অদম্য আসিফের গল্প

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন আসিফ/ ছবি:  সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন আসিফ/ ছবি: সংগৃহীত

মনোবল, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা, দৃঢ় বিশ্বাস এবং মানসিক স্থিতিশীলতা দিয়ে যে কোনো বাধাই জয় করা যায়। শাশ্বত সত্য সে কথাগুলো যেন আবারো প্রমাণ করে দিলেন নাভানা লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার আসিফ ইকবাল চৌধুরী। শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তিনি, পেয়েছেন সরকারের স্বীকৃতি। 

২০১৯ সালের দেশের ‘সফল কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ হিসেবে তাকে মনোনীত করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৫ই ডিসেম্বর) তার হাতে জাতীয় প্রতিবন্ধী পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

আসিফ ইকবাল চৌধুরী রংপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল এবং কলেজ থেকে ১৯৯৩ সালে এস.এস.সি এবং ১৯৯৫ সালে এইচএসসি পাস করে ভারতের মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করেন। ২০০০ সালে চাকরিজীবন শুরু করেন তিনি। ২০০৪ সালে যোগ দেন নাভানা গ্রুপে।  সবকিছু ভালোই চলছিল। এর ১০ বছর পর আসিফের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

আসিফ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ২০১৪ সালে অফিসিয়াল কাজের জন্য আমি অস্ট্রেলিয়ায় যাই। মেলবোর্ন শহরে নতুন একটি গাড়ি ড্রাইভ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হই। দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ড গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং বুকের নিচ হতে প্যারালাইজড হয়ে যায়।

এরপরই শরু হয় আসিফের অন্যরকম যুদ্ধ। দুর্ঘটনার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে চলে যায় ৩ বছর। অস্ট্রেলিয়া, ব্যাংকক, ভারতে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হন তিনি। কিন্তু চিরতরের মতো পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হয় তাকে।

আসিফ বলেন, এই তিন বছর ছিল বিভীষিকাময়। একদিকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসার ধাক্কা অন্যদিকে পঙ্গু শরীরের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া, কোনটাই সহজ ছিলনা আমার জন্য। কিন্তু কখনোই মনোবল হারাইনি আমি।

তিন বছর চিকিৎসা শেষে আসিফ ২০১৭ সালে দেশে ফিরে আবারও যোগ দেন নাভানাতে। ২০১৮ সালে আসিফ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ শিশুদের স্কুল প্রয়াস এর সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।

আসিফের গ্রামের বাড়ি রংপুরের শালবনে। প্রতিবন্ধীদের জীবনের কষ্টটা নিজেকে দিয়েই বেশি উপলব্ধি করেন তিনি। তাই তাদের জন্য নিজ শহর রংপুরে একটি স্পেশালাইজড প্যারালাইসিস হসপিটাল এবং রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার ইচ্ছে তার।

আসিফ বলেন, আমার এ ইচ্ছের কথা আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও জানিয়েছি। তিনিও আমাকে সহায়তা প্রদানের ইচ্ছে পোষণ করেছেন।

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝ নয়, তারও অন্য দশজনের মতোই মেধাবী। তাদের প্রয়োজন একটু বিশেষ যত্ন ও সহযোগিতা। আর সেটি নিশ্চিত হলে তারাও দেশের সম্পদ হতে পারবেন, যোগ করেন আসিফ।