করোনার ভয় কলকাতার চায়না টাউনে
সুদূর চীনে প্রভাব বিস্তার করছে করোনাভাইরাস। আর তার আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। প্রভাব পড়ছে ব্যবসা বাণিজ্যে। মন্দা শেয়ার বাজার। এমন এক আন্তর্জাতিক সঙ্কট থেকে কীভাবে মুক্তি পায় কলকাতা? তাই তার ছায়া এসে পড়েছে বাঙালির স্বাদের নুডলস- চাউমিনে।
কলকাতার চীনা স্বাদের মুল আস্তানা হলো তপসিয়া অঞ্চলের চায়না টাউন। ব্রিটিশদের আগে চীনারা এসব অঞ্চলে বংশপরম্পরায় বাস করে গড়ে তুলেছে চায়না টাউন। এবার সেই টাউন-ই সঙ্কটের শিকার। কারণ করোনা আতঙ্কে চায়না টাউনের চত্বরে এখন নাকি পা রাখছেন না খাদ্যরসিক বাঙালিরা। ফলে জোর ধাক্কা লেগেছে এই অঞ্চলের চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোর ব্যবসায়। ক্রেতারা রাতারাতি রেস্টুরেন্ট বিমুখ হতেই অবাক ও হতাশ চায়না টাউনের, চীনা ম্যানরা।
কলকাতার চায়না টাউনে সব মিলিয়ে কয়েক হাজারের চীনা পরিবারের বাস। রয়েছে একাধিক নামী রেস্টুরেন্ট। সারা বছরই এখানে ভিড় থাকে। কলকাতায় যেকোনো উৎসবে রেস্টুরেন্টগুলোতে জায়গা পাওয়াই দায় হয়ে ওঠে। আর তা কিছুটা বাড়ে চীনা নববর্ষের সময়। কারণ ওই সময় নানান মেনুতে অফার থাকে এ অঞ্চলে। পাশাপাশি এখানে বসবাসকারীদের যে সমস্ত আত্মীয় বিদেশে থাকেন, বছরের ঐ সময়টা তারা কলকাতায় আসেন। ফলে শীত থেকে বসন্তের মৌসুম সময়টা জমজমাট থাকে চায়না টাউনে।
কিন্তু এবারের চিত্রটা একবারেই ভিন্ন। ভিড় সেরকম নেই। এবারে বিদেশ থেকে অনেকেই আসেননি। সম্প্রতি চীনা বর্ষবরণের উৎসবও সেভাবে জমে ওঠেনি বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কালোছায়া গ্রাস করেছে এই পাড়ার খাদ্য ব্যবসাকে। যে রেস্টুরেন্টগুলো খাদ্যরসিকদের ভিড়ে গমগম করত, সেগুলো এখন ফাঁকা বললেই চলে। মানুষের আনাগোনা ন্যূনতম পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে গোল্ডেন ফ্রায়েড প্রন, চিকেন ক্যান্টন চাউ কিংবা হুনান চিকেনের আস্বাদ গ্রহণ করার মতো রসিকজনেরা এ পাড়ায় ঢুঁ মারছেন না।
এখানকার বাসিন্দা যোশেফ। একটি রেস্টুরেন্ট চালান তিনি। তার বক্তব্য, এই ভাইরাসের সন্ধান এখনো মেলেনি কলকাতায়। তবুও একটা অহেতুক আতঙ্ক ছড়িয়েছে চায়না টাউন ঘিরে। করোনা নাম ছড়িয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত রেস্টুরেন্টে লাইন লেগে থাকত। যেদিন থেকে করোনা নিয়ে মিডিয়াগুলো প্রচার করেছে, সেদিন থেকেই অধিকাংশ রেস্টুরেন্টের টেবিল খালি থাকছে। আর কলকাতা মানেই তো খেতে আসা মানুষজনের মধ্যে বেশিরভাগই বাঙালি। ফলে ব্যবসায় টান পড়েছে। তার প্রশ্ন, চায়না টাউনের হোটেলে খেতে আসা মানেই কি করোনাভাইরাসকে ডেকে আনা? আর এখানে যারা কাজ করছেন তারা কি এই ভাইরাসে আক্রান্ত?
একই বক্তব্য বংশপরম্পর চায়না টাউনে দীর্ঘদিন কাটিয়ে ফেলা লি’এরও। তার কথায়, চীনে তাদের গুটিকয়েক আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথাবার্তা হয়। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর কথা হয়েছে সকলের সঙ্গে। এমনটা নয় যে গোটা চীনেই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। চীনের দু-তিনটি প্রদেশেই এর প্রকোপ ধরা পড়েছে। আর এই ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর তার কোনও আত্মীয়স্বজন চীন থেকে আসেননি। শুধু তিনি কেন, গোটা চায়না টাউনেই চীন থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে এসেছেন এমন খবর নেই। এমনকি রেস্টুরেন্টগুলোতে যারা কাজ করছেন, তারা কলকাতারই নাগরিক।
তাই করোনাভাইরাস আতঙ্কে রেস্টুরেন্টমুখো না হওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না তিনি। খাদ্যরসিকরা না আসায় ব্যবসা মার খাচ্ছে। অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ারও বার্তা দিচ্ছেন রেস্টুরেন্ট মালিকরা।