ফণী নিয়ে উৎকণ্ঠায় রাজশাহীর আম চাষিরা

  • হাসান আদিব, স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র বেগের ঝড় হলে আম ঝরে পড়ার শঙ্কায় চাষিরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

তীব্র বেগের ঝড় হলে আম ঝরে পড়ার শঙ্কায় চাষিরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানার পর সুপার সাইক্লোন ফণীর অগ্রভাগ বাংলাদেশের খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ‘উইন্ডি ডটকম’ এর স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী শনিবার (৪ মে) সকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল দিয়ে বয়ে যেতে পারে ফণী।

ঘূর্ণিঝড় ফণী গতিপথ ও শক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তা নিয়ে ব্যাপক উৎকণ্ঠায় রয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিরা। জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, চারঘাট, বাঘা, পুঠিয়া, বানেশ্বর, মোহনপুর এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ফণী নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন, যাতে ক্ষয়-ক্ষতি কম হয়। জেলার অধিকাংশ মসজিদেও জুম্মার নামাজে এ নিয়ে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত কর হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, 'উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা রাজশাহী অঞ্চলে মূলত আমই প্রধান অর্থকরী ফসল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখানকার আম বিদেশেও রফতানি করা হয়। অথচ চলতি বছর মুকুলের সময় শিলাবৃষ্টি, কড়ির সময়ে অনাবৃষ্টি ও পুষ্ট হয়ে বাজারজাতকরণের ঠিক মাসখানেক আগেই ফণীর ছোবলে পড়তে হচ্ছে আম চাষিদের।'

জেলার আম চাষিরা বলছেন, 'রাজশাহীর আম এখন পুষ্ট হতে শুরু করেছে। একমাসের মধ্যেই বাজারজাতকরণের উপযোগী হবে আম। এই সময়ে এমন ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম চাষিদের স্বপ্নভঙ্গ করতে পারে।'

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার আম চাষি রহমত আলী বলেন, 'খবরে দেখলাম- ফণী রাজশাহীর ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতি হতে পারে। এমন ঝড়ে গাছের আমই শুধু নয়, ডালপালাও ভেঙে পড়বে। আল্লাহ, আমাদের ওপর রহম করুন।'

ফণী নিয়ে উৎকণ্ঠায় রাজশাহীর আম চাষিরা

পুঠিয়ার আম চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, 'এ বছর আমের মুকুল আসার সময়ে রাজশাহী অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ শিলাবৃষ্টি হয়। তাতে মুকুল ঝরে পড়ে। যে মুকুল ছিল তাতে বেশ ভালো কড়ি হয়েছিল। তবে তীব্র গরম ও রোদে ব্যাপকভাবে কড়িও ঝরে পড়েছে। এখন আবার ঘূর্ণিঝড় আসছে। কী যে হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।'

মোহনপুরের আম চাষি মজিবুর রহমান বলেন, 'শুধু আমি নয়, রাজশাহীর বেশিরভাগ চাষি এখন আমের দিকে চেয়ে আছেন। ভরা মৌসুমে ভয়াবহ ঝড়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হতে পারে অনেক আম চাষির। ফণী ঝড় সম্পর্কে যা শুনছি, এখন দেখার বিষয় কেমন গতিতে রাজশাহীতে আসে।'

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সামছুল হক বলেন, 'চলতি বছর রাজশাহীতে রেকর্ড ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফণীর গতিবেগ সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা যদি সঠিক হয় এবং রাজশাহীর ওপর দিয়ে বয়ে যায়, তাহলে আম চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।'

তিনি বলেন, 'শুধু আম নয়, জেলায় এবার রেকর্ড ৭০ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষও করা হয়েছে। ফণীর কারণে আগেই কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে। জমির ধান ৮০ ভাগ পেকে গেছে, তাদেরকে কেটে ঘরে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ ভাগ জমির ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। জমিতে থাকা কাঁচা ধানের ক্ষতি না হলেও ফণীর কারণে পাকা ধানগুলোর ক্ষতি হতে পারে।'

রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের উচ্চ পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম বার্তা২৪.কম-কে জানান, ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে ফণী আঘাত করলেও বাংলাদেশে আসবে ৮০-১০০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে। রাজশাহীতে এর গতি আরও কিছুটা কম হতে পারে। ফণী আঘাত হানার পর এর প্রভাবে দু’দিন বৃষ্টি হতে পারে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আম বিরূপ আবহাওয়াতেও টিকে থাকার ফল। তবে ফণীর গতিবেগ নিয়ে যে তথ্য পাচ্ছি- তাতে করে এই ঝড়ে বাগানের আম ঝরে পড়ার ব্যাপক শঙ্কা রয়েছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার কারণে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। যা এ অঞ্চলের গোটা অর্থনৈতিক কাঠামোতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'