মা-ছেলে খুন: আ.লীগ নেতাসহ ৩ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা, ইনসেটে নিহত মা ও ছেলে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা, ইনসেটে নিহত মা ও ছেলে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহীর বাগমারায় মা-ছেলেকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ তিনজনকে ফাঁসি ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার এ রায় ঘোষণা করেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেউল রানী রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন (৫২), দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাবিবুর রহমান (৪০) ও একই উপজেলার দেবীপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক (৩৫)।

বিজ্ঞাপন

আর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন-দুর্গাপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল কাফি (২২), একই গ্রামের লবির উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), দুর্গাপুরের খিদ্রকাশিপুর গ্রামের ছাবের আলীর ছেলে রুস্তম আলী (২৬) এবং খিদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম মনির (২৩)। তারা সবাই ভাড়াটে খুনি হিসেবে এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে বাগমারা উপজেলার দেউলা গ্রামের বাড়িতে আকলিমা বেগম (৪৫) ও তার ছেলে জাহিদ হাসানকে (২৫) গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় জোড়া খুনের তদন্ত। তিন দফা বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা। সর্বশেষ রাজশাহী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে। এরপরই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে ২০১৮ সালের ৩১ মে রাজশাহী পিবিআইয়ের সেই সময়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে ওই সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। সেখানে জোড়া খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে দুই জনকে দায়ী করা হয়। তারা হলেন-নিহত আকলিমা বেগমের দেবর আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন এবং তার সহযোগী হাবিবুর রহমান হাবিব।

son
আকলিমা বেগম ও তার ছেলে জাহিদ হাসান, ছবি: সংগৃহীত

 

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু জানান, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে মামলাটি জেলা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলায় ৫১ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৪৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তিনজনকে ফাঁসি এবং চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন আদালত।

নিহত আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন জানান, ছোটবেলায় তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা আবুল হোসেনই সব সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। ২০১৪ সালে তার ভাই জাহিদ হাসান রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন। চাচার পর তাদের পরিবারের মধ্যে জাহিদই ছিলেন একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন না চাচা। এছাড়া জাহিদ লেখাপড়া শেষ করে চাচার কাছ থেকে সব সম্পত্তি বুঝে নিতে চান। এ নিয়ে চাচার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে আবুল হোসেন ভাড়াটে খুনি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে তার মা ও ভাইকে হত্যা করান।

এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।