৪ সংগঠনের জাকসু নিয়ে মতবিনিময় সভা বর্জন

  • মাহমুদুল হাসান, জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠিত 'পরিবেশ পরিষদ' কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভা বর্জন করেছে শাখা ছাত্রদল ও ক্রিয়াশীল ৩ বামপন্থী সংগঠন। তবে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া রোডম্যাপ অনুসারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন৷ 

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ এ সভা বর্জন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৪ দফা দাবি জানান নেতাকর্মীরা। এদিকে সভা শুরুর আগে এক যৌথ বিবৃতিতে সভা বর্জনের কথা জানায় ওই তিন সংগঠন। 

এর আগে দুপুর ৩টায় জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে আয়োজন ও অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গঠিত 'পরিবেশ পরিষদ' কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভার বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া রোডম্যাপ অনুসারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা৷ 

বিজ্ঞাপন

সভা বর্জনের পর শাখা ছাত্রদলের আণিত দাবিগুলো হলো-

জাকসুর তফসিল ঘোষণার আগে জুলাই আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা; প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে সংস্কার করা; ফ্যাসিবাদ মুক্ত প্রশাসনে অধীনে জাকসু করা এবং ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত জাকসুতে অংশগ্রহণ না করা।

এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, জাকসু নির্বাচনের সবচেয়ে বড় অংশীজন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে পারেনি। বিভিন্ন বিভাগ থেকে ছাত্র প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছে। সেটা কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে আমার জানা নেই। ফ্যাসিবাদের দোসর ও ১৫-১৭ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার ছাড়া জাকসু নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

তিন সংগঠন নিয়ে গনতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সভা বর্জন:

এদিকে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি প্রেরিত এক বার্তায় সভা বর্জনের কথা জানায় গনতান্ত্রিক ছাত্র জোট৷ সেখানে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে আওয়ামী দোসরদের অবস্থান, অস্পষ্ট ভোটার তালিকা, জাকসু নির্বাচন বিষয়ক মিটিং-এ বিভাগীয় প্রতিনিধি আহ্বানে অস্পষ্টতা, সভায় ছাত্রশিবিরকে আমন্ত্রণ করায় মতবিনিময় সভা বর্জন করছে ৷ জোটভুক্ত সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন একাংশ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও  সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট৷ 

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ব্যানারে ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সংগঠক সোমা ডুমরি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক সজিব আহম্মেদ জেনিচ এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায়। 

নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন চায় শিক্ষার্থীরা :

জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে আয়োজন ও অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গঠিত 'পরিবেশ পরিষদ' কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে৷ মতবিনিময় সভায় প্রত্যেকটি বিভাগ থেকে একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া এই সভা বিকেল ৫টার দিকে শেষ হয়।

এসময় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বেশ কয়েকজন বিভাগীয় প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া রোডম্যাপ অনুসারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। এই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া রোডম্যাপ অনুসারে ১ ফেব্রুয়ারিতে তফসিল ঘোষণার উপরও জোর দিয়েছেন বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি বিভাগের প্রতিনিধিরা জোর দিয়েছেন নির্বাচনকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর।

মতবিনিময় সভায় লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থী সুমাইয়া জামান প্রীতি বলেন, জাকসু আমাদের সবার প্রত্যাশার প্রতীক, তবে এটিকে কেন্দ্র করে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যেন বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করে একাডেমিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে তার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। এজন্য নির্বাচনের আগে কঠোর নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। জাকসুকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটি এমন একটি সংগঠন হতে হবে যেখানে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে। এর জন্য কঠোর নিয়ম-কানুন এবং শাস্তির ব্যবস্থা চালু করা আবশ্যক।

আইন অনুষদের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আসিফুল হাসান অমিত সভায় অংশ নিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা দাবি জানিয়েছি পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করতে হবে এবং তফসিল ঘোষণার ২১ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। সভায় উপস্থিত অন্যান্য বিভাগ ও ইনিস্টিউটের প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। পাশাপাশি আমারা ছাত্রসংসদে কিছু কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব করেছি। বর্তমানে জাকসুতে দপ্তর সম্পাদক ও আইন সম্পাদক পদ নেই, যা সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছি। তবে উপাচার্য জানান, গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রয়োজন। তাই জাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর এই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

ইতিহাস বিভাগের প্রতিনিধি মুজাতাহিদ হোসেন বলেন, জাকসু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সবার যে প্রতীক্ষা, নানান আলোচনা যে জাকসু হবে হবে কিন্তু হচ্ছে না। এরফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন করে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার অবসান করা। সংস্কারের যে প্রস্তাবনাগুলো আসছে সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে স্বল্প সময়ের মাঝে যৌক্তিক সংস্কার করা এবং যে রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে সেটার মধ্যেই সবকিছু বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিথি নাবিলা বলেন, আমরা সেখানে বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষিত সময়ের মধ্যেই যেন জাকসু কার্যকর করা হয়।এবং সম্ভব হলে তা যেন রমজানের ছুটির আগেই কার্যকর হয়।প্রশাসনের কাছে আমরা আবেদন করেছি যাতে করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণার গাইডলাইন প্রদান করা হয়। আমরা সংরক্ষিত নারী আসনের ব্যাপারেও প্রশাসন কে অবগত করেছি এবং যে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে প্রশাসন যেন কঠোর অবস্থানে থাকে সে ব্যাপারেও অবগত করেছি৷ 

মতবিনিময় সভায় দর্শন বিভাগ ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে বিভাগীয় প্রতিনিধিরা একটি স্মারকলিপির মাধ্যমে কিছু দাবি তুলে ধরেন। স্মারকলিপির উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো, জাকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও নারী নেতৃত্ব সুনিশ্চিত করতে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন বরাদ্দ রাখতে হবে। জাকসুর অপূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে। এতে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির উপর জোর দেন তারা৷ 

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে গত ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে প্রশাসন। পরে ১১ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা, ২১ জানুয়ারি পরিবেশ পরিষদ ও ২৪ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়। তবে ২৫ জানুয়ারি নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রণয়নের কথা থাকলেও তা হয়নি৷ এছাড়া রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে।