পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে টানা তিনদিন বৃষ্টির পর সূর্যের দেখা মিলেছে। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ৭টা ২০ মিনিটে পূর্ব আকাশে সূর্যের উজ্জ্বল কিরণ চারপাশ আলোকিত করে তোলে। এতে স্থানীয় জনজীবনে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব কাটিয়ে স্বস্তির বার্তা এনে দিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় দানা উপকূলে আঘাত না হানায় ফসলের তেমন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। ফলে, স্থানীয় কৃষকদের আতঙ্কও অনেকটা কেটে গেছে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার উত্তর ইটবাড়িয়া গ্রামের কৃষক শহীদ মৃর্ধা (৪৯) বলেন, তিনদিন ধরে কাজ করতে পারিনি। ফসলের অবস্থা দেখে খুব চিন্তিত ছিলাম। তবে আজকের সূর্যের আলো দেখে মনে হচ্ছে বিপদ কেটে গেছে। শ্রমিকরাও কাজে নেমে গেছে, আশা করি ফসলের ক্ষতি আর হবে না।
গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৫৩) বলেন, আজকের রোদে আমার জমির ফসল নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বন্যায় ধানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল, কিন্তু আজকের রোদে সেই চিন্তা দূর হয়েছে। আমরা দ্রুত ফসলের যত্ন নেওয়া শুরু করেছি।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা রাহাত হোসেন জানান, সকাল ৭টায় রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা ছিল ২৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭১.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে আজকের দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়া ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং কৃষির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানবে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তবে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপ ও চরসমূহের উপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি বর্ষণ হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানবে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তবে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপ ও চরসমূহের উপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি বর্ষণ হতে পারে।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার ১২ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরো উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলীয় এলাকায় (২০,৪° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।
এটি গতকাল মধ্যরাতে (২৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরো উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং আজ (২৫ অক্টোবর) সকালের মধ্যে নাগাদ পুরী ও সাগর দ্বীপ এর মাঝখান দিয়ে ভারতের উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় পড়বে জানিয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের উপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (≥ ৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
এসব কারণে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর (পুন:) ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
দানার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলের ১৪ জেলায় জোয়ারের পানি বেড়ে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে জানিয়ে আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বারিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবল বেগে ভারতের ওড়িশার উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যবর্তী স্থান হয়ে স্থলভাগ তছনছ করছে ঘূর্ণিঝড়টি। ইতিমধ্যে ঝড়ের সামনের অংশ পেরিয়ে মধ্যভাগ অতিক্রম শুরু করেছে। এই সময় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গতি রয়েছে ১২০ কিলোমিটার।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ছেড়ে আসার সময় পঞ্চগড়গামী আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (৭৯৩) লাইনচ্যুত হয়েছে। এ ঘটনায় ট্রেনের ৬টি বগি লাইন থেকে পড়ে যায়। ফলে বিভিন্ন স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা এই মধ্য রাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে আসার সময় রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে দুর্ঘটনায় পড়ে। যদিও শিডিউল অনুযায়ী ট্রেনটির ২৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টায় ছেড়ে আসার কথা ছিল। দুর্ঘটনার বিষয়ে মধ্যরাতে বাংলাদেশ রেলেওয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ট্রেনটি সাধারণ সময়ের প্রায় আধাঘণ্টা বিলম্বে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। প্লাটফর্ম পার হওয়ার ২ মিনিটের মধ্যে ঝাঁকুনি অনুভব হয় এবং ট্রেনটি থামানো হয়। পরে নেমে দেখা যায় ট্রেনের বিভিন্ন কোচের মোট ৬টির মতো বগি লাইনচ্যুত হয়। দেখা গেছে, লাইনের পাত ভেঙে গেছে। পরে চাকাগুলো নিচে পড়ে যায়। ট্রেনের গতি কম ছিল বলে কেউ আহত হননি।
সুনামগঞ্জের র্যাব-বিজিবি যৌথ অভিযানে সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্রসহ এক যুবককে আটক করা হয়েছে। আটক যুবক দোয়ারাবাজার উপজেলার মো. রুস্তম আলীর ছেলে মো. আব্দুল সিদ্দিক।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৯ টার দিকে দোয়ারাবাজার উপজেলার ইদোকোনা বাজার থেকে তাকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিবি ২৮ সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্ণেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির।
জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাগানবাড়ী বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত মেইন পিলার ১২২৮/এমপি হতে আনুমানিক ৭০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দোয়ারাবাজার উপজেলাধীন ৮নং বোগলাবাজার ইউনিয়নের ইদুকোনা বাজার নামক স্থানে বিজিবি ও র্যাব এর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে র্যাব-৯ সুনামগঞ্জ সিপিসি-৩ কোম্পানী কমান্ডার মেজর মো. ফয়সাল ও সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের নায়েব সুবেদার মো. আব্দুল সিদ্দিক নেতৃত্বে একটি রিভলবারসহ আসামি আব্দুল সিদ্দিককে আটক করা হয়। আটককৃত আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।