টকদই কেন খাবেন নিয়মিত?

  • ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সুস্বাস্থ্যের জন্য টকদই খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। ছবি: সংগৃহীত

সুস্বাস্থ্যের জন্য টকদই খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলায় দেখতাম মা-ফুফুরা বিভিন্ন ধরণের মাসিক পত্রিকা পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন। মাসের শুরুতে নতুন পত্রিকা হাতে আসা মানেই আগামী কয়েকদিনের জন্য বিবিধ বিষয়ে পড়ার খোরাক। মা ও ফুফুর আগ্রহের ছিটেফোঁটা নিজের মাঝেও চলে আসতো স্বাভাবিক ভাবেই। যে কারণে ছোট থাকতেই পত্রিকা নাড়াচাড়ার অভ্যাসটা গড়ে উঠেছিল। সেই সময়ে দেখতাম বিভিন্ন নামজাদা মডেলদের খাদ্যাভাসের বিবরণ তুলে ধরা হতো বিশদভাবে। খেয়াল করে দেখতাম, প্রায় সবারই প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে টকদই থাকত। ছোট এক বাটি টকদই থাকা পানি পানের মতোই বাঞ্ছনীয় যেন!

তখনও টকদই খাওয়ার প্রচলন খুব একটা দেখা যেত না। একইসাথে জানা ছিল না টকদই খাওয়া কতোটা গুরুত্বপূর্ণ! সময়ের সাথে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ জানতে পারলেন নিয়মিত টকদই খাওয়ার অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য উপকারিতা। যার ফলে এখন নিয়মিত টকদই খাওয়ার চেষ্টা করেন অনেকেই।

বিজ্ঞাপন

তবে ব্যতিক্রম আছে এখানেও। টকদই খেতে পছন্দ করেন না বিধায় অনেকেই এড়িয়ে যান স্বাস্থ্যকর এই খাবারটি। দারুন এই খাবারটির দুর্দান্ত স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো জানা থাকলে নিশ্চিতভাবে তারাও উদ্যত হবেন টকদই খাওয়ার জন্য।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/02/1535877653769.jpg

পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে

যেহেতু ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে দুধ থেকে টকদই তৈরি করা হয়, এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ল্যাকটোব্যাসিলি (Lactobacilli) ব্যাকটেরিয়া। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীর জন্য উপকারী। এমনকি এই ব্যাকটেরিয়াকে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াও বলা হয়। কারণ ল্যাকটোব্যাসিলি পাকস্থলিস্থ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে সরিয়ে দেয়। যার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যায় এবং শরীরে ভিটামিন-কে তৈরি হয়।   

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

ভিটামিন-কে তৈরির পাশাপাশি ল্যাকটোব্যাসিলি মানবদেহে বি ও টি লিম্ফোসাইটসের পরিমাণ বৃদ্ধিতে কাজ করে। এই লিম্ফোসাইটস শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখে

বিভিন্ন ধরণের ফল ও সবজী সাথে এখন থেকে টকদই রাখুন। নিয়মিত টকদই খাওয়া হলো সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত উপায়, যা ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। কেন টকদই ত্বকের জন্য উপকারী? কারণ টকদইতে থাকে ভিটামিন-ই, জিংক, ফসফরাস ও অন্যান্য মাইক্রো-মিনারেলস। যা ত্বকে ব্রণের প্রাদুর্ভাব ও বলীরেখা দেখা দেওয়ার প্রক্রিয়া শ্লথ করে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

হৃদরোগ প্রতিরোধ করে

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/02/1535877609184.jpg

নিয়মিত টকদই খাওয়ার ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে আর্টারিতে ব্লক হতে পারে না। একইসাথে উচ্চরক্ত চাপ ও হাইপারটেনশন কমায় টকদই। যে কারণে হৃদযন্ত্র দীর্ঘদিন পর্যন্ত সুস্থ থাকে।

সারাদিনের পুষ্টি যোগান

ভিটামিন-কে, ই এর পাশাপাশি টকদইতে আরো থাকে ভিটামিন-বি১২, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক। যার ফলে দিনের শুরুতে এক বাটি টকদই খাওয়ার ফলে শরীর তার প্রয়োজনীয় মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট তথা পুষ্টি পেয়ে যায়।

ওজন কমায় টকদই

টকদই রক্তের কর্টিসলের মাত্রা কমায়। এই কর্টিসল হলো এক প্রকারের হরমোন, যা তলপেট ও হৃদযন্ত্রে ফ্যাট জমায়। এছাড়া নিয়মিত টকদই খাওয়ার ফলে জাংক ফুড খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায় অনেকখানি। যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

দাঁত ও হাড় ভালো রাখে

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/02/1535877631059.jpg

আগেই বলা হয়েছে টকদইতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এই দুইটি মিনারেল দাঁত ও হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম জরুরি উপাদান। জাপানের একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে প্রতিদন পরিমাণ মতো টকদই খাওয়ার ফলে অংশগ্রহনকারীদের দাঁত ও দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য পূর্বের তুলনায় অনেকটা ভালো হয়েছে। এমনটা হবার কারণ, টকদই খাওয়ার ফলে মুখের ভেতর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। যা দাঁতকে সুস্থ রাখে।

যে খাদ্য উপাদানটিতে এতো উপকার একসাথে পাওয়া যায়, সেই খাদ্যকে এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় একেবারেই। তাই নিয়মিত টকদই খাওয়ার অভ্যাস করুন ও সুস্থ থাকুন।