ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, ভিকটিম উদ্ধারসহ গ্রেফতার ৫
ব্যবসার সুবাদে ফেব্রিক্স কিনতে নিয়মিত রাজধানীতে আসা যাওয়া ছিল মো. রাসেল খানের। এই ব্যবসার সুবাদে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আয়না ওরফে কাজলী নামের এক নারীর। ফেব্রিক্স কেনার কথা বলে রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় ভুক্তভোগীকে ডেকে নেন অভিযুক্ত আয়না। এরপর ফেব্রিক্স দেখানোর কথা বলে একটি বাসায় নিয়ে আটকে রেখে লুটে নেয়া হয় ভুক্তভোগীর কাছে থাকা নগদ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে থাকা সব টাকা।
পরে ভুক্তভোগী রাসেলের পরিবারের সদস্যদের ফোন করে ভয় দেখিয়ে দাবি করা হয় মোটা অংকের মুক্তিপণ। এমনই এক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতারসহ ভুক্তভোগী রাসেলকে উদ্ধার করেছে ডিএমপির মিরপুর মডেল থানা পুলিশ।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান। গতকাল শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার ইকবাল রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো: মো. আলম হোসেন (৪০), মো. মনির আহম্মেদ (৩৫), মো. কবির (৩৪), মো. মফিজুর হোসেন জনি মোল্লা (৪৪) ও মোছা. সুফিয়া (৩৫)।
মিরপুর মডেল থানা সূত্রের বরাত দিয়ে তালেবুর রহমান জানান, মো. রাসেল খান গাজীপুরের একজন ফেব্রিক্স ব্যবসায়ী। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ফেব্রিক্স ক্রয় করে বিক্রয় করতো। এই ফেব্রিক্স ব্যবসার সুবাদে আয়না ওরফে কাজলীর সাথে তার পরিচয় হয়। গত (৯ জানুয়ারি) কাজলী ফেব্রিক্স ক্রয় করার জন্য মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় রাসেল খানকে আসতে বলে। রাসেল সরল বিশ্বাসে পরদিন শুক্রবার দুপুরে মিরপুরের মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে বাটা শো-রুমের পাশে আসলে কাজলী ফেব্রিক্স দেখানোর কথা বলে তাকে মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার ইকবাল রোডের সুফিয়ার বাসায় যাওয়ার জন্য বলে।
রাসেল সেখানে পৌঁছলে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী জোরপূর্বক তাকে একটি রুমে আটকে রেখে তার কাছে থাকা নগদ ৩৫ হাজার টাকা, তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন ও কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। পরে তার মোবাইল ফোনে থাকা বিকাশ ও নগদের পিন কোড নিয়ে আরও ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর অপহরণকারীরা রাসেলের ফোন থেকে রাসেলের মা, বাবা, স্ত্রী ও বন্ধু এলাহীর কাছে ফোন করে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বলেও জানান তিনি।
থানা সূত্রের বরাতে তিনি আরও বলেন, ভিকটিম রাসেলের বন্ধু এলাহী অপহরণের বিষয়টি মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ দ্রুততম সময়ে ভিকটিমকে উদ্ধারসহ অপহরণকারীদের গ্রেফতারে তৎপর হয়। পুলিশ গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিম ও অপহরণকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে। পরে (১০ জানুয়ারি) রাত ৯টায় মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার ইকবাল রোডের সুফিয়ার বাসায় অভিযান পরিচালনা ভিকটিমকে উদ্ধার করে ও পাঁচ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে।
এসময় অপহরণকারীদের হেফাজত হতে একটি চাকু, নগদ ১৪ হাজার টাকা ও পাঁচটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে ভিকটিম রাসেলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত পাঁচজন সহ অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে ৪ জনের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মিরপুর মডেল থানার মামলায় গ্রেফতারকৃতদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপহরণের সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।