অহেতুক হর্নে মুম্বাই সাজা দিলেও কলকাতা জরিমানাতেই ক্ষান্ত
স্থানীয় সময় সকাল ১০টা। স্কুলের সামনে শিক্ষার্থী আর অবিভাবকের ভিড় থিকথিক করছে। এমন সময় একটি বাইকে ভিড় কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছে। সঙ্গে কান ঝালাপালা করে হর্নের দাপট। পুলকার থেকে লাইন করে স্কুলে ঢুকছে খুদে শিক্ষার্থীরা। বাইক বাবুর এতই তাড়া যে শিশুদের পিছনে গিয়েও বাজিয়ে চলেছে হর্ন। কলকাতায় এই দৃশ্য ব্যতিক্রম নয়।
শহরের নানা প্রান্তে এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটে চলেছে। অথচ হাসপাতাল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় মোড়ে মোড়ে স্পষ্ট করে লেখা-নো হর্ন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! স্কুল, কলেজ, অফিস, হাসপাতাল সব মিলিয়ে কলকাতার ব্যস্ত সময়গুলো চিত্রটা অনেকটা এরকমই।
তবে শুধু কলকাতা নয় অকারণ হর্ন ভারতের সব রাজ্যের কম বেশী বাজে। তাই অহেতুক হর্ন রুখতে ভারতের বাণিজ্য নগরী অর্থাৎ মুম্বই পুলিশ নিয়েছে নতুন পরিকল্পনা। সিগন্যাল লাল থাকলেও বহু গাড়ি নাগাড়ে হর্ন বাজাতে থাকে। শব্দ দানবের ওই দৌরাত্ম্য রুখতে সম্প্রতি ‘পানিশিং সিগন্যাল’ চালু করেছে মুম্বই পুলিশ।
এমনিতে ভারতজুড়ে আছে ট্রাফিক সিগন্যাল। সেখানে রাস্তা ও মোড় অনুযায়ী সিগন্যাল টাইম সেট করা থাকে। তবে মুম্বাই শহরের বেশ কিছু ট্র্যাফিক পোস্টে বসানো হয়েছে শব্দ পরিমাপক যন্ত্র। যন্ত্রগুলি লাগানো হয়েছে ট্রাফিক সিগন্যালের সাথে। হর্নের শব্দে যন্ত্রের কাঁটা ৮৫ পার করলেই সিগন্যালের টাইমিংনতুন করে সেট হয়ে যাবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে।
ফলে দীর্ঘক্ষণ লাল থাকবে সিগন্যাল। গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে অকারণ হর্ন বাজানো চালককের সাথে সকলকে। ইতিমধ্যেই অভিনব এই পদক্ষেপের ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে মুম্বই পুলিশ। এক মিনিট ৫১ সেকেন্ডের সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে।
ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে মুম্বইয়ের মতো এই উদ্যোগ কলকাতাতেও চালু করা যায় কি না? তা নিয়ে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কলকাতা পুলিশকে আর্জি জানাতে শুরু করেছেন। তবে এখনই মুম্বই পুলিশের মতো ‘পানিশিং সিগন্যাল’ চালুর পথে হাঁটতে চাইছে না কলকাতার হেড কোয়ার্টার লালবাজার থানা।
কিন্তু মুম্বই পুলিশের ধাঁচে একই ব্যবস্থা এই কলকাতায় চালু করতে সমস্যা কোথায়? লালবাজারের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কলকাতায় রাস্তার সংখ্যা অনেক কম। সেই তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে, হর্ন বাজানোর খেসারত হিসেবে সিগন্যাল বেশিক্ষণ লাল রাখলে যানজটের সমস্যা বড় আকার নিতে পারে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা মুম্বাইতে হবে না কারণ। কারণ মুম্বইয়ের অধিকাংশ রাস্তা রিং রোড। কিন্তু কলকাতার প্রায় সব ক’টি রাস্তা অন্য একাধিক রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত।
কিন্তু মুম্বই পুলিশের ধাঁচে একই ব্যবস্থা এই কলকাতায় চালু করতে সমস্যা কোথায়? লালবাজারের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কলকাতায় রাস্তার সংখ্যা অনেক কম। সেই তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে, হর্ন বাজানোর খেসারত হিসেবে সিগন্যাল বেশিক্ষণ লাল রাখলে যানজটের সমস্যা বড় আকার নিতে পারে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা মুম্বাইতে হবে না কারণ। কারণ মুম্বইয়ের অধিকাংশ রাস্তা রিং রোড। কিন্তু কলকাতার প্রায় সব ক’টি রাস্তা অন্য একাধিক রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত।
একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গাড়ি, মোটর বাইক, অটোরিকশার হর্নের বিকট শব্দের জেরে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী মোটরবাইক চালক ও ট্রাফিক পুলিশের কর্মীরা। অহেতুক হর্ন বাজানোর এই প্রবণতা ঠেকাতে গত বছর আগস্ট মাসের শেষ দিকে কলকাতা জুড়ে অভিযান শুরু করেছিলেন কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। গত বছর অক্টোবর মাসে হর্নের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করেছিল কলকাতা পুলিশ।
এই পর্যায়ে গত মঙ্গলবার থেকে ফের শুরু হয়েছে সেই অভিযান। লালবাজারের সূত্রের খবর, ২০১৬-তে নো হর্ন এলাকায় হর্ন বাজানোর জন্য ৬ হাজার ৭৪ জনের জরিমানা হয়েছিল। সেখানে গত ছয় মাসেই জরিমানার সংখ্যা ছাড়িয়েছে লক্ষাধিক।
কিন্তু শুধু জরিমানা বা প্রচার কর্মসূচি দিয়ে হর্নের দৌরাত্ম্য আটকানো যাবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য সংশয় থাকছেই। সেক্ষেত্রে তাদের অভিযানে কাজ হচ্ছে কি না, সেটা ঠিকঠাক বুঝতে পেশাদার কোনও সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করানোর চিন্তা করছে লালবাজার।