বিভিন্ন সময়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, উৎপাদনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গ্যাসের মূল্য আরও বৃদ্ধি করা হলে ধুঁকতে থাকা রুগ্ন কারখানা বন্ধের পাশাপাশি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন ইন্ডাস্ট্রি এক্সিকিউটিভ ফোরাম। সংগঠনটি শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সেখানে তারা বলেন, মিডিয়া শিল্পের উৎপাদনের দিক ও রপ্তানি আয়কে সামনে এনে থাকে। কিন্তু হাজার হাজার কর্মসংস্থান এবং পরোক্ষভাবে জড়িতদের দুর্দশার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। একটি শিল্প বন্ধ হলে কয়েক হাজার পরিবার পথে বসে যায়।
গ্যাস বিক্রি করে সরকারী মুনাফা না করা, এলএনজি আমদানি থেকে শুল্ক - কর প্রত্যাহার, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করে মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, শিল্প গ্রাহকদের সাথে পারষ্পরিক আলোচনা বা সমঝোতার মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের চাহিদাকৃত গ্যাসের চাপ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গত ৬ জানুয়ারি নতুন শিল্প কারখানার বয়লার ও শিল্প কারখানার জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) সরবরাহ গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। প্রস্তাবে বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হয়েছে।
যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হুরাইন হাইটেক ফেব্রিক্স এর সিএমও আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা আমাদের বোধ-বুদ্ধি থেকে আজকে সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেছি। এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ালে শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে, আমরা শ্রমিক-কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
বিদ্যমান গ্রাহকদের দাম বাড়ানোর কথা বলা হয় নি তারপরও কেনো উদ্বেগ। এমন প্রশ্নের জবাবে নোমান গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার সিফাত হোসেন ফাহিম বলেছেন। প্রতেকটি শিল্পের সম্প্রসারণ একটি চলমান প্রক্রিয়া, না হলে প্রতিষ্ঠান টিকতে পারে না। সম্প্রসারণে গেলেই বাড়তি দাম দিতে হবে, তাই উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, এভাবে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পুর্বে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করার উচিত ছিল না কি? কোন আলোচনা না করে এমন হঠকারি চিন্তা করাও অপরাধ।
প্যারগন সিরামিকসের এজিএম মোসাহেব ফাত্তাহ বলেন, আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে, না পারছি বন্ধ করতে না পারছি চালু রাখতে। বিশাল ব্যাংক ঋণ না থাকলে অনেকে আগেই বন্ধ করে দিতো। আবার গ্যাসের দাম বাড়লে ওই দিনেই তালা দিতে হবে। গ্যাসের চাপ দরকার ১৪ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি), ১১ জানুয়ারি পেয়েছি মাত্র ৩ পিএসআই। এতে করে কোয়ালিটি পণ্য উৎপাদন করতে পারছি না। আমাদের কারখানা বন্ধ করতে ৬দিন লাগে আবার চালু করতেও ৬দিন লাগে। গ্যাস সংকটে আমাদের ত্রাহী অবস্থা বিরাজ করছে।
নির্ধারিত সময়ে পণ্য দিকে না পারলে ডেমারেজ গুণতে হয়। পেট্রোবাংলা মনে হয় চিন্তা শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। না হলে এভাবে ১৫২ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করতে পারে। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নিরবিচ্ছিন্নভাবে অনুমোদিত চাপে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হলেও তা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। প্রায়শঃই অনুমোদিত চাপের বিপরীতে সরবরাহকৃত গ্যাসের চাপ খুবই স্বল্প থাকে যা স্বাভাবিক উৎপাদন ও নিয়মিত রপ্তানীর ক্ষেত্রে অন্তরায় এবং এর পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মান ও উৎপাদন বন্ধ হয়ে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বলাবাহুল্য।
দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ও অন্যান্য গণমাধ্যমসমূহ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে কেবলমাত্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি, রপ্তানী কমে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করেন। শিল্প কারখানাসমূহের সাথে জড়িত শত-শত শ্রমিক ভাইবোন এবং তাদের পরিবার, কারখানাসমূহের আশেপাশের অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিকশা চালক, দিন মজুর, ক্ষুদ্র ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের জীবন - যাপন ও পরিবারের ব্যয় নির্বাহের বিষয়টিও সরকারের নজরে আনা উচিত।
আমরা এখানে যারা এসেছি তারা শিল্প মালিক নই, তবে আমাদের মাধ্যমেই শিল্প ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয় এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। শিল্প ভালো না থাকলে আমরা সেইসব ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারবো না। বাংলাদেশে শিল্প ও অর্থনীতির প্রতি মমতা ও দায়বোধ থেকেই আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে সাশ্রয়ী জ্বালানীসহ শিল্পের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আবেদন জানাই।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাখান করে অবিলম্বে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল করার আহ্বান জানান তারা।