সাঈদ খোকনের কপালে চিন্তার ভাঁজ!

  • রেজা-উদ্-দৌলাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ। বেশ কিছুদিন থেকেই নগরীর দেয়ালে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার দেখা যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে অলি-গলিতে পাওয়া যাচ্ছে সিটি নির্বাচনের উত্তাপ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন তা নিয়েই চলছে তুমুল আলোচনা।

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে শুরু থেকে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন দৌড়ে নাম আসছে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন ও আতিকুল ইসলামের। তবে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) এই আলোচনায় ঘি ঢেলে দিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও হাজী সেলিমের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ। আর এতে নিজেকে ‘সফল মেয়র’ দাবি করা সাঈদ খোকনের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ!

বিজ্ঞাপন

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিনেই দুই সিটির জন্য ৮ জন প্রার্থী ফরম সংগ্রহ করেছেন। উত্তরের প্রার্থী হিসেবে মেয়র আতিকুল ইসলাম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও দক্ষিণের প্রার্থী হিসেবে মেয়র সাঈদ খোকন এখনও ফরম সংগ্রহ করেননি। বরং তিনি আরো অপেক্ষা করতে চান।

হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়ন ফরম তুলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আমেজকে জমিয়ে তুলেছেন। বিশেষ করে দক্ষিণের মেয়র পদে পরিবর্তন প্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

অন্যদিকে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বঙ্গবন্ধু একাডেমির সভাপতি মো. নাজমুল হক, মু‌ক্তি‌যোদ্ধা সংস‌দের সা‌বেক মহাস‌চিব এমএ র‌শি‌দও মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মতে, দক্ষিণের মেয়র পদের জন্য শেখ ফজলে নূর তাপসের মনোনয়ন ফরম তোলাটা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। বলা হচ্ছে, দলীয় হাইকমাণ্ডের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েই তাপসের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই মনোনয়নের লড়াইয়ে তিনি হতে যাচ্ছেন মেয়র সাঈদ খোকনের বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। যেটা ইতোমধ্যেই সাঈদ খোকনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।

হেভিওয়েট এই প্রার্থীদের সঙ্গে মনোনয়নের লড়াইয়ে নামতে চাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সবসময় উৎসব মুখর পরিবেশে হয়ে থাকে। শক্তিশালী প্রার্থী নির্বাচনে এলে সেটি নির্বাচনের জন্যই ভালো। বিষয়টিকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখি।

দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়নের আশা পুনর্ব্যক্ত করে খোকন আরও জানান, শুক্রবার দুপুরে তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করেজানা যায়, উত্তরের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে আতিকুল ইসলামের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত হলেও দক্ষিণে কোনও কিছু এখনো নিশ্চিত নয়। এখানে পরিবর্তনের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তাই ফের নৌকার মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে দারুণ বেগ পেতে হবে সাঈদ খোকনকে। বিশেষ করে গেল কয়েক মাসে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সাঈদ খোকনের ব্যর্থতা ও অতিকথনের দরুণ ঢাকাবাসীর মনে একটা ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিধি ও গতি নিয়েও নগরবাসীর মনে অসন্তোষ আছে। গত পাঁচ বছরে মেয়র সাঈদ খোকনের ‘অপ্রয়োজনীয়’ বিদেশ গমন ও সিটি করপোরেশন পরিচালনার দক্ষতা নিয়েও একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু বার্তা২৪.কমকে বলেন, একজন নগরবাসী হিসেবে বলতে পারি যে, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে সারা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন, ঢাকায় যেভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়নি। বর্তমান মেয়র এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নৌকার মনোনয়ন ফরম বিতরণ চলবে। ধারণা করা হচ্ছে, আরো দুয়েকজন প্রার্থী দুই সিটির মনোনয়ন লড়াইয়ে নেমে নির্বাচনের আমেজকে জমিয়ে দিতে পারেন।

এদিকে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভার পর। আগামী ২৮ ডিসেম্বর গণভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সভা থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভাগ্য খুলবে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।

বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, যারাই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন তাদের মধ্য থেকে সৎ,পরিশ্রমী ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন এবং ঢাকা উত্তরে আনিসুল হক। দুজনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছিলেন। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হক মারা গেলে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদটি শূন্য হয়। এরপর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উত্তর সিটির উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র হন আতিকুল ইসলাম।