রংপুরে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে সংবাদ সম্মেলন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন অবিলম্বে বন্ধ এবং প্রতিমাসে ডিমান্ড চার্জ, সার্ভিস চার্জ ও মিটার ভাড়া আদায় বন্ধের দাবিতে রংপুর নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ( ৯ জানুয়ারি) সাড়ে বারোটায় রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ হলরুমে রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, দোকানপাট, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রিপেইড মিটার সংযোগ কার্যক্রম শুরু করেছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পূর্বে নেসকো কর্তৃপক্ষের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মতামত গ্রহণ কিংবা একটি গণশুনানির আয়োজন করা উচিত ছিল। কিন্তু জনমতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে নেসকো কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত জবরদস্তিমূলক কায়দায় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে গ্রাহকদের আগাম টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে হবে। যতক্ষণ প্রি পেইড কার্ডে টাকা থাকবে ততক্ষণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। যা সেবামূলক খাতের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ এর ৫৬ নং ধারামতে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে কোম্পানিকে ১৫ দিন পূর্বে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু এই প্রিপেইড মিটার কার্ডের রিচার্জকৃত টাকা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যা বিদ্যুৎ আইনের পরিপন্থি। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে একটি রিট পিটিশন চলমান রয়েছে। যা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বেই নেসকো কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের কাজ করছে।

বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের সিদ্ধান্ত হয়। তৎকালীন সময়ে এই প্রিপেইড মিটার বাণিজ্যের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু’র ভাই-বন্ধু নামে পরিচিত একটি চক্রের হাতে। সেই চক্রকে আরও প্রায় ১৫ লাখ মিটার সরবরাহের কাজ দিতে সক্রিয় সরকারের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দুটি কোম্পানি। এজন্য দরপত্রে এমন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে, যাতে ওই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান সুবিধা পায়। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় নেসকোর জন্য ৮ লাখ মিটার কিনতে গত জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন এই প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিগত ১৫ বছরে ১ লাভ ৬ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এমনকি বিদ্যুতের স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের নামে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ৫ শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
বিতর্কিত এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের মাধ্যমে গ্রাহকরা মিটার ভাড়া ও সারচার্জ বাবদ ৩০% আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার হবেন।

বিজ্ঞাপন

প্রিপেইড মিটারে প্রতিবার ১ হাজার টাকা রিচার্জে এজেন্ট কমিশন বাবদ ২০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমাসে গ্রাহকদের মিটার ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কতদিন এই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে তা অস্পষ্ট। গ্রাহকরা নিজেদের টাকায় ইতিপূর্বে এনালগ ও ডিজিটাল মিটার ক্রয় করলেও তার জন্য কোনো টাকা বিদ্যুৎ বিভাগ পরিশোধ করেনি। প্রতি ১ হাজার টাকা রিচার্জে গ্রাহকরা কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে? বাণিজ্যিক ও আবাসিক রেট কীভাবে নির্ধারিত হবে- এসব নিয়ে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই।

প্রিপেইড মিটারে নানা অসুবিধা নিয়ে তারা বলেন, প্রিপেইড মিটারে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে ২০০ টাকা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের জন্য ৫০ টাকা হারে গ্রাহকদের সুদ পরিশোধ করতে হবে। প্রিপেইড মিটার কোন কারণে লক হয়ে গেলে লক খোলার জন্য ৬০০ টাকা জমা দিতে হবে। বিদ্যুতের ওভার লোডের কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ প্রবাহ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও এই প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ করার সাথে সাথে টাকা কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকলে রিচার্জ করা যাবে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্পগুলো মওসুমের শুরুতে কৃষকরা বাকিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ফসল তুলে বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করে। বর্তমানে আর এই প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে সেই সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করলে বিদ্যুৎ বিভাগের হাজার হাজার কর্মচারীকে পেশা হারিয়ে পথে বসতে হবে।

এই প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে কোন কারণে সার্ভার ডাউন হলে উক্ত সার্ভারের আওতাধীন প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই সার্ভার সচল না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহকরা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবে।

সর্বোপরি এই প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের নতুন করে হয়রানি ও দুর্ভোগে ফেলবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়-বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছিল। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বেসরকারি কোম্পানিগুলো গত ১০ বছরে ৫১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। যার খেসারত দিতে হয়েছে সাধারণ জনগণকে।

সারাদেশের সকল মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবার আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অথচ সেটির পরিবর্তে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে

জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন অবিলম্বে বন্ধ,
প্রতিমাসে ডিমান্ড চার্জ, সার্ভিস চার্জ ও মিটার ভাড়া আদায় বন্ধ, গণশুনানী ব্যতীত গ্রাহকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা হতে বিরত থাকা,

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত, বিদ্যুৎ খাতের বিগত সরকারের আমলের অনিয়ম-দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ, ঘুষ-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দুর করে বিদ্যুৎ বিভাগকে সত্যিকার অর্থেই একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন তারা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নীপেন্দ্র নাথ রায়,অ্যাডভোকেট খায়রুল ইসলাম বাপ্পি,সাংস্কৃতিক কর্মী নাসির সুমন,শ্রমিক নেতা রেদোয়ান ফেরদৌস,সবুজ রায়,সুভাষ রায়,মাহফুজ হোসেন প্রমুখ।