ফেনীতে বন্যায় এলজিইডির ক্ষতি ১০০ কোটি, সওজের ৪০

  বন্যা পরিস্থিতি
  • মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ফেনীর জনপদ। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কসহ জেলার ৬ উপজেলার বেশিরভাগ সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে বন্ধ ছিল সড়ক যোগাযোগ। পানির স্রোতে ভেঙে যাওয়াতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ সড়ক।

জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর আওতাধীন সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ১৪০ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে এলজিইডির ক্ষতি আনুমানিক ৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও সওজের ক্ষতি আনুমানিক ৪০ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। শুধু এলজিইডির আওতাধীন জেলার ৪ হাজার ৩৫৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে দুই দফতর বার্তা২৪.কম-কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, বন্যায় জেলার ১৯টি সড়কের মধ্যে প্রায় সবগুলোই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আনুমানিক ৪০ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় ৪ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সড়কগুলো পানিতে নিমজ্জিত থাকায় বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) দেওয়া তথ্যমতে, জেলার ছয় উপজেলায় ৪ হাজার ৩৫৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আনুমানিক ৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফার বন্যার কবলে পড়ে ভাঙাচোরা সড়কগুলোতে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একদিকে বন্যায় ঘরবাড়ি বিপর্যস্ত অন্যদিকে সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। এমন অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন পার করছে ফেনীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। জেলার কয়েকটি স্থানে এখনো সড়ক নিমজ্জিত রয়েছে বন্যার পানিতে।

ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের একটি সড়কের ১৭টি স্থানেই ভেঙে গেছে। ফলে এ জনপদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার যোগাযোগ। এতে ভোগান্তিতে আছেন স্থানীয়রা।

ফুলগাজীর দরবারপুরের আব্দুল আওয়াল বাবুল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বানের পানির তীব্র স্রোতে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে। পাশে মুহুরী নদী হওয়াতে পানির তীব্রতা অনেক বেশি ছিল। ফলে বাড়িঘর রাস্তাঘাট সব পানিতে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নের প্রধান সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ভেঙে গেছে। ত্রাণ নিয়ে গাড়ি আসলেও ভেতরে যেতে পারছে না। বাঁশের সাঁকো বানিয়ে মানুষ চলাচল করছে।

সখিনা বেগম নামে একজন বলেন, দীর্ঘ অনেক পথ হেঁটে হেঁটে যেতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে কোনো কিছু নিয়ে আসার জন্যও বাজারে যেতে পারছি না। নদীর পানি কমেছে, তবে আমাদের দুর্দশা কবে কাটবে তার কোনো ঠিক নেই। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অবস্থা নেই। দ্রুত এসব সড়ক ঠিক করার দাবি জানান তিনি।

দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে পরশুরামের বাসিন্দা আব্দুল আওয়াল বলেন, মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফার বন্যায় পরশুরাম-সুবার বাজার সড়কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রথম দেখায় এখানে যে একটি সড়ক ছিল তাও বোঝার উপায় নেই। হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়কটি দ্রুত সংস্কার না করলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হবে আমাদের।

ছাগলনাইয়া উপজেলার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়কের বেহাল দশা। কিছু সড়কে হাঁটার উপক্রমও নেই।জরুরি ভিত্তিতে এসব সড়ক সংস্কার প্রয়োজন।

ছাগলনাইয়া ঘোপাল ইউনিয়নের নিজকুঞ্জরা এলাকার বাসিন্দা সায়েম উল্ল্যাহ চৌধুরী জানান, বাড়ির সামনের রাস্তাটির কাজ চলমান ছিল। সরকার পতনের পর কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। অর্ধেক পিচ হয়েছে বাকিটাতে ইট কংক্রিট দেয়া। বন্যার পানিতে সব কংক্রিট উঠে গেছে। এখন পায়ে হাঁটার মতো অবস্থাও নেই। রাস্তার কাজটি দ্রুত শেষ করার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে ফেনী সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, আমাদের আওতাধীন কিছু সড়কে এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। সরেজমিনে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ নিরূপণ করা হবে। তবে এখন প্রাথমিক পর্যায়ে আনুমানিক ৪০ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, বন্যার ভয়াবহতা সব জায়গায় আঘাত করলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নীচু এলাকাগুলো। বন্যায় জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক পানিতে নিমজ্জিত ছিল।

তিনি বলেন, এলজিইডির প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের বেশি সড়কের বিভিন্ন অংশে ভেঙে গেছে। প্রায় ৪০টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছি। দ্রুতই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।