বাংলাদেশের নীলকণ্ঠ পাখিরা

  • আ ন ম আমিনুর রহমান পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী শহরের সিমলা পার্কে একটি উড়ন্ত নীলকণ্ঠ। ছবি- লেখক।

রাজশাহী শহরের সিমলা পার্কে একটি উড়ন্ত নীলকণ্ঠ। ছবি- লেখক।

তিন দিনের তিনটি গল্প তিনটি পরস্পর সম্পর্কিত পাখিদের নিয়ে-

এক. উন্মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার উপর প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য ভারতের কেরালা রাজ্যের কোচি সিটি (বা কোচিন) এসেছি ২০১০ সালের ২৪ নভেম্বর। সম্মেলনের স্থান হোটেল শেরাটন কোচিন। হোটেলের দুটি অংশ- একটি মূল ভবন ও অন্যটি রিসোর্ট। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো এই রিসোর্ট অংশে। সম্মেলনের স্থান অর্থাৎ মূল ভবন থেকে রিসোর্টে স্পিড বোটে যেতে হয়। অবশ্য বিষয়টি আমার কাছে বেশ আনন্দেরই ছিল। কারণ, যতবার ওখানে যাওয়া-আসা করতাম ততবারই কোনো না কোনো পাখির দেখা পেতাম।

বিজ্ঞাপন
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের একটি গ্রামে নীলকণ্ঠ। ছবি- লেখক।

সম্মেলন শেষে ২৯ নভেম্বর সকালে দেশে ফেরার জন্য নিচে নেমে এসেছি। অন্যরা তখনও না নামায় হাতে কিছুটা সময় পেলাম। কাজেই ক্যামেরা হাতে এদিক-ওদিক করছি। একসময় হোটেলের পাশের খোলা জায়গাটায় কিছু মহিষ চড়তে দেখলাম। মহিষের সঙ্গে গো-বকগুলোর বেশ ভাব। গো-বকগুলো তাদের গায়ের পোকা খাওয়ায় ব্যস্ত। ওদের ছবি তোলার সময় হঠাৎ ক্যামেরার ফ্রেমে নীল-বাদামি রঙের একটি পাখির চেহারা দেখতে পেলাম। অত্যন্ত সুন্দর পাখি। দেহের নীলের কারুকাজটা চমৎকার। কিন্তু ওর ছবি তোলায় ব্যঘাত ঘটালো আমারা সহকর্মীরা, কারণ সবাই নেমে গেছে। কাজেই স্পিড বোটে ওঠতে হবে। কোনো রকমে ৩-৪টি ক্লিক করে দ্রুত ক্যামেরা গুছিয়ে স্পিড বোটে উঠলাম। পরবর্তীতে পাখিটির সুন্দর সুন্দর ছবি তুলেছি রাজশাহী ও পঞ্চগড় থেকে।

দুই. বিরল এক পাখির সন্ধানে দাঁড়িয়ে আছি ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে একটি শিমুল গাছের নীচে। ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের পলাশপুরের এক পরিত্যক্ত আবাসন প্রকল্পে গাছটির অবস্থান। প্রায় এক যুগ আগে পরিত্যক্ত হওয়া আবাসন প্রকল্পটির ভরাট করা বেলে মাটিতে তর তর করে বেড়ে উঠেছে নানা প্রজাতির কাষ্ঠল, ফলদ ও বুনো গাছপালা, ঝোপঝাড় এবং লতাগুল্ম। যেন চমৎকার এক গ্রামীণ বন! একপাশে বিশাল আকারের মেঘ শিরিস গাছের সারি। তার খানিকটা সামনে একটি ডক ইয়ার্ড। পরিত্যক্ত এই আবাসন প্রকল্পটি বর্তমানে বহু প্রজাতির পাখি-প্রাণীর আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। দিনের বেলাও এখানে শিয়ালের আনাগোনা। পুরো এলাকায় ছোট-বড় ৮-১০টি শিমুল গাছ রয়েছে।

বেশিরভাগ গাছই টকটকে লাল ফুলে ভরে আছে। আর তাতে নানা প্রজাতির পাখির যেন মেলা বসেছে! হলদে পাখি, কাঠ শালিক, বসন্তবৌরি, কাঠঠোকরা, হাঁড়িচাচা, দাঁড়কাক, বুলবুলি, ছাতারে, শ্বেতাক্ষী, আরও কত কি? গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছি অনেক্ষণ। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা পেলেও বিরল পাখিটিকে তখনও পাইনি। একটি হাঁড়িচাচা পাখির ছবি তুলে সামনের দিকে তাকাতেই পাশের মেঘ শিরিস গাছ থেকে নীলচে একটি পাখি হঠাৎ করে উড়াল দিল। অতি দ্রুত উড়ন্ত পাখিটির দিকে ক্যামেরা তাক করালাম। মাত্র পাঁচ মিনিটে পাখিটির পোকা ধরার এক দুর্লভ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করতে পারলাম। সাতাশ ফেব্রয়ারি ২০১৩-এর ঘটনা এটি। প্রথমবার ওর ছবি তুলেছিলাম ২০১১ সালের জানুয়ারিতে গাজীপুরের সালনায় আমার কর্মস্থল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

তিন. তের নভেম্বর ২০১৪ সালের ঘটনা। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের বড় ছড়ায় হাঁটছি বিশেষ একটি পাখির খোঁজে। একই বছর আর চারবার পাখিটির খোঁজে কাপ্তাই এসেছি। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও পাখিটিকে দেখলাম সেই পুরোনো স্টাইলে বেশ উঁচুতে বৈদ্যুতিক তারে বসা অবস্থায়। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। যাহোক, দুপুরের খাবার সেড়ে কাপ্তাইয়ে পাশের থানা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি ও ইকো পার্কে ঘুরতে গেলাম। পার্কে হাঁটতে হাঁটতে একসময় পাহাড়ের সবচেয়ে উঁঁচুতে উঠে গেলাম। আর হঠাৎই নীলচে রঙের পাখিটি নজরে এল।

সেই একই স্টাইলে ক্যাবল পথের তারের উপর বসে আছে। তবে এবার আমি পাহাড়ের উঁচুতে ওঠায় ওর বেশ কাছাকাছি চলে এলাম। আর যায় কোথায়? পটাপট ক্লিক করতে থাকলাম। মন ভরে গেল আনন্দে। পাখিটির প্রথম ছবি তুলেছিলাম হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ২০১৩ সালের দোসরা জুন। কিন্তু উড়ন্ত পাখিটি এতটাই দূরে ছিল যে ছবি দেখে তাৎক্ষণিকভাবে ওর সঠিক পরিচয় বের করতে পারিনি। ময়না পাখি ভেবে ছবিটি নিয়ে আর গবেষণাও করিনি। কিন্তু কয়েক বছর পর হঠাৎ একদিন কম্পিউটারে ছবিটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতেই ওর সঠিক পরিচয় পেয়ে গেলাম।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের পলাশপুরে শিকার করা পোকা মুখে উড়ন্ত ইন্দোচীনা নীলকণ্ঠ। ছবি- লেখক। 

তিন দিনের তিন গল্পের নীল রঙের এই পাখিগুলো কোরাসিফরমেস (Coraciiformes) বা নীলকণ্ঠ বর্গের অর্ন্তগত কোরাসিডি (Coracidae) বা নীলকণ্ঠ গোত্রের পাখি। এদের আকার মাঝারি ও পালকের বর্ণ উজ্জ্বল। এদের পায়ের তিনটি আঙুল সামনের দিকে ও একটি পিছন দিকে অবস্থিত। শারীরস্থানিকভাবে এদের পায়ের ৩ ও ৪ নম্বর আঙুল দুটি গোড়ার দিকে সংযুক্ত থাকে। নীলকণ্ঠের সঙ্গে এই বর্গে আরও রয়েছে সুঁইচোরা ও মাছরাঙা। তবে ওরা অন্য গোত্রের পাখি। সারাবিশ্বে নীলকন্ঠ বর্গে মোট ১৯৬টি প্রজাতির পাখি থাকলেও বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র ১৯টি। এই বর্গের মোট গোত্রসংখ্যা ছয়টি। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী কোরাসিডি বা নীলকন্ঠ গোত্রে সর্বমোট ১৩টি প্রজাতি থাকলেও এদেশে মাত্র তিন প্রজাতির বাস। নীলকণ্ঠ গোত্রের বর্ণিল পাখিগুলোকে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রাপ্ত তিন প্রজাতির নীলকণ্ঠের মধ্যে সবগুলোই আবাসিক। তবে নীলকণ্ঠ ও পাহাড়ি নীলকণ্ঠ সচরাচর দৃশ্যমান হলেও সদ্য ভাগ হওয়া ইন্দোচীনা নীলকণ্ঠ তথ্য অপ্রতুল শ্রেণীতে রয়েছে। এখানে এই তিন প্রজাতির নীলকণ্ঠ সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে।

০১. নীলকণ্ঠ (Indian Roller): এই পাখিটি আজকের প্রথম গল্পের পাখি যাকে সর্বপ্রথম কেরালার কোচি সিটিতে ও পরিবতীর্তে এদেশের রাজশাহী ও পঞ্চগড়ে দেখেছিলাম। এটি বাংলাদেশের সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। সাত-কাইয়া, তাওয়া, কেউয়া, থোরমোচা, নীলাচল নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Indian Roller, Indian Blue Roller, Northern Roller ev Southern Roller বা Coracias benghalensis। বৈজ্ঞানিক নাম Coracias benghalensis (কোরাসিয়াস বেঙ্গালেনসিস)। এতদিন দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বসবাসকারী Coracias benghalensis benghalensis এবং পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী Coracias benghalensis affinis নীলকণ্ঠের দুটি উপপ্রজাতি হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ওদেরকে আলাদা দুটি প্রজাতি- নীলকণ্ঠ (Coracias benghalensis) ও ইন্দোচীনা নীলকণ্ঠ (Coracias affinis) হিসেবে গণ্য করছেন। যাহোক, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে নীলকণ্ঠের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

প্রাপ্তবয়স্ক নীলকণ্ঠের দেহের দৈর্ঘ্য ২৬-৩৪ সেন্টিমিটার (সেমি), প্রসারিত ডানা ৬৫-৭৪ সেমি ও ওজন ৯০-১৬৫ গ্রাম। পালকে তিন রকমের নীল রং দেখা যায়, হালকা নীল, আকাশি নীল ও গাঢ় নীল। মাথা, ডানা, পেট ও লেজে এই তিন নীলের চমৎকার সমন্বয় রয়েছে। ওড়া অবস্থায় ডানায় বিভিন্ন মাত্রার নীল চোখে পড়ে। ঘাড়-গলা, কপাল ও বুকের পালক লালচে-বাদামি। গলা, কান-ঢাকনি ও বুকে হালকা সাদাটে লম্বালম্বি দাগ দেখা যায়। চোখ বাদামি। শক্তপোক্ত কালো চঞ্চু। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল হলদে। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পালক ফ্যাকাশে ও বুক-গলায় বেশি দাগ থাকে। দেহের হালকা রং ও গলার লালচে-বাদামি দাগের মাধ্যমে ইন্দোচীনা নীলকণ্ঠ থেকে এদের পৃথক করা যায়।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকল উপযুক্ত পরিবেশ, যেমন- গ্রামাঞ্চল, তৃণভূমি, ঝোপঝাড়, উন্মুক্ত এলাকা ইত্যাদিতে নীলকন্ঠের দেখা মিলে। সচরাচর একাকী বিচরণ করে। ওরা মূলত কীটপতঙ্গভুক পাখি। গাছের শাখায় বা বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকে ও হঠাৎ উড়ে এসে পোকামকড় ধরে আবার ডালে বা তারে ফিরে যায়। সচরাচর নীরব থাকে, কদাচ ‘চাক-চাক---’ শব্দে ডাকে।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারির ক্যাবল পথে বসা পাহাড়ি নীলকণ্ঠ। ছবি- লেখক। 

মার্চ থেকে জুন প্রজননকাল। এ সময় ওরা অত্যন্ত কোলাহলপ্রিয় হয়ে যায়। মরা তাল, খেজুর, নারিকেল বা অন্য কোনো উপযুক্ত জীবিত গাছের প্রাকৃতিক কোটর বা খোঁড়লে বাসা বাঁধে। স্ত্রী ৩-৪টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে ডিমে তা দেয় ও ছানাদের যত্ন করে। ডিম ফোটে ১৭-১৯ দিনে। ছানারা ৩০-৩৫ দিন বয়সে উড়তে শিখে। আয়ুষ্কাল ৫-৬ বছর।

০২. ইন্দোচীনা নীলকণ্ঠ (Indochinese Roller): এটি ফিচারের দ্বিতীয় গল্পের পাখি। নীলকণ্ঠের মতো এটিও এদেশের আবাসিক পাখি। ইংরেজি নাম Inochinese বা Burmese Roller। বৈজ্ঞানিক নাম Coracias affinis (কোরাসিয়াস অ্যাফিনিস)। ওরা মূলত বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বাস করে। সম্প্রতি নীলকণ্ঠ থেকে পৃথক হয়ে নতুন প্রজাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেহের পালকের বর্ণ ও ভৌগোলিক বিস্তৃতি ছাড়া প্রজাতি দুটির মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য নেই। অনেকের মতে দেশের দক্ষিণপূর্বঞ্চিলীয় এলাকা বাদে বাকি অংশের ইন্দোচীনা পাখিগুলো বিশুদ্ধ নয়, বরং ইন্দোচীনা ও ভারতীয় প্রজাতির নীলকণ্ঠের সংকর। যাহোক, বর্তমানে ওদের সম্পর্কে তথ্যের কিছুটা অপ্রতুলতা রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ওরা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বিস্তৃত। 

ইন্দোচীনা নীলকণ্ঠ আকার ও ওজনে নীলকণ্ঠের মতোই। একনজরে দেখতে একই রকম মনে হলেও ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেহের রঙের পার্থক্যটা চোখে পড়ে। ওদের দেহের পালক নীলকণ্ঠ থেকে বেশি গাঢ়। কপাল ও চঞ্চুর উপরটা নীল। চোখের উপরে একটি গাঢ় নীল রেখা আছে। লেজের গোড়ায় ফিরোজা রঙের ফিতে ছাড়াও লেজের বাইরের পালকের রংও ফিরোজা। তাছাড়া গলার লালচে-বাদামি রঙের উপর রয়েছে নীলচে আভা।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্র্বাঞ্চল ও কেন্দ্রীয় অঞ্চল অর্থাৎ সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের বন, বনের প্রান্ত, গ্রামাঞ্চল, তৃণভূমিসহ উপযুক্ত পরিবেশে ওরা বাস করে। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। নীলকন্ঠের মতো ওরাও কীটপতঙ্গভুক। গাছের ডালে বা বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকে ও হঠাৎ উড়ে এসে পোকামাকড় ধরে আবার ডালে বা তারে ফিরে যায়। সচরাচর নীরব থাকে, কদাচ ‘চাক-চাক---’ শব্দে ডাকে। ইন্দোচীনা নীলকণ্ঠের প্রজনন এবং ডিম-ছানা তোলার প্রক্রিয়া নীলন্ঠের অনুরূপ। আয়ুষ্কাল ৫-৬ বছর।

০৩. পাহাড়ি নীলকণ্ঠ (Oriental Dollarbird): এটি আজকের তৃতীয় গল্পের পাখি। নীলকণ্ঠের মতো পাহাড়ি নীলকন্ঠও এদেশের সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। অবশ্য অনেকেই ওদেরকে ডলারবার্ড নামেও ডাকে। ইংরেজি নাম Oriental Dollarbird, Dollarbird বা Broad-billed Roller। বৈজ্ঞানিক নাম Eurystomus orientalis (ইউরিস্টোমাস ওরিয়েন্টালিস)। ডলারবার্ড নামটি শুনে অনেকের মনেই এ রকম নামকরণের কারণ জানতে ইচ্ছে করতে পারে। আসলে পাখিটির ডানার নিচে গোলাকার রূপালি ছোপ রয়েছে যা অনেকটা আমেরিকান সিলভার ডলার কয়েনের মতো। আর সে থেকেই এ নামের উৎপত্তি। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে এদের বিস্তৃত রয়েছে।

পাহাড়ি নীলকণ্ঠ মাঝারি আকারের পাখি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের দৈর্ঘ্য ২৬-৩২ সেমি ও ওজন ১১৭-১৮৬ গ্রাম। দেহের উপরটা কালচে নীল। গলায় নীলচে আভা। বুক-পেট ও ডানা সবুজাভ-নীল। ওড়ার সময় ডানার নিচে রূপালি ডিম্বাকৃতি ছোপ দেখা যায়। চোখ হলদে-বাদামি। চওড়া চঞ্চু, পা, পায়ের পাতা ও আঙুল গোলাপি-লাল। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির চঞ্চু অনুজ্জ্বল।

ইন্দোচীনা নীলকণ্ঠের ছবি তুলতে কেরানীগঞ্জের পলাশপুরে ধলেশ্বরীর পাড়ে লেখক। 

পাহাড়ি নীলকণ্ঠ চিরসবুজ বন ও বনের প্রান্তে বাস করে। সাধারণত একাকী বা জোড়ায় দেখা যায়। গাছের পাতাবিহীন মগডালে বা বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকে ও হঠাৎ উড়ে এসে পোকামকড় ধরে আবার ডালে বা তারে ফিরে যায়। ওরা সাধারণত ‘ক্যাক-ক্যাক-ক্যাক---’ বা ‘চ্যাক-চ্যাক-চ্যাক---’ শব্দে ডাকে। মার্চ থেকে জুন প্রজননকাল। এ সময় ওরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বানায় ও তাতে ৩-৪টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৭-২০ দিনে। ছানারা প্রায় একমাস বয়সে উড়তে শিখে। আয়ুষ্কাল ৫-৬ বছর।