বাঘায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঈদ মেলায় মানুষের ঢল

  • হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাজার প্রাঙ্গণে বড় পুকুর পাড়ে বিনোদনপ্রেমীরা / ছবি: বার্তা২৪

মাজার প্রাঙ্গণে বড় পুকুর পাড়ে বিনোদনপ্রেমীরা / ছবি: বার্তা২৪

রাজশাহী মহানগর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাঘা উপজেলা। যার পূর্ব-দক্ষিণ কোণে পদ্মা নদী। ইসলাম প্রচারের জন্য প্রায় ৫০০ বছর আগে বাগদাদ থেকে পাঁচজন সঙ্গীসহ বাঘায় আসেন শাহ আব্বাসী (রঃ)। সঙ্গীদের নিয়ে বসবাস শুরু করেন পদ্মাপাড়ে।

নিজের চারিত্রিক মাধুর্য্য, জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও আত্মিক শক্তির বলে স্থানীয় মানুষকে ইসলাম প্রচারে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন তিনি। ক্রমে অন্য ধর্মের মানুষ তাঁর হাত ধরে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিতে শুরু করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ইসলাম প্রচারের কাজ করেন ছেলে শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রঃ) ও শাহ আব্দুল হামিদ দানিশ মন্দ (রঃ)।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/05/1559742459104.jpg

বাঘার ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ স্থাপন করেন তাঁরা। মসজিদের প্রবেশ পথের উত্তর গেটের বামদিকে শাহদৌলার (রঃ) রওজা শরীফ। সেখানেই তাঁদের জ্ঞান সাধনার পীঠস্থান। তাঁদের ওরশকে কেন্দ্র করে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের বিশাল এলাকা জুড়ে শুরু হয় ঈদ মেলা।

ঈদ পরবর্তী ১৫ দিন ধরে চলে এই মেলা। ঈদের তৃতীয় দিনে মূলত ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন জোহর নামাজের পর মেলায় আসা লাখো মানুষের মাঝে তাবারক বিতরণ করা হয়।

এদিকে, প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঈদ মেলা। ঈদের দিন দুপুর থেকে মেলায় মানুষের ঢল নেমেছে। নামাজ শেষে লাখো মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন। শাহদৌলা কলেজ মাঠ, মাজার চত্বর, উৎসব পার্কে তিল ধারণের জায়গা নেই। মুসলমানদের ধর্মীয় প্রধান উৎসব হলেও সকল সম্প্রদায়ের মানুষই আসে এই মেলায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/05/1559742488920.jpg

বিশাল এলাকাজুড়ে অস্থায়ী দোকান করে মেলায় বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে সার্কাস, যাত্রা, নাগরদোলা, মটোরসাইকেল ও কারগাড়ি ‘ঘোরানখেলা’।

মেলায় বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টি, খাবার সামগ্রী ছাড়াও শিশুদের খেলনা, মনোহারি সামগ্রী, লোহার দ্রব্য, কাঠের আলনা, চেয়ার, টেবিল, খাট, ড্রেসিং টেবিল, পালঙ্ক, শো-কেচ, মাটির হাড়ি পাতিল, প্রসাধনী সামগ্রী, হরেক রকমের শামুকের মালা, কাঠের সামগ্রী, বেলুন, বাঁশি পাওয়া যাচ্ছে।

নাটোরের লালপুর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় আসা আলতাফুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ছোটবেলার আব্বার সঙ্গে মেলায় আসতাম। বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টি, খেলনা কিনে দিতো আব্বা। এখন আব্বা বেঁচে নেই। ছেলে-মেয়ে, বউকে নিয়ে ঈদে মেলায় আসি। এখানে আসলে খুব ভালো অনুভব করি। অনেক পুরোনো স্মৃতি রোমান্থনের পথ খুলে দেয় এই মেলা।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/05/1559742513983.jpg

রাইসা তাবাচ্ছুম নামে এক তরুণী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আব্বু ও ভাইয়ার সঙ্গে মেলায় আসা হয়। বিগত ৬/৭ বছর মেলায় ঘুরতে আসি। বিশেষ করে ঈদের দিন। যেদিন মেলা শুরু হয়। এদিন বেশি মানুষ আসে, হরেক রকমের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। কীভাবে দিন পার হয়ে যায় বুঝেই উঠতে পারি না।’

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে মেলায় আসা ৭৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ মো. শাইজুদ্দীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মেলায় আগের চেয়ে এখন লোকজন বেশি হয় ঠিক, তবে আগের মতো ঐতিহ্য নেই। জিনিসপত্রে যে ঐতিহ্য আগে ছিল, এখন তা নেই। এখানে আগে যেসব জিনিস পাওয়া যেতো, তাতে ধর্মীয় অনুভূতি যুক্ত ছিল। কিন্তু এখন সব বাণিজ্যিক হয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব এই মেলায়ও পড়েছে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/05/1559742546055.jpg

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা কাঠের আসবাবের দোকানি মঈনুদ্দীন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি ১৩ বছর ধরে মেলায় দোকান দেই। এরআগে আমার বাবা দোকান বসাতো। একই স্থানে আমি এখন বেচাকেনা করছি। ১৫ দিনের মেলায় খরচ-খরচা বাদ দিলেও লাখ টাকার ব্যবসা হয়।’

জানতে চাইলে মেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এটা একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। প্রতিবছর মেলার আয়োজন করা হয়। এখানে কিছু রীতি মেনে চলা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে মেলায় যাতে ঐতিহ্য ফুটে ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেলায় সার্কাসের নামে যাতে কোনো প্রকার অশ্লীলতা এবং জুয়া খেলা না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে আয়োজকরা। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কমতি নেই। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আশা করি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে মেলায় আনন্দ উপভোগ করবে মানুষ।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/05/1559742587837.jpg

জানা যায়, চলতি বছর ২১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় মেলার ইজারা পেয়েছেন বাঘা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মেলার ইজারা থেকে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষি না। ঐতিহ্যবাহী মেলা, লাখো মানুষ আসে এখানে। মেলায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নে আমরা তৎপর রয়েছি। নামমাত্র মূল্যে দোকানিরা মেলায় ব্যবসা করতে পারছেন। তাদের কোনো অভিযোগ নেই।’