ডা. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অনুমোদন ছাড়া হাসপাতালের সম্পদ বিক্রি, জোরপূর্বক কক্ষ দখলসহ নানা রকম অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (অর্থপেডিক) ডাঃ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়েরকৃত অভিযোগে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগে এসব অপকর্মের সুষ্ঠু তদন্ত ও হাসপাতালের পরিবেশ রক্ষার আবেদন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ রয়েছে, ৮ বছর যাবত আবাসিক সার্জনের (অর্থপেডিক) পদে থাকলেও কখনই এই দায়িত্ব পালন করেন নি। অধিকাংশ সময়ে অনুপস্থিত থাকেন হাসপাতালে। বারবার তাগাদা দিলেও কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনাই মানছেন না এই ডাক্তার। হাসপাতালের নিয়মে নয়, চলছেন নিজের মন মর্জি অনুসারে।

বায়োমেডিকেল বিভাগ ঘোষণা করে নিজেকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে পরিচয় দেন। যদিও এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ বা চিঠি তার অনুকূলে কখনোই ইস্যু হয় নি। কক্ষ সংকটে সেবা ব্যাহত হলেও বায়োমেডিকেল বিভাগের নামে জোরপূর্বক ৪টি বড় বড় কক্ষ দখল করে রেখেছেন। আধুনিক সজ্জিত এসব কক্ষে বিধি বর্হিভূতভাবে ১০টি কম্পিউটার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব কক্ষে দিনে লোকজন তেমন না থাকলেও রাতে সরব হয়ে ওঠে। অনেক বহিরাগতের আনাগোনা দেখা যায়। তারা সারারাত অবস্থান করেন এসব কক্ষে। কক্ষগুলোতে মাদক সেবন ও নানা রকম অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। যার সঙ্গে নজরুল ইসলামের সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। রাতে এসব কক্ষের সামনে দিয়ে গেলে গাঁজার গন্ধে টেকা দায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বায়োমেডিকেল বিভাগের নামে দখল করা এসব কক্ষে হাসপাতালের কারো প্রবেশের অধিকার নেই। কেউ গেলে তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। একজন মহিলা স্টাফ রয়েছেন। শুধু তারই রয়েছে অবাধ যাতায়াত। এ নিয়ে নানা রকম কাঁনাঘুষাও রয়েছে।

তিনি একাধারে আরএস (অর্থপেডিক) ও বায়োমেডিকেল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পরবর্তীতে ম্যানেজার (রক্ষণাবেক্ষণ) পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন। ম্যানেজার পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি মর্যাদার হলেও প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও এই পদ আঁকড়ে ধরে ছিলেন দীর্ঘদিন।

অভিযোগ রয়েছে দলীয় ও নানা রকম প্রভাব দেখিয়ে রামরাজত্ব চালিয়ে আসছেন নজরুল ইসলাম। হাসপাতালে ডক্টরস কোয়ার্টারে প্রত্যেকটি বাসায় উপর-নিচে দু’জন করে ডাক্তার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু তিনি একাই একটি ভবন দখল করে রেখেছেন। বাসাটিতে অন্য ডাক্তারকে বরাদ্দ দিলেও তাদের উঠতে দেওয়া হয় নি। কর্তৃপক্ষ জোরালো ভূমিকা নিতে গেলেই হুমকি ধামকি শুরু করে দেন।

হাসপাতালে মালামাল কেনাকাটায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার এক বন্ধুর প্রতিষ্ঠান আমাস টেকনোলজির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার ও সিসি ক্যামেরা কেনাকাটা করেন। নিয়মানুযায়ী এসব মালামাল স্টোর কিপারের দায়িত্বে থাকার কথা। কিন্তু কখনই এসব মালামাল স্টোর কিপারকে হস্তান্তর করেন নি। বায়োমেডিক বিভাগের কক্ষে নিজের দখলে রাখতেন এবং বিতরণ করতেন।

এনআইসিভিডি’র একটি এনজিওপ্লাস্টি (রিং স্থাপন) মেশিনসহ বেশি কিছু মেশিন পরিত্যাক্ত অবস্থায় অর্থপেডিক বর্হিবিভাগে ছিল। কনডোমেশন না করে অত্যন্ত গোপনে পছন্দের লোকের কাছে নামমাত্র মূল্যে হস্তান্তর করেন মেশিনগুলো। এতে রাষ্ট্রের প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে দুদকে দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে।

ওই ঘটনাটি পরবর্তীতে পত্রিকায় চলে এলে ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ রওশন আনোয়ারকে। সেই কমিটির কোনো রিপোর্ট আলোর মুখ দেখতে পায় নি। স্বাচিপের নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে সেই দুর্নীতি ধামাচাপা দেন নজরুল ইসলাম।

বারবার তদন্ত কমিটি হলেও কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন নজরুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ। যারাই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তাদের পরিণতি হয়েছে মসিউর রহমানের মতো।

২০১০ সালে গোপনে পুরাতন টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি বিক্রি করে দেন। অথচ সামান্য খরচে সেই এক্সচেঞ্জটি মেরামত করা গেলে কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপনের প্রয়োজন পড়ত না। ওই সময়ে ম্যানেজার (রক্ষণাবেক্ষণ) ও টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ছিলেন মসিউর রহমান। তাকে আড়ালে রেখে সব কেনাকাটা হয়। পরে মসিউর রহমান বিলে স্বাক্ষর প্রদানে আপত্তি জানায়। এ কারণে তার উপর ক্ষেপে যান নজরুল গং। স্বাচিপের প্রভাব বিস্তার করে সৎ অফিসার খ্যাত মসিউর রহমানকে বিদায় করে ছাড়েন।

এক সময় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পাশ্ববর্তী এলাকা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। রাত হলেই ভুতুড়ে পরিবেশ নেমে আসত। অনেক গলাকাটা বেওয়ারিশ লাশ আবিষ্কার হয়েছে এই হাসপাতাল এলাকা। সে সব স্থানীয় সন্ত্রাসীরা এখন এলাকা ছাড়া। তাদের সঙ্গে নতুন করে সিন্ডিকেট গড়তে শুরু করেছেন। রাত হলেই বায়োমেডিক বিভাগে আনাগোনা বাড়ছে চিহ্নিত মাস্তানদের। এ কারণে হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও শিক্ষার্থীদের কপালে ভাঁজ বাড়ছে নতুন করে।

হাসপাতালের কক্ষ দখল প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, হাসপাতালের কক্ষ দখল করে রাখবো কিভাবে। ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখেন। রাতে বহিরাগতদের আনাগোনা প্রসঙ্গে বলেন, রাতে হাসপাতালের এসব বিভাগ বন্ধ থাকে, বহিরাগত আসবে কিভাবে। এসব আলতু-ফালতু কথা বলেন কিভাবে?

অতীতে উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অতীতেও ভুয়া অভিযোগ দিয়েছে। যে কারণে আমি তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। মন্ত্রণালয়ের লোকজন আমাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে।