'শ্রমিক লীগের গুরুত্ব সবাই অনুভব করছে'
দীর্ঘ সাত বছর পর কাউন্সিল হতে যাচ্ছে জাতীয় শ্রমিক লীগের। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই সংগঠনটির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দুই বছর মেয়াদী কমিটির দায়িত্ব পালন করছে সাত বছরের বেশি সময় ধরে। অবশেষে আগামী ৯ নভেম্বর সংগঠনটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সাজসাজ রব শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে। শীর্ষপদে মনোনয়ন পেতে অনেকে ধরনা দিচ্ছেন সংগঠনটির সাবেক নেতাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসা কিংবা অফিসে। সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের দরবারে। কারণ তাকে বলা হয় শ্রমিক নেতাদের ভাগ্য বিধাতা। মাদারীপুর-২ আসন থেকে সাত বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য শাজাহান থান বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনে নিজস্ব কার্যালয়ে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন শাজাহান খান। এ সময় তিনি শ্রমিক লীগের আসন্ন সম্মেলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: শ্রমিক লীগের আসন্ন কাউন্সিলে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
শাজাহান খান: জাতীয় শ্রমিক লীগ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন। ৭ বছর পর এই সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সব ধরণের প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। একটি জাকজমকপূর্ণ ও স্মরণকালের বৃহৎ একটি সম্মেলন করার ইচ্ছা আছে। সকাল ১০টায় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহু অতিথি সেখানে আসবেন।
দেশের বহু শ্রমিক সংগঠন এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যারা শ্রমিক আন্দোলন করেন, ট্রেড ইউনিয়ন করেন- তারা সম্মেলন নিয়ে বেশ আশাবাদী। ফলে এই সংগঠনের গুরুত্বটা সবাই অনুভব করতে পারছে।
বঙ্গবন্ধুর সময় এই সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ৬ দফা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে শ্রমিকরাও আন্দলনে যুক্ত হন। তারাও শহীদ হন। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব এই সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ শুরু করেছি।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: শুদ্ধি অভিযানে শ্রমিক লীগের অনেক নেতা অভিযুক্ত হচ্ছেন। এটা সম্মেলনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে?
শাজাহান খান: অভিযোগ অনেকের বিরুদ্ধেই থাকতে পারে। তবে সত্য-মিথ্যা বিবেচনা করে এখনই সব বলা যাবে না। যখন সময় আসবে তখন দেখা যাবে। তবে অভিযোগ যে খুব বড়, তা নয়। এই অভিযোগকে ওভারকাম করেই আমরা সম্মেলন করতে পারবো। কোনও ধরণের বাধা বা সমস্যার সৃষ্টি হবে না।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: গত ১০ বছরে তুলে ধরার মতো শ্রমিক লীগ কী কাজ করেছে?
শাজাহান খান: শ্রমিক লীগ জন্মলগ্ন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি জড়িত। স্বাধীনতার পরও শ্রমিক লীগ অনেক কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধুর সময়েও শ্রমিক লীগের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিক লীগ আরও বিস্তার লাভ করেছে। গার্মেন্টেস সেক্টরে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল? তখন গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ গঠন করে জ্বালাও পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। সে সময় অনেককে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এরপর প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে দেন। প্রতি ৫ বছর পর পর শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারাণে শ্রমিক লীগের বিশাল ভূমিকা থাকে। মজুরি নির্ধারণ কমিটিতে শ্রমিক লীগের একজন স্থায়ী সদস্য আছেন। এছাড়া শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেলে তা নিরসন করা শ্রমিক লীগের দায়িত্ব।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: শ্রমিক লীগের নিয়মিত কাউন্সিল হয় না কেন? কাউন্সিল না হলে কী কী ক্ষতি হয়?
শাজাহান খান: আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিল সময়মতো করতে পারেনি এটা সত্য। নানা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তিন বছরের মধ্যেই কাউন্সিল করার চেষ্টা করে। এবারও তাই হচ্ছে। ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর নিজস্ব অনেক সমস্যাই থাকতে পারে। এই সমস্যাগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ। হয়তো জেলা কমিটি করতে পারেনি অথবা তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগের সম্মেলন পিছিয়ে গেল। কখনো বন্যা, কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নানা কারণেই পিছিয়ে যেতে পারে সম্মেলন। তবে আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যথাযথভাবে চলবে শ্রমিক লীগ। দৃশ্যমান সম্মেলন হলে নতুন নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। সংগঠন চাঙা থাকে। নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের ভাব চলে আসে। ভ্রাতৃত্ববন্ধন সৃষ্টি হয়। সকলের মধ্যে কাউন্সিলের উৎসবভাবটা শুরু হয়ে গেছে।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: কাউন্সিলে ডেলিগেট কতজন?
শাজাহান খান: ৮ হাজারের বেশি ডেলিগেট এবং ৮ হাজারের বেশি কাউন্সিলর। সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ হাজার।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: কেমন নেতৃত্ব আশা করছেন?
শাজাহান খান: এটা নির্ভর করে কাউন্সিলের মতামত সর্বপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। একটি গণতান্ত্রিক সংগঠনে ভোটের মাধ্যমে সাধারণত নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। আসলে দুইটা পদ্ধতিতে হয়। একটা ইলেকশন আরেকটা সিলেকশন। যদিও সিলেকশনটাও একটা নির্বাচন। সিলেকশনটা সকলের মতামতের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক সংগঠনে যারা কাউন্সিলর থাকেন তাদের মতামত বা তাদের ভোট প্রয়োজন হয়। সব সময় যে ভোট হয় তেমনটা না।
যেমন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে কখনো ভোট হয়, কখনো প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী জানেন কার কী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দলে কার কী অবদান। তবে এখন অনেকে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে এসেছেন। ফলে দলে অনেকে অনুপ্রবেশ করেছে। একটি দল অনেকদিন ক্ষমতায় থাকলে স্বভাবিকভাবে কিছু অনুপ্রবেশকারী থাকবেই। তারাই জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সেটাও প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করেন।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: গঠনতন্ত্রে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে কি?
শাজাহান খান: না, যে গঠনতন্ত্র আগেরবার করে দিয়েছি সেটাই থাকবে। ট্রেড ইউনিয়ন করার মতো সুন্দর একটা গঠনতন্ত্র। সুতরাং এবার নতুন করে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করার কোনও প্রয়োজন নেই।
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম: আপনাকে ধন্যবাদ।
শাজাহান খান: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকেও ধন্যবাদ।