বিক্ষোভ-মিছিল
মানুষের ভিড়ে নির্বাক অবুঝ শিশু আরিয়ান
-
-
|
মানুষের ভিড়ে নির্বাক অবুঝ শিশু আরিয়ান
ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বাসিন্দা ওবায়দুর হত্যার বিক্ষোভ মিছিলে শত শত মানুষের ভিড়ে বারবার চোখ আটকে যাচ্ছিল শিশু আরিয়ানের দিকে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী বাহিনীকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। মিছিলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ অংশ নেয় গ্রামের কয়েকশো মানুষ ।
নিহত ওবায়দুর রহমান খানের ছেলে আরিয়ান খান ওরফে জুনায়েদ।। মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে ওবায়দুরকে খাজা বাহিনীর সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে, পিটিয়ে, চোখ উপরে ফেলে হত্যা করেছে। স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয়েছেন স্ত্রী সুইটি আক্তার (২২) । অবুঝ শিশু আরিয়ান পিতাকে হারিয়ে হয়েছে। বৃদ্ধ বিল্লাল খান ও রেখা বেগম দম্পতির ছেলে নিহত ওবায়দুর। ছেলেকে হারিয়ে তারা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
যখন চারপাশে ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই স্লোগান চলছে। সেই বিক্ষোভ মিছিলে সবার চোখ যাচ্ছিল শিশু আরিয়ানের দিকে। হাজার মানুষের হইচইয়ে পাঁচ মাস বয়সী আরিয়ান ছিল নির্বাক। আশেপাশে কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। আরিয়ানের দিকে যে তাকাচ্ছে সেই কাঁদছে।
নিহতের স্ত্রী সুইটি বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন কাঠমিস্ত্রী, একজন ভালো মানুষ ছিলেন। আমার স্বামী অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন, এটাই তার অপরাধ। একারণে তাকে জীবন দিতে হলো। আমার বিয়ে হয়েছে দুই বছর হলো। ৫ মাস বয়সী একটি সন্তান আছে। ও বাবা ডাকার আগেই তার বাবা চলে গেলো। আমাকে আর ছেলেকে এতিম করে চলে গেলো ।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীকে এর আগেও একাধিকবার ধাওয়া দেয় খাজা ও তার লোকজন। কিন্তু এবার তার জীবনটাই নিয়ে নিলো। আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর সে বলেছিল আমাকে প্রাণে মারিস না, প্রয়োজন হলে হাত পা কেটে দে। কিন্তু ওরা তা শুনেনি, আমার স্বামীর প্রাণটাই নিয়ে নিলো। নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করেছে। খাজা সহ যারা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তাদের গ্রেফতার করে ফাসির দাবী জানাই।
নিহতের বড় ভাই রাজিব খান বলেন, খাজা একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী। দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে শেষ করে দেয়। আমার ভাই তার অপকর্মের প্রতিবাদ করেছিল ফলে তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করলো। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা না হলে আরও মায়ের বুক খালি হবে।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আসাদউজ্জামান বলেন, সন্ধ্যায় ওবায়দুরের দাফনের পর রাতেই পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তারা ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য,শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী খায়রুজ্জামান ওরফে খাজা ও তার বাহিনী স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্প থেকে ওবায়দুরকে প্রকাশ্যে মারতে মারতে তুলে নিয়ে গিয়ে চোখ উপরে ফেলে, পা ভেঙে দেয়, মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে জখম করে।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান।
