২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘মুজিব বর্ষ’। এরই মধ্যে ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। ধারণা করা হচ্ছে এ কর্মসূচিকে ঘিরে থাকছে নানা চমক।
এর আগে জানা যায়, মুজিব বর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন।। তবে এবার শোনা গেল, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র কেবল উপস্থিত থাকবেন না, অনুষ্ঠানের মূল বক্তাও তিনি।
বিজ্ঞাপন
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী দ্য হিন্দুকে বলেছেন, প্রায় ৩৯ জন বিশ্বনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাদের অনেকে ইতিমধ্যে আসার জন্য সম্মতি জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। ঢাকার কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন নরেন্দ্র মোদিই অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেবেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ভারতের অনেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, ভারতে বাংলাদেশের মিশনগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে। দিল্লি, কলকাতা ও আগরতলায়ও পৃথক অনুষ্ঠান হবে।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী আরও জানান, মুজিববর্ষ উদযাপনে এখন পর্যন্ত আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এই আন্তর্জাতিক উপকমিটিগুলো বর্তমানে বিদেশে শতবর্ষ উদযাপন কর্মসূচির বিবরণ দিচ্ছে। ২০২০ সালের কলকাতা বইমেলা বঙ্গবন্ধুর প্রতি উৎসর্গ করা হবে। কলকাতা ও আগরতলায় যৌথ প্রকাশনা, মিডিয়া কনফারেন্স, ডকুমেন্টারি এবং সেমিনারের আয়োজন করা হবে যাতে একাত্তরের সময় উপস্থিত ভারতীয় সাংবাদিকরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবেন।
কলকাতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত এই এক বছর ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে পালন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগসহ দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। আর ঠিক পরের বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি, জেলহত্যা দিবসের কর্মসূচিসহ অন্যান্য কর্মসূচি মুজিব বর্ষের কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বিতভাবে পালিত করা হবে।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ৫ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার মো. সেলিমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু জানান, ২০১৯ সালের একটি ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় সম্পৃক্ততা পাওয়ায় আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও তিনজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে আসামি সেলিম আজ বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমপর্ণ করে জামিন আবেদন করে। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিসের এলএ শাখার চেইনম্যান মো. নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে দুদক। তার ড্রয়ারে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা ও ৯১ লাখ ৮৩ হাজার টাকার অগ্রিম ঘুষের চেক উদ্ধার করা হয়। একই জায়গা থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীনকে ঘুষের ৫৭ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন অর্থাৎ ৮ নভেম্বর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম -২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাস বাদি হয়ে দুদক আইনে একটি মামলা করেন।
পরে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান একই কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম। চলতি বছরের ৩০ জুন তিনি তদন্ত করে এ ঘটনায় আরও তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তারা হলেন- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির মুরাদপুর শাখার সাবেক অপারেশন ম্যানেজার মো. ইব্রাহিম মিয়া, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার মো. সেলিম এবং নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর কাট্টলীর মুকিম তালুকদার বাড়ির বাসিন্দা মো. নাছির আহমেদ। আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে মৌসুমি বায়ু ও ঘূর্ণিঝড় বিদায় নেয়ায় আগামী দিনগুলোতে এমন কোনো পরিস্থিতির আভাস নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাতে দেওয়া পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এছাড়াও বর্ধিত ৫ দিনেও একই অবস্থা থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে দুটি পালিত বিড়ালের ধুমধামে বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে সবকিছুরই আয়োজন ছিলো। যথারীতি অতিথিদের জন্য রাজকীয় সব খাবারও ছিলো। এই অবিশ্বাস্য বিয়ে নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
কুলিয়ারচর উপজেলায় ১০ হাজার ১ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে ধুমধাম করে পোষা বিড়াল দুষ্ট ও মিষ্টির বিয়ে দিয়েছেন নাজমা আক্তার নামের এক গৃহবধূ।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর বাজার আলহাজ্ব ছিদ্দিক মিয়ার বিল্ডিং অগ্রণী ব্যাংকের ছাদে স্বাভাবিক বিয়ের মতোই আয়োজন করে উৎসবমুখর পরিবেশে পোষা বিড়ালের বিয়ে হয়।
বিড়ালের বিয়ে উপলক্ষে প্রায় ৭০ জন মেহমানের জন্য পোলাও, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, ডিম, সবজি ও ঠাণ্ডা পানীয় ছিল খাবারের মেন্যুতে।
জানা গেছে, স্বাভাবিক নিয়মে বিয়ের আগের দিন পোষা বিড়াল দুষ্ট মিষ্টির গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়ের দিন বরপক্ষ (দুষ্ট) পার্শ্ববর্তী পূর্ব গাইলকাটা মহল্লার মো. সেলিম মিয়া বরযাত্রী নিয়ে গেটে ২ হাজার ৫ টাকা দিয়ে বিয়ে বাড়িতে ঢুকেন। পরে বরযাত্রীসহ কনের বাড়ির মেহমান মিলে খাওয়া-দাওয়া শেষে পোষা বিড়াল দুষ্ট মিষ্টির বিয়ে দেন। বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ১ টাকা।
এ বিষয়ে নাজমা আক্তার জানান, কয়েকমাস ধরে শখ করে আনা বিড়াল দুটো লালন-পালন করছিলেন তিনি। তাদের নাম রাখা হয় দুষ্ট ও মিষ্টি। পরে ইচ্ছে হলো তাদের বিয়ে দেওয়ার। সেই ইচ্ছে থেকেই ঘটা করে ধুমধাম করে দুষ্ট ও মিষ্টির বিয়ে দেন।
নাজমা আক্তার কুলিয়ারচর বাজার আল্লাহ ভরসা মৎস্য আড়তের মালিক মো. মিশু মিয়ার স্ত্রী। তিনি কুলিয়ারচর বাজার আলহাজ্ব ছিদ্দিক মিয়ার বিল্ডিংয়ে চতুর্থ তলায় ভাড়া থাকেন।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর উদ্বোধন করা হবে। যদিও এতদিন বলা হচ্ছিল- ডিসেম্বরেই যমুনা নদীর ওপর রেলসেতু চালু করা সম্ভব হবে। কিন্তু কিছু জটিলতা থাকায় সেতু উদ্বোধনের সময় সামান্য হেরফের করে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কার্যক্রম চালুর কথা জানাচ্ছে প্রকল্প সূত্র।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব ও পশ্চিম রেল স্টেশনে শুরু থেকে কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রথম দিকে সেতুতে পূর্ণগতি অর্থাৎ ১২০ কিলোমিটার বেগ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসি এবং ভারত থেকে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে জটিলতার কারণে সেতুর দুই পাশের স্টেশনে শুরু থেকে সিবিআইএস চালু করা যাচ্ছে না। ফলে এ সময়টাতে ট্রেনের গতি কম থাকবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে সিবিআইএস চালু করা সম্ভব হবে।
রেল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে সমান্তরালভাবে নির্মাণাধীন প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুর জন্য সাড়ে ৭ কিলোমিটারের বেশি রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী গত আগস্টের মধ্যে এসবের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রকল্পের সময়সীমা সংশোধন করে তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।
রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে যমুনার ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে যে মিটারগেজ রেললাইন রয়েছে- তাতে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭০ কিলো-নিউটন/মিটার ওজন বহন করা সম্ভব। তাই ট্রেনে বেশি বগি যুক্ত করার সুযোগ নেই। এছাড়া এক লাইনের সীমাবদ্ধতা থাকায় বেশি ট্রেন চালানোও সম্ভব নয়। মাত্র ২০ কিলোমিটার গতিতে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু পার হতে ২৫ মিনিট লেগে যায়। দুই পাড়ের স্টেশনে সিগন্যালের জন্য ট্রেনগুলোকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে মাত্র ৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে লাগে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু উদ্বোধন হলে এ রুটে গড়ে সময় বাঁচবে এক ঘণ্টা। ক্রসিংয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে পাঁচটি জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের আওতায় সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। সিবিআইএস চালু করার কাজে জাপানি বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিটাচির সহায়তা নিচ্ছে রেলওয়ে। ভারতে হিটাচির পণ্য উৎপাদন কারখানা থাকায় জাপানি ঠিকাদাররা সেখান থেকেই পণ্য আমদানি করছিলেন। ঠিকাদাররা সম্প্রতি সেখান থেকে পণ্য আমদানি করতে কিছু জটিলতায় পড়েছেন। প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর ওই জটিলতা নিরসনে রেলওয়ে ঠিকাদারদের তাগিদ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রেল সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান জানান, নতুন এই রেলসেতু দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও সিবিআইএসের কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪০-৪২ শতাংশ। এ পদ্ধতি চালু করতে আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তায় সেতু উদ্বোধন হওয়ার পরে আরও দু-তিন মাস লাগতে পারে।
তিনি আরও জানান, সিগন্যাল সিস্টেম সাধারণত স্টেশনে থাকে সেতুতে তো আর থাকে না। তাই গতি পেতে তেমন কোন সমস্যা হবে না। আগামী মার্চ মাসের শেষ দিকে কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হবে। আপাতত প্রথাগত নন-ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থায় ট্রেন চালাতে হবে।
তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা চালু না হলে ট্রেনের গতি কমে সময়ের অপচয় হওয়া ছাড়াও নিরাপত্তার দিকে ঘাটতি থাকবে। এ থেকে জটের আশঙ্কাও রয়েছে। সূত্রমতে, পুরোনো নন-ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থা যত দিন চালু থাকবে তত দিন নয়া সেতুতে ট্রেনের গড় গতিসীমা অনেক কম থাকবে। এ ব্যবস্থায় ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে গেলে মারাত্মক শিডিউল বিপর্যয় ঘটবে।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান জানান, কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু না হলে পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথে নিরাপত্তাগত শঙ্কা থেকে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরুতে সিগন্যাল সিস্টেমের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। যে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ ট্রেনের গতি বাড়িয়ে শিডিউল বিপর্যয় কমানো সেখানে নন-ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম চালু থাকলে যাত্রী সেবার মান বিন্দুমাত্র বাড়বে না। এতে রেলপথে যাত্রী ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রমতে, নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মাণের জন্য ৫০টি পিয়ার ও ৪৯টি স্প্যানের নির্মাণ কাজ চলছে। সব পিয়ার ও স্প্যানের উপরিকাঠামোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর দুই দিকে বাঁধ নির্মাণের কাজও শেষ। সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন ১ থেকে ২৩ নম্বর পিয়ারের মাঝের অংশে লাইনের খুঁটিনাটি কিছু কারিগরি কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনে স্টেশন ভবন, প্ল্যাটফর্ম, প্ল্যাটফর্ম শেড, পার্কিং এরিয়া, অন্যান্য পূর্তসংক্রান্ত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে এসব কাজের ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। উভয় প্রান্তে সিগন্যালিং ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার কাজের অগ্রগতি ৪৫-৪৭ শতাংশ। যমুনা বহুমুখী সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেলসেতু চালুর পরে আন্তঃনগর, লোকাল, কমিউটার, মালবাহী ট্রেনসহ ৮৮টি রেল চালানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে।
সেতুর বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, সিবিআইএস চালুর বিষয়টি প্রকল্প পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। দেরি হলেও ১৫ দিন থেকে ১ মাসের বেশি সময় লাগবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর উদ্বোধন হলে নতুন ট্রেন এ রুটে যুক্ত করা হবে কি না জানতে চাইলে মহাপরিচালক জানান, ঢাকার সঙ্গে ওই অঞ্চলে নতুন ট্রেন যুক্ত করা কঠিন হয়ে যাবে। থার্ড বা ফোর্থ লাইন চালু না হলে নতুন ট্রেনের ক্যাপাসিটি তৈরি হবে না। নতুন ট্রেন এলেও জয়দেবপুর বা টঙ্গী পর্যন্ত চালানো যেতে পারে। এতে পুরোপুরি সুফল আসবে না।