বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েক ধরনের নতুন খাদ্যাভ্যাসের সাথে পরিচিতি ঘটেছে সকলের। স্বাস্থ্যকর ও সুগঠিত বিভিন্ন ধরনের খাদ্যাভ্যাস সহজেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে জনসাধারণের কাছ থেকে। কিছু খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, তুলনামূলক উপকারী খাদ্যাভ্যাসের দিকেই ঝুঁকেছে সকলে।
সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরেও কোন খাদ্যাভ্যাসগুলো জনপ্রিয়তা পাবে সেটা জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক নিউট্রিশনিস্ট অ্যামি গরিন।
উদ্ভিজভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস
অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় ২০২০ সালে উদ্ভিজভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস আরও বেশি জনপ্রিয়তা পাবে তার স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য। কারণ গবেষকেরা দীর্ঘদিনের পরীক্ষা ও তার ফলাফল থেকে দেখেছেন, উদ্ভিজভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার ফলে ডায়াবেটিস, সাধারণ হৃদরোগের মতো বিভিন্ন ধরনের ক্রনিক ডিজিজ থেকে শুরু করে বড় ধরনের রোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় প্রায় ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত। উদ্ভিজভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার অর্থ হলো ভেজিটেরিয়ান (নিরামিষাশী) অথবা ভেগান হয়ে যাওয়া।
গ্লুটেন ফ্রি খাদ্যাভ্যাস
বিগত দুই-তিন বছরের মাঝে গ্লুটেন ফ্রি খাদ্যাভ্যাস বেশ অনেকখানি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষত যাদের গ্লুটেনযুক্ত খাবারে সমস্যা রয়েছে, তারা এই খাদ্যাভ্যাসে বেশি অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ময়দার বিকল্প ও গ্লুটেনমুখ খাদ্য উপাদান তথা- ছোলা, কাঠবাদাম, কাজুবাদামের তৈরি ময়দাতে অভ্যস্ততা গড়ে উঠছে সকলের। অনেক দেশেই গ্লুটেন ফ্রি উপাদানের পাস্তা, নুডলস ইত্যাদি খাবারের চল রয়েছে।
পাকস্থলীর জন্য উপকারী খাবারে খাদ্যাভ্যাস
এই খাদ্যাভ্যাসটি মূলত পাকস্থলীকে সুস্থ রাখার জন্য এবং মাইক্রোবিয়ামের সুস্থতায় জোর দিয়ে গড়ে উঠেছে। প্রিবায়োটিক্স ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদানের তৈরি স্মুদি ও গ্রানোলা বার প্রাধান্য পাবে এই খাদ্যাভ্যাসে। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা যাবে প্লেইন টকদই, যা সকল খাবারের সাথেই চলনসই।
বাদাম ও বীজযুক্ত খাবারে প্রাধান্য
বাদাম সবসময়ই স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই বাদামের সাথে বিভিন্ন ধরনের বীজও যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান হিসেবে। সকাল-বিকালের নাশতার পাশপাশি স্মুদি, ওটস, সালাদ, সবজি, পাউরুটি, কেক প্রভৃতিতে আঁশযুক্ত বীজের ব্যবহার সেই খাবারটি ভীষণ স্বাস্থ্যকর করে তোলে। এ কারণে চিয়া সিডস, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, সুর্যমুখী বীজসহ নানান ধরনের বীজের চাহিদা বেড়েছে গত বছর থেকে।
স্বাস্থ্যকর কিটো-ফ্রেন্ডলি খাবার
কিটো ডায়েট নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কার্ববিহীন ও প্রোটিনযুক্ত খাবারে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার এই ধরণটি দ্রুত ওজন কমাতে সক্ষম বলে সহজেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে এক্ষেত্রে পুষ্টিবিদেরা বলছে, বেশ কিছু স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও অধিক সোডিয়ামযুক্ত খাবারও কিটো ফ্রেন্ডলি হতে পারে, যা স্বাস্থ্যের উপকারের পরিবর্তে ক্ষতিই করবে বেশী। এ কারণে কিটো ডায়েটের অ্যাভোকাডো, নাট বাটার, বাদাম ও বীজের সমন্বয় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া নো-কার্বের পরিবর্তে লো-কার্ব সংযুক্ত করে কিটো ডায়েটকে স্বাস্থ্যকর করার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা।
উদ্ভিজভিত্তিক দুগ্ধজাত খাবার
বলা হচ্ছে ২০২০ সালে উদ্ভিজভিত্তিক দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারগুলোর প্রচলন বৃদ্ধি পাবে বিগত বছরের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট এর ক্ষেত্রে প্ল্যান্ট বেসড মিল্ক খুবই জনপ্রিয়। ওটস মিল্ক, আমন্ড মিল্কসহ অন্যান্য বাদাম থেকে তৈরি দুধগুলো ভেগানরাও পান করতে পারবে অবলীলায়।