বগুড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিস ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে আগুনে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাত সোয়া ৮ টার দিকে জেলা প্রশাসক ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে নিচতলায় রেকর্ড রুম সংলগ্ন বারান্দায় পরিত্যক্ত মালামালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেজবাউল করিম এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভবনের নিচতলায় বারান্দায় পরিত্যাক্ত পুরাতন কাগজপত্র রাখা হয়েছে। রাত সোয়া ৮টার দিকে সেখানে ধোঁয়া দেখতে পান দায়িত্বরত নৈশ প্রহরী। সঙ্গে সঙ্গে অফিসের কর্মচারীরা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন ধারণা করা হচ্ছে ডিসি অফিস চত্বরে হাঁটতে আসা লোকজনদের মধ্যে কেউ সিগারেটে শেষাংশ ছুড়ে ফেলে দিলে সেখান থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়। এঘটনায় রবিবার জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি গঠন করে দিবেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আগুন লাগার ঘটনা অসাবধানত না কি পরিকল্পিত সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তদন্ত কমিটি কাজ করবেন।
উল্লেখ্য বগুড়া জেলা প্রশাসক অফিস চত্বরে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বহিরাগত অসংখ্য লোকজন হাঁটতে আসেন। বহিরাগত লোকজনের আনাগোনাকে কেন্দ্র করে ডিসি অফিস চত্বরে এর আগেও ছুরিকাঘাতে ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়াও ভবনের নিচতলায় গ্রীল কেটে চুরির চেষ্টায় করা হয়েছিল সন্ধ্যা রাতে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অস্ত্রের মুখে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে ১৪টি আমগাছ কেটেছে দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্থ বাগান মালিক সৈবুর রহমান। এনিয়ে শিবগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
গত শনিবার (৪ জানুয়ারী) দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার মনকষা ইউনিয়নের ঠুঠাপাড়া গ্রামের একটি আমবাগানে এই গাছ কাটার ঘটনা ঘটে। এতে ১৪টি গাছের একাংশ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা।
জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গোয়ালটোলা গ্রামের মৃত সুলতান আহমেদের ছেলে সৈবুর রহমানের স্ত্রী রাজিয়া বেগম পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে রয়েছে আমবাগানটি। গত শনিবার (০৪ জানুয়ারী) পাশের জমির মালিক মনাকষা ইউনিয়নের ঠুঠাপাড়া গ্রামের মৃত ইলিয়াস আলীর ছেলে হাদিকুল ইসলাম, তার ভাই মনিরুল ইসলাম, হাদিকুল ইসলামের ছেলে সাকিব আলীসহ আরও ৩-৪ জন ব্যক্তি হঠাৎ করেই গাছের একাংশ কেটে ফেলে।
বাদি সৈবুর রহমান বলেন, গাছ কাটার সময় স্ত্রীর ভাই এনামুল হক গাছ কাটার খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে গাছ কাটতে বাধা দেয়। এসময় হাদিকুল, মনিরুল ও সাকিব আলীসহ তাদের লোকজনের কাছে থাকা হাসুয়া, দা, কুড়াল, করাতসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এসময় তারা আমার স্ত্রীর ভাইসহ আমাদের লোকজনকে আগামীতে বাধা দিতে আসলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
জমির মালিক রাজিয়া বেগম বলেন, আমাদের জমিতে আমাদের বাগান। কিন্তু কোন কারন ছাড়াই আমাদের গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। গাছ কাটার পরেও আমাদেরকে নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। এনিয়ে আমাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কোন ধরনের কারন ছাড়াই হঠাৎ করে এভাবে ১৪টি আমগাছ কেটে ফেলার সুষ্ঠ বিচার চাই।
এবিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া জানান, গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি।
চারদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছেন ভলভো ব্যাটারীর সিসা কারখানায় রোটারি ড্রাম বিস্ফোরণে দগ্ধ শ্রমিক ফারুক হোসেন (৩৪)।
ফরিদপুরের মধুখালীতে পান্না গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ভলবো ব্যাটারির সিসা কারখানায় কাজ করতেন ওই উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের ফারুক।
ফরিদপুরের মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম নুরুজ্জামান ফারুকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার পরিক্ষীতপুর এলাকায় আলতু খান জুট মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত সিসা কারখানায় ভয়াবহ রোটারি ড্রাম বিস্ফোরণ ঘটে। এতে উপজেলার মেছোরদিয়া গ্রামের মো: শাহাবুদ্দিন (৩৫), বোয়ালিয়া গ্রামের ফারুক (৩৪) এবং চাঁনপুর গ্রামের বিপ্লব (৩৪) মারাত্মক আহত হন।
আহত ৩ শ্রমিককে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। তার মধ্যে আজ ফারুকের মৃত্যু হলো। হাসপাতালের মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন শাহাবুদ্দিন ও বিপ্লব।
সে সময় ফরিদপুরের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন বিস্ফোরনে দুজনে শরীরের ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ পান্না গ্রুপের চেয়ারম্যান লোকমান খান প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে জুট মিলের মধ্যে সিসা কারখানা চালিয়ে আসছিল। গত এক যুগে সিসা পোড়ানোর ফলে গ্যাসে আশেপাশের বাসিন্দারা শারীরিকভাবে ক্ষতি ও মাঠের ফসলি ক্ষতি হলেও কারো কাছে অভিযোগ করেও পাত্তা পাননি।
কারখানা অভ্যন্তরে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও আলতু খান জুটমিল অভ্যন্তরে কোন সংবাদকর্মী প্রবেশ করতে পারেনি।
পান্না গ্রুপের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেনের পিএস মোঃ মনসুর হেলাল জানান, বাংলাদেশে সিসা রিসাইকেলিং এর মাত্র তিনটি বৈধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে আমাদের টা অন্যতম।
স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা ও বানোয়াট। কারখানার ফলে আশেপাশের কারো কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেসব নেতা কর্মীরা আত্মগোপনে গেলেও উল্টো এক চিত্র দেখা গেল মোহাম্মদপুর থানায়। একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়েও মোহাম্মদপুর থানার ভেতরে বসে সালিশ করছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা।
জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোড ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে একাধিক হত্যা মামলার আসামী মোহাম্মদপুর থানায় এসে পুলিশের সাথে বসে সালিশ করছেন। এ সময় পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ হয়ে সালিশের অন্য পক্ষকে শাসাতে দেখা যায়।
সোমবার (৬ জানুয়ারী) রাত ১০টায় ডিএমপি মোহাম্মদপুর থানায় এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজ বার্তা২৪.কমের হাতে এসেছে।
থানায় বসে সালিশ করা ওই আওয়ামী লীগ নেতা হলেন- মোহাম্মদপুর বাবর রোড ইউনিট আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হোসেন।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের বাবর রোড আওয়ামীলীগের ইউনিট সভাপতি আবুল হোসেন এর ঢাকা উদ্যান বাসায় ভাড়া থাকেন হুমায়ন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থা থাকায় গত দুই মাস বাসা ভাড়া দিতে পারেননি। এ বাসা ভাড়া আদায় করার জন্য আবুল হোসেন থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিবাদীদের পরিবারকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের এএসআই আলমগীর হোসেন ডেকে তাদের নানা রকম হুমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিবাদীদের আজকের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে থানায় হাজতে আটলে রাখবেন বলেও হুমকি দেন। এ সময় মোহাম্মদপুর থানায় উপ-পরিদর্শকদের (এসআই) বসার বড় রুমে পুলিশের সাথে হত্যা মামলার আসামী আওয়ামী লীগ নেতাকে বসে থাকতে দেখা যায়। দীর্ঘ দুই ঘন্টার দেন দরবার শেষে পুলিশ বিবাদী থেকে দ্রুত দুই কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করার শর্তে একটি লিখিত মুচলেকা রাখে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী ইফতেখারকে কয়েক দফায় ফোন করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান জানান, ওই আওয়ামী লীগ নেতা এসে জামায়াতের নেতা পরিচয় দিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলো। পরে বিষয়টি আমাদের এক অফিসার বিষয়টি দেখছিলো। আজকে শুনলাম তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনীর জনপদ। তারমধ্যে ১৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে যায় অতীতের সব ইতিহাস। ভয়াবহ এ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ জন। এছাড়াও বন্যায় সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মোটরযান, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় প্রত্যেক খাতেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে শতশত কোটি টাকা। বন্যায় জেলায় সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছিল শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে।
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসন সূত্র ইতোপূর্বে জানায়, বন্যায় নিহতদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ, ৮ জন নারী ও ৪ জন শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় মিলেছে। বাকি ৯ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহত ২৯ জনের মধ্যে ফেনী সদরের ৮ জন, দাগনভূঞায় ৩ জন, ফুলগাজীতে ৭ জন, সোনাগাজীতে ৬ জন, ছাগলনাইয়ায় ৩ জন এবং পরশুরামের ২ জন রয়েছেন।
১৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এ বন্যায় গ্রাম ছাড়িয়ে ডুবেছে জেলা শহরও। পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। বন্যার্ত মানুষদের উদ্ধার ও সহায়তায় এগিয়ে আসেন সারা দেশের হাজারো মানুষ। এছাড়াও ভয়াবহ এ বন্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ডুবে দেশব্যাপী সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
বন্যায় জেলার অন্তত ১৭০০ পরিবার তাদের বসতঘরসহ সর্বস্ব হারিয়েছে। বন্যার পর থেকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে।তবে, সরকারি পুনর্বাসনে ধীরগতির কারণে অনেকে এখনো মানবেতর দিনযাপন করছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় ফেনীতে ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর, ২৫০টি আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণ ধ্বসে যায়। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর এবং ২ হাজার ৬৩২টি আধাপাকা ঘরের আংশিক ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ৬৪ হাজার ৪১৫টি ঘরবাড়িতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় প্রাণিসম্পদ খাতে এখন পর্যন্ত ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৪০৩ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপিত হয়। জেলার ছয় উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩৮ হাজার ৭৩১টি গরু, ৩৫৯টি মহিষ, ১৫ হাজার ৫৮৮টি ছাগল ও ৭৩৬টি ভেড়া মারা গেছে। এছাড়াও ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১০টি মুরগি ও এক লাখ ৮৯ হাজার ৪৭২টি হাঁস মারা গেছে। মৃত পশুপাখির মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ টাকা। একই সূত্রে জানা যায়, জেলায় এক হাজার ৯৯২টি গবাদিপশুর খামারের ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা এবং এক হাজার ৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারের ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ৩ হাজার ৯৫০ টন পশুপাখির দানাদার খাবার বিনষ্ট হয়েছে যার বাজারমূল্য ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এ বন্যায় মৎস্য খাতে রেণু, পোনা, বড় মাছ ও পুকুরের অবকাঠামো মিলে ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ইতোমধ্যে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যায় জেলার ৩০ হাজার ৩৫২ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মোট ফসলি জমির ৭৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তারমধ্যে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ২৬ হাজার হেক্টর আমন, ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর আউশ, আবাদকৃত ৫২৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির পুরো অংশ, ৬৯ হেক্টর ফলবাগান, ৭ হেক্টর আদা, ১৬ হেক্টর হলুদ এবং ১৬ হেক্টর আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আকস্মিক এ বন্যার জন্য স্থানীয় মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতকে দায়ী করছেন। যদিও ভারত সীমান্তবর্তী ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা ছিল প্রতি বছরের নিয়মিত ঘটনা। এর সঙ্গে লড়াই করে এসব এলাকার মানুষেরা টিকে থাকলেও, এবারের বন্যা তাদের সব ধারণা পাল্টে দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারত সরকার কোনো ধরনের সতর্কবার্তা না দিয়েই ফেনীর পাশের রাজ্য ত্রিপুরার ধলাই জেলায় গোমতী নদীর ওপরে থাকা ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দিয়েছে। ফলে অস্বাভাবিক এ বন্যা দেখা দিয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বন্যায় ফেনীর ৯০ শতাংশ মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে আগে কখনো দেখা যায়নি। এ বন্যায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ডুবে গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি, দুর্গত জনগোষ্ঠীকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বন্যার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ফেনীতে আসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা। গত বছরের ২৪ আগস্ট ফেনীতে আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম।
তখন তিনি বলেন, বর্তমানে আগের মতো কোন ভাই বা কোন দল নেই, যেখানে তার সড়ক অথবা বাড়ি আগে কাজ করে দিতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রয়োজন বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুর্গতদের জন্য কাজ করতে হবে। ২৭ আগস্ট বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
২১ সেপ্টেম্বর বন্যার ক্ষতি পরিদর্শনে ফেনী আসেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। এসময় উপদেষ্টা বলেন, এখানে যেহেতু প্রতিবছর বন্যা হয় সেজন্য স্থায়ী একটি সমাধান প্রয়োজন। ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাঁধগুলো কিভাবে সংস্কার করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। এখন আমরা পুনর্বাসন কার্যক্রমে জোর দিচ্ছি।
তার পরেরদিন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর একাধিক এলাকা পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পরশুরামের বল্লামুখা বাঁধ পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কাছে জানতে এসেছি তারা কী সমাধান চান। স্থানীয় জনসাধারণ বলেছে প্রতিবেশী দেশ বাঁধ কেটে দেওয়ায় তারা বন্যায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এজন্য আমাদের মানুষের কথা, দুর্ভোগ ও প্রত্যাশা বুঝতে, সেই অনুযায়ী উজানের দেশের সঙ্গে কথা বলতেই এখানে আসা।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডেল টিন ও নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। বিপরীতে ৪০০ বান্ডেল টিন ও নগদ ১২ লাখ টাকা বরাদ্ধ এসেছে। যা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৭১৮টি ঘরের মধ্য থেকে পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় সেনাবাহিনীর মাধ্যমে জেলায় ১১০টি পাকাঘর করে দেওয়া হচ্ছে। তারমধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৩৫টি, ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ২০টি করে, দাগনভূঞায় ১০টি ও সোনাগাজী উপজেলায় ৫টি ঘর করা হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ঘরগুলোর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।