিয়েছেন।

এছাড়া তার নিজের নামে ৩ হাজার ৭৫০ ইউএস ডলার ও স্ত্রীর নামে ৮ হাজার ৭০০ ইউএস ডলার বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

তাপসের নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকা রয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার ২০৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৩১ হাজার ২৩৫ টাকা। নিজের নামমে বন্ড এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা রয়েছে। নিজের নামে সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৩৫ কোটি ২২ লাখ টাকার এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মতো।

নিজের ও স্ত্রীর ৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের গাড়ি, দুজনের দেড় কোটি টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার, ১০ লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী ও ১৭ লাখ টাকার আসবাবপত্র থাকার কথাও হলফনামায় জানিয়েছেন তাপস।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে তাপস নিজের নামে সাড়ে ১০ কাঠা ও স্ত্রীর নামে ১১২ শতাংশ জমি। নিজের নামে ১০ কাঠা অকৃষি জমি ও স্ত্রীর নামে ১০ কাঠা অকৃষি জমি দেখিয়েছেন।

এছাড়াও তার নিজের নামে ৮ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ টাকার মূল্যমানের আবাসিক/বাণিজ্যিক দালান রয়েছে তিনটি। আর স্ত্রী এবং নিজের নামে পৌনে চার কোটি টাকা মূল্যের তিনটি বাড়ি/ অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাপসের।

৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা দায়-দেনা রয়েছে, যা তিনি বাড়ি ভাড়া অগ্রিম হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

২০০২ ও ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হলেও খারিজ হয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে, অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র সদ্য প্রয়াত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন বিএনপি প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং)।

পেশা হিসেবে ব্যবসাকে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে (৪) একটি দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন। এমএসসি ডিগ্রিধারী ইশরাক চারটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।

ডাইনামিক স্টিল কমপ্লেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার তিনি। তার আয়ের উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লভ্যাংশ ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৯ টাকা, চাকরি থেকে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ টাকা ও ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ২৪ টাকা। ইশরাকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৮ লাখ ২ হাজার ৭২ টাকা এবং স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৫২৪ টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নগদ ৩৩ হাজার ১০৯ টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ার বাবদ ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৩ টাকা। তার দায়দেনার পরিমাণ ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৩ টাকা। এর মধ্যে মা ইসমত আরার কাছ থেকে ৬১ লাখ ৩৭ হাজার ২২২ টাকা তিনি নিয়েছেন। বাকি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে দাবি করেছেন। পেশা হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। বছরে তার আয় ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বেশি। আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন বাড়ি ভাড়া, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ভাড়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তার রয়েছে নগদ ৫৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরিবহনে ১৭ লাখ টাকা এবং আসবাবপত্রে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও বীমায় রয়েছে ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৯ টাকা।

বিভিন্ন ব্যাংকে তার ৭৭ লাখ ৭ হাজার ৬০১ টাকার ঋণ রয়েছে। স্ত্রীর নামেও দুই কোটি টাকার ঋণ। তার নামে কোনো মামলা নেই।

ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুর রহমানও স্বশিক্ষিত। পেশা তার ব্যবসা। অতীতে দুটি মামলা থাকলেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বছরে আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ রয়েছে ৫৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২ টাকা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে আছে ৮৮২.৮৫ শতাংশ কৃষি জমি আর একটি চার তলা বাড়ি।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের মেয়র প্রার্থী আকতারুজ্জামান নিজেকে বিএ পাস হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক (আজকের দর্পণ-এর বার্তা সম্পাদক)। ২০১৫ সালেও ডিএসসিসি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন তিনি। সে সময় তিনি জামানতও হারিয়েছিলেন।

অস্থাবর সম্পদের হিসেবে নিজের এবং স্ত্রীর কাছে নগদ তিন লাখ টাকা আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া স্বর্ণালঙ্কার ১৫ ভরি, ১৫০ মার্কিন ডলার ও কিছু আসবাব রয়েছে তার। তবে বছরে কোনো আয় বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন আকতারুজ্জামান।

গণফ্রন্টের প্রার্থী আব্দুস সামাদ সুজন এইচএসসি পাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পেশায় সাংবাদিক (রাজনীতি ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক শিরোমনি)। তার বাৎসরিক আয় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা।

হলফনামায় নিজের এবং স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে তিন বিঘা জমি। আর এক কাঠা জমির উপর নির্মিত চার তলা ভবনের অর্ধেক তার নিজের নামে রয়েছে।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) প্রার্থী বাহরানে সুলতান বাহার। তিনিও স্বশিক্ষিত। বছরে তার আয় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের কাছে নগদ রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আর স্ত্রীর রয়েছে ৫ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার।

তার বিরুদ্ধে অতীতে ৫টি মামলা দায়ের হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, দু'টি মামলা বিচারাধীন।