রসগোল্লার স্বাদ ফেরাতে পথে নামছে মমতা সরকার

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কলকাতা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রসগোল্লা, ছবি: সংগৃহীত

রসগোল্লা, ছবি: সংগৃহীত

যারা খাদ্যরসিক, তারাই বোঝেন। চিনির তৈরি রসে ডোবানো হাল্কা গোলাকার মিষ্টি হলেই রসগোল্লা হয় না। তাতে যদি কোনওভাবে স্টার্চ বা সুজি মিশে ওজনদার হয়ে যায়, তাহলে স্বাদের বারোটা বেজে গেল। রসগোল্লা হতে হবে শুধুই ছানার। সেখানে আর কোনও রসদ দেওয়া চলবে না। চিনির রসে ডুবে থাকা তুলতুলে নরম রসগোল্লা হতে হবে একেবারে মেদহীন, নিটোল এবং নিখুত, চাঁদের মত সাদা। তবেই জিভে পড়লে পাওয়া যাবে স্বর্গীয় অনুভূতি। কিন্তু এমন সুস্বাদ রসগোল্লা পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি দোকান ছাড়া সহজে মিলছে কই?

তাই এবার দুর্গাপূজার আগে রসগোল্লার স্বাদ ফেরাতে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় কোমর বেঁধে নামছে খোদ রাজ্য সরকার। যে রসগোল্লার জন্য কলকাতার এত নামডাক, তার স্বাদে বদমান হোক, তা মানতে রাজি নয় রাজ্য প্রশাসন। তাই চলতি মাসে মোট আড়াই হাজার দোকানের মধ্যে রাজ্যে অন্তত ৭০০ দোকানে রসগোল্লার মান বাড়ানোর দায়িত্ব নিচ্ছে প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

ইতিহাস বলছে, রসগোল্লার জন্ম কলকাতায়। এ নিয়ে কম দ্বন্দ্ব হয়নি প্রতিবেশী রাজ্য উড়িষ্যার সঙ্গে। তাদের দাবি ছিল, যে মিষ্টি ভগবান জগন্নাথদেবকে নিবেদন করার প্রথা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ কী করে দাবি করে, রসগোল্লার উৎপত্তি বাংলায়? বিষয়টি গড়ায় আইনি লড়াই পর্যন্ত। বিস্তর টালবাহানার পর অবশেষে আদালত রায়ে ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ বা ‘জিআই’ তকমা পেয়েছে ‘পশ্চিমবাংলার রসগোল্লা’।

রসগোল্লার জনক কলকাতার নবীনচন্দ্র দাশের আবিষ্কারকেই স্বীকৃতি দেন আদালত। এরই মধ্যে ‘জিআই’ তকমা দুই বছর হতে চলল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জিআই তকমা পায়নি প্রায় কোনও মিষ্টান্ন সংস্থা। সেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে একমাত্র ‘কে সি দাশ’কে। রসগোল্লাই যে এ বাংলা থেকে একমাত্র জিআই পেয়েছে, তা নয়। পশ্চিমবঙ্গের বহু পণ্যেই জিআই আছে। কিন্তু সে সবের থেকে রসগোল্লার লড়াইটা ছিল একেবারে আলাদা। তাই মমতা সরকারের আবেগটাও আলাদা।

বিজ্ঞাপন

রাজ্য সরকারের ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড হর্টিকালচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ওই জিআই বিতরণ করার দাবিদার। তাদের বক্তব্য, চাইলেই তারা যাকে তাকে সেই জিআই লোগো বিলোতে পারে না। সে ক্ষেত্রে রসগোল্লার সংজ্ঞা মেনে মিষ্টি প্রস্তুত করতে হবে সংশ্লিষ্ট দোকানকে। যারা তা করবে, তাদের রসগোল্লা পরীক্ষা করা হবে স্টেট ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে সেই টেস্ট রিপোর্টসহ আবেদন পাঠানোর প্রশাসনিক কাজটি করবে। গোটা প্রক্রিয়াটি শেষ করতে পাঁচ থেকে ছ’মাস সময় লাগে। এর পরেই রসগোল্লা প্রস্তুতকারক পেতে পারে জিআই তকমা।

তাই রাজ্য সরকারের কর্তারা কোমর বেঁধেছেন জেলায় জেলায় রসগোল্লাকে জিআই তকমা দিতে। এরই মধ্যে তারা মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রতিটি জেলায় তারা পৌঁছবেন এবং রসগোল্লার মান বাড়িয়ে জিআই পেতে কাউন্সেলিং করবেন।

এক কর্তার কথায় জিআই বড় কথা নয়। সেটি একটি প্রশাসনিক লোগো মাত্র। কিন্তু তার মাধ্যমে স্বাদ ফিরবে রসগোল্লায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ এ রাজ্যের রসগোল্লা ভারতের নানা রাজ্যসহ বিদেশে যায়। স্বাদের হেরফেরে চাহিদা কমবে রাজ্যের রসগোল্লার। আখেরে বদনাম হবে পশ্চিমবাংলার। তা চায় না প্রশাসন। তাই রসগোল্লার গুণগত মান ঠিক করার জন্যই পথে নামা।