রাজনীতি ও মশার কাছে পরাজিত এক ব্যর্থ মেয়র

  • লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাঈদ খোকন

সাঈদ খোকন

তার ছিল রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার। ছিল কাজ করার উপযুক্ত বয়স ও শক্তি। তবু তিনি পরাজিত হলেন। ছিটকে পড়লেন রাজধানীর রাজনীতির মঞ্চ থেকে।

জনগণ তাকে প্রত্যাখান করেছে, এই সত্য তিনি টের না পেলেও দল পেয়েছে। জনমত বুঝে দল তাকে মনোনয়ন দেননি। আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতি থেকেও তিনি দৃশ্যত বাদ পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য প্রত্যাশীদের পক্ষে কর্মীদের জোরালো স্লোগান উঠলেও তার পক্ষে স্লোগান উচ্চারিত হয়নি। তাকে যখন বাদ দেওয়া হলো, সামান্য শব্দও করেনি কেউ। যেন এই পতন সবার কাছে কাম্য ও স্বাভাবিক ছিল।

একজন তরুণ সাংবাদিক মন্তব্য করেছেন, 'মায়াকান্না আর অভিনয় দিয়ে আর যাই হোক সবার মন ভোলানো যায় না। ভালো থাকবেন ব্যর্থ মেয়র...।' সাংবাদিক জানিয়েছেন আরেকটি মর্মস্পর্শী তথ্য, 'আমার ঘরে দুই বোনসহ আত্মীয় স্বজন ও নগরবাসী যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যন্ত্রণায় ভুগছিল, তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই ব্যর্থ মেয়রকে হাসতে দেখেছি...।'

অথচ মশা শুধু তার কর্তৃত্বাধীন ঢাকার দক্ষিণ অংশেই আক্রমণ করেনি, উত্তরেও হামলে পড়েছিল। উত্তরের নেতারা মশাজনিত ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাসাধ্য উদ্যোগ নিয়ে মানুষের সুখে-দুঃখে সাথে ছিলেন। তার ক্ষেত্রে ছিল কথার ফুলঝুরি আর মিডিয়া শোডাউন। এসব করতে গিয়ে তিনি শুধু মশার কাছেই পরাজিত হন নি, জনগণের আস্থাও হারান। ফলে তিনি পরবর্তী নিবার্চনে মনোনয়ন যুদ্ধেই পরাজিত হয়ে গেছেন, ভোটের যুদ্ধ পর্যন্ত তিনি যেতেই পারলেন না।

ঢাকার মেয়র নির্বাচন যেভাবে পুত্রদের লড়াই-এ রূপ নিয়েছে বিএনপির পক্ষে দুই বড় নেতার পুত্রদের মনোনয়ন দেওয়ার মাধ্যমে, তাতে সাবেক মেয়র পুত্র হিসাবে তার একটি আবেদন ছিল। নিজেও সাবেক মেয়র হিসাবে প্রার্থিতার দাবিদার ছিলেন। কিন্তু সব কিছুই ভেস্তে গেলো নিজের কার্যক্রমের কারণে।

সন্দেহ নেই, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাকে বাদ দেওয়ার নির্মম সিদ্ধান্ত নিতে অনেক ভাবতে হয়েছে। যে কারণে প্রার্থী ঘোষণায় সময় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দল ও তৃণমূল থেকে তার পক্ষে পজেটিভ রেসপন্স না আসায় কঠিন সিদ্ধান্তটি নিতেই হয়েছে। জনমতের হৃৎস্পন্দন যথাযথভাবে অনুধাবনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ভুল করেনি মোটেও। বরং ভুল শুধরে সঠিক প্রার্থীই মনোনয়ন দিয়েছে শাসক দল।

বাংলাদেশকে রূপকল্প অনুযায়ী উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিতে একটি উন্নত রাজধানী অপরিহার্য। পুরনো ঢাকার মহল্লা সর্দারদের নেতৃত্বে গোত্রবাদী রাজনীতিও আজ আর ঢাকার জন্য মানানসই নয়। অগ্রসরমান বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় রাজধানী ঢাকার জন্য ভবিষ্যতমুখী নেতৃত্ব কাঠামোর বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ পরিবর্তমান এই পরিস্থিতি ও জনদাবির প্রতিই নিজেদেরকে অভিযোজিত করেছে এবং রাজনীতি ও মশার কাছে পরাজিত এক ব্যর্থ মেয়রের দায় নেয়নি।