দাপুটে মোহাম্মদ আলীর বাঁশের খাঁচায় বন্দী জীবন

  • মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বগুড়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

১০ বিঘা কৃষি জমির মালিক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। গ্রামে রয়েছে টিনশেড বাড়ি। একসময় তিনি নিজেই গ্রামের বিভিন্ন ঘটনার বিচার করতেন। স্ত্রী এবং চার ছেলে নিয়ে তার সংসার। আড়াই বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ছেলেরা বগুড়া এবং ঢাকায় চিকিৎসা করান। কিন্তু স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি তিনি। কর্মব্যস্ততার কারণে তিন ছেলে বাড়িতে থাকেন না। এক ছেলে বাড়িতে থাকলেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকেন কর্মস্থলে। আর এসব কারণেই মানসিক ভারসাম্যহীন বাবাকে বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় বাঁশের তৈরি খাঁচায় বন্দি করে রাখেন। ছেলেরা জানান, বাবাকে ছেড়ে দিয়ে রাখলে বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন অথবা বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যান।

মোহাম্মদ আলির বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামে।

বিজ্ঞাপন

গ্রামবাসী জানান,একসময় কৃষি কাজের পাশাপাশি সার ও খৈল এর দোকান করতেন মহাস্থান বন্দরে। চার ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বড় ছেলে মাসুম বিল্লাহ মেডিকেল সহকারী পাশ করে শিবগঞ্জ পৌর শহরে নিজস্ব ক্লিনিক পরিচালনা করেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেখানেই বসবাস করেন তিনি। দ্বিতীয় ছেলে মাসুদ রানা একটি বেসরকারি চাকরির সুবাদে বসবাস করেন শিবগঞ্জ পৌর শহরে। তৃতীয় ছেলে মামুন বাড়িতে থাকলেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাকরি করেন বড় ভাই এর ক্লিনিকে।ছোট ছেলে চাকরির সুবাদে ঢাকায় বসবাস করে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ'র বৃদ্ধা স্ত্রী নুরজাহান বেগম এক ছেলের বউকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করেন।

আড়াই বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ' দ্বিতীয় ছেলে মাসুদ রানা তার বাবাকে বাঁশের খাঁচায় থেকে বাহিরে বের করছেন। তিনি বলেন, বাবাকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নাই। কর্মব্যস্ততার কারণে বাড়িতে নিয়মিত আসতে পারি না। মাঝে মধ্যে বিকেলে এসে বাবাকে খাঁচা থেকে বের করে বাহিরে হাঁটতে নিয়ে যাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সাধ্যমতো বগুড়া এবং ঢাকায় চিকিৎসা করানোর পরেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি বাবা। চিকিৎসক বলেছেন মস্তিষ্কে সমস্যা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে রাখা যায় না। চার ভাই কেউ না থাকায় গত ৮ মাস আগে এভাবে বাঁশের তৈরি খাঁচায় আটকে রাখা হয়।

দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ইনছার আলী বলেন, সকালে এই বৃদ্ধ মানুষটিকে বাড়ি থেকে বের করে এনে বাঁশের তৈরি খাঁচায় বন্দী করে রাখেন পরিবারের লোকজন। এখানেই থাকেন সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে যায় খাঁচার মধ্যেই। রাতে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবেই গত ৮-৯ মাস যাবৎ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে দেখছেন গ্রামের লোকজন।
লোকজন দেখলে বিড়বিড় করে অস্পষ্ট ভাষায় কথা বলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। হাত দিয়ে ইশারা করে কাছে ডাকেন। কাছে গেলে তাকে বন্দী দশা থেকে বের করতে বলেন ইশারা ইঙ্গিতে। কিন্তু গ্রামের লোকজন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ'র ইশারা ইঙ্গিতে গুরুত্ব দেন না। তাদের মতে পাগল মানুষকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে কে দায়িত্ব নিবে।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ'র বড় ছেলে মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি ক্লিনিক পরিচালনা করি। সেকারণে বাড়িতে থাকতে পারি না। বাবাকে সুস্থ করতে চিকিৎসা করিয়েছি সাধ্যমতো। তিনি বলেন আমি নিজেই চিকিৎসা সহকারী। আমি বাবার ভাল মন্দ বুঝি।

শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। তিনি গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একজন। তার ছেলেরাও শিক্ষিত। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে বাঁশের খাঁচায় আটকে রাখার বিষয়টি আমার জানা নাই। ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি খোঁজখবর নিয়ে তাকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিব।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন,ঘটনা আমার জানা নাই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।