সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায়

আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ আসামির যাবজ্জীবন

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

২৫ বছর আগে খুন হওয়া নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

অপর দুই আসামি হলেন, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী।

বিজ্ঞাপন

আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অতিরিক্ত প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা ও জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় বাকী ছয় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, ফারুক আব্বাসী, সানজিদুল ইসলাম ইমন, সেলিম খান ও হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এ রায় ঘোষণা করেন।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

পুলিশি তদন্তে উঠে আসে আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলামের সঙ্গে বিরোধের জেরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়।

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে এক আসামি হাইকোর্টে মামলার বিচার ঝুলে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর হাইকোর্টের আদেশে ২০২২ সালে ফের মামলাটির বিচার শুরু হয়।

মামলাটির তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ নথীপত্র (কেস ডকেট) পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন এক দরখাস্ত দিয়ে মহানগর পিপির দপ্তর থেকে নিয়ে যান। সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাদিয়া আফরিন জানান, আদালতের নির্দেশের পরও ফরিদ উদ্দিন উক্ত কেস ডকেট ফেরত দেননি।

মামলার নথী অনুযায়ী, ট্রাম্প ক্লাবের কার্যক্রম চলত বনানীর আবেদিন টাওয়ারের সপ্তম তলায়। ক্লাবের পশ্চিম পাশে ছিল একটি জামে মসজিদ। জবানবন্দিতে একাধিক সাক্ষী বলেছেন, ওই ক্লাবে নাচ-গানসহ অসামাজিক কার্যক্রম চলত। ক্লাবের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে স্থানীয় মুসল্লিদের পক্ষে অবস্থান নেন সোহেল চৌধুরী।

ওই দিন রাতে বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে গান বন্ধ করতে বলেছিলেন সোহেল ও তাঁর বন্ধুরা। গান বন্ধ করা নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেলের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সোহেল চৌধুরী আজিজের ওপর খেপে যান। তখন সোহেলের বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে যান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। ট্রাম্প ক্লাবের কাজ ব্যাহত হলে সোহেল চৌধুরীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন আসামিরা।

সোহেল চৌধুরীর মা নূরজাহান বেগম আদালতকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন রাত দুইটায় সোহেল বাসায় ফেরেন। পরে সোহেল আবার ক্লাবে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে দুটি গুলি করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সোহেল খুন হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে টেলিফোনে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলামের লোকজন তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।

মামলাটিতে রায় দেওয়ার আগে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।