কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন শুরু, লক্ষ্যমাত্রা ২৬ লাখ মেট্রিক টন

  • আবদু রশিদ মানিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন শুরু,/ছবি: বার্তা২৪.কম

কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন শুরু,/ছবি: বার্তা২৪.কম

কক্সবাজারের উৎপাদিত লবন দিয়ে চলে সারাদেশ। বলতে গেলে ৯০ শতাংশ লবন উৎপাদন হয় এই জেলায়। সাদা সোনা খ্যাত লবণ উৎপাদনের আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজারের লবণ চাষীরা। জেলার কিছু কিছু জায়গায় ইতোমধ্যে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে নভেম্বরে মৌসুমের শেষে ঝড় বা বৃষ্টির আশঙ্কাটা শেষ হলেই পুরোদমে শুরু হবে লবণ উৎপাদন। কক্সবাজার বিসিকও বলছে একই কথা। ১০-১৫ দিন পরে পুরোদমে লবণ উৎপাদন শুরু হবে জেলাজুড়ে।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) মহেশখালীর কিছু অংশে আগাম লবণ মাঠে কাজ করতে দেখা মিলেছে চাষিদের। বিশেষ করে মহেশখালী, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া, হোয়ানক, কুতুবজুম, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর লবণ উৎপাদনের হাব। সেখানকার কিছু জায়গায় লবণ উৎপাদন হচ্ছে। একই অবস্থা কুতুবদিয়ায়ও। সেখানেও অগ্রিম লবণ চাষ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের খুরুশকুল, ভারুয়াখালী ও চৌফলদন্ডীতেও লবণ উৎপাদনের প্রস্তুতি দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

চলতি মৌসুমে কুতুবদিয়ায় ৪ নভেম্বর প্রথম লবণ উৎপাদন শুরু হয়। স্থানীয় চাষিদের মতে, কুতুবদিয়ায় ৭০ শতাংশ, পেকুয়ায় ৫০ শতাংশ, টেকনাফে ১০ শতাংশ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৪০ শতাংশ মাঠ প্রস্তুত হয়েছে। বাকি উপজেলার চাষিরাও মাঠে নামতে শুরু করেছেন।

কক্সবাজারের সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের উত্তরপাড়ায় শাহাদাত তার লবণের ক্ষেত তৈরি করছিলেন। একমাস পর শুরু হতে যাওয়া চলতি মৌসুমের শুরুতেই কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন তিনি। বার্তা-২৪.কম-কে তিনি বলেন, "যেহেতু আমার জমি বেশি এবং মাছ চাষের কোন বিকল্প নেইl আমি নিজেকে অলস রাখতে পারি না। তাই আমাকে মাঠে এসে লবণ চাষের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু প্রাথমিক আয় আমার বোঝা লাঘব করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

লবণ চাষি জমির উদ্দিন এ মৌসুমে ৪ একর জমি লবণ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করেছেন। মাঠে নিরলস কাজ করছেন চাষীরা। লবণের বেড সমান করছে, পানি দিচ্ছে আর বিছানো কাগজে ফোটা 'সাদা সোনা' বেডের অদূরেই লবণ জমানোর গর্তে ফেলছে। চাষিরা বলছেন, এখনো লবণের দাম কম, তবে আমদানি বন্ধ রয়েছে। লবণ চড়া দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। যদিও চলতি নভেম্বর গত বছরের তুলনায় লবণের দাম অনেক কম বলে জানিয়েছেন। মৌসুম ভালো হলে এবং লবণের ন্যায্য দাম পাবে বলে আশাবাদী তারা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের শেষের দিক থেকে মূলত লবণের মৌসুম শুরু। এসময়ে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে দেড় লাখের অধিক মেট্রিক টন বেশি ধরা হয়েছে।

লবণের লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, "গত বছরের তুলনায় এবছর লক্ষ্যমাত্রা আরো বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।"

তবে এখনো পর্যন্ত পুরোদমে চাষিরা লবণ চাষ শুরু না করায় কত হাজার কৃষক রয়েছে তা নিশ্চিত করেনি বিসিক। পুরোদমে চাষাবাদ শুরু হলে জরিপ শেষে তা বলা যাবে বলে জানান।

গত বছরের তথ্য মতে, ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন, যা বাণিজ্যিক লবণ উৎপাদন শুরুর পরবর্তী ৬২ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এবার তাপমাত্রা বেশি এবং ঝড়–বৃষ্টি না হলে লবণ উৎপাদন ২৬ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা নির্ধারণ করা হয় ২৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।