ক্রুটি রেখে সংস্কার কাজ শেষ করায় রাজশাহীর চারঘাটে তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রকৌশলীরা। দুর্ঘটনার পর বুধবার (১০ জুলাই) রাতে গঠিত তদন্ত কমটি বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। ঐ তদন্ত কমিটির প্রধান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বিকাল ৩টার দিকে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ রুট ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহীর হরিয়ান পর্যন্ত লাইন সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। তবে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুদিনের জন্য সংস্কার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের নজরে পড়েছে, কয়েকটি অকেজো স্লিপার পরিবর্তনের সময় সেখানে ডগস্পাইক (স্লিপারের সঙ্গে লাইন আটকে রাখে) খুলে ফেলা হয়েছিল। স্লিপার লাগিয়ে পরে আর ঐ স্থানে সেগুলো লাগানো হয়নি। পাথর ফেলার সময় যেকোনোভাবে সেটা ঢেকে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘যাত্রীবাহী ট্রেন ক্রুটিপূর্ণ লাইনের ওপর দিয়ে চলাচল করেছে বেশ কিছুদিন। তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। ফলে লাইন ক্লিয়ার আছে বলে ধরা হয়েছিল। তবে গত দুই/তিন দিনের বৃষ্টিতে ঐ স্থান কিছুটা নরম হয়ে নিচের মাটি দেবে যায়। আর বৃষ্টির মধ্যেই বুধবার বিকালে তেলবাহী ভারী ট্রেনটি ঐ স্থানে পৌঁছালে দুর্ঘটনা ঘটে।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত দুর্ঘটনা কবলিত নয়টি বগির মধ্যে নাজুক অবস্থায় থাকা চারটি বগি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি বগিগুলো দ্রুত সরানো যাবে বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে থাকা রাজশাহী রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা। তাদের ধারণা- লাইন মেরামত করে রাতের ধূমকেতু ট্রেনটির যাত্রার মধ্য দিয়ে চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, খুলনা থেকে বুধবার সকালে তেলবাহী একটি ট্রেন ছেড়ে আসে। বিকালে ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে রাজশাহী অভিমুখে যাত্রা করে ট্রেনটি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চারঘাটের হলিদাগাছী স্টেশনের কাছে দীঘলকান্দি এলাকায় ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। খবর পেয়ে সাড়ে ৭টার দিকে ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে একটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে যায়। রাত সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় উদ্ধারকারজ। ঐ সময় দুর্ঘটনার শিকার ট্রেনটি সামনের বগিগুলো নিয়ে রাজশাহীর হরিয়ান স্টেশনে চলে যায়।
এদিকে, দুর্ঘটনার পর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আর ঘটনা তদন্তে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির সদস্যদের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিবেদন পাওয়ার আগে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তাই দুর্ঘটনার কারণ জানাতে রাজি হননি।