রমজানজুড়ে এক সৌদি পরিবারের ইফতার বিতরণ
রমজান মাস। বহুবিধ কল্যাণ ও ফজিলতের মাস। এ মাসে যে যেভাবে পারেন, সওয়াব ও কল্যাণের কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। পাড়া-প্রতিবেশি কিংবা অপরকে খাওয়ানোর কথা আমাদের অনেকেরই জানা আছে। আর সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা রমজান শুরুর আগেই হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ (রমজান) মাস হলো- সহমর্মিতার মাস। -শোয়াবুল ঈমান: ৩৩৩৬
রমজানে অন্যতম আমল হলো- অপরকে ইফতার করানো। আর ইফতার যদি করানো হয় কোনো অসহায়কে, তখনতো প্রতিদান আরও বহুগুণে বেড়ে যায়।
হজরত জায়েদ বিন খালিদ জুহানি (রাযি.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে ওই রোজাদারের সমান সওয়াব লাভ করবে। তবে (এর কারণে) রোজাদারের সওয়াব বিন্দু পরিমাণও হ্রাস পাবে না। -তিরমিজি: ৮০৭
আরবদের মাঝে আতিথেয়তার কথা সর্বজনবিদিত। এটা তাদের ঐতিহ্যও বটে। অনন্য এই গুণে তারা ইসলামপূর্ব যুগ হতে পরিচিত ছিলো। বিলিয়ে দিয়ে চিত্তের ঢেঁকুর নেওয়া তাদের স্বভাব। পুরো পৃথিবী যখন করোনার এক মহাসঙ্কটে, স্বভাবসুলভ মানবিকতার সেই রূপ সময়ের সঙ্গে ফুটে উঠেছে।
বলছিলাম সৌদি আরবের পূর্বে ঐতিহ্যের ধারক আহসা অঞ্চলের এক পরিবারের কথা। অসহায় ও গরিবদের মাঝে প্রত্যেহ ইফতার তৈরি করে পৌঁছি দিচ্ছে তারা। পরিবারটির ছেলে-মেয়ে সবাই এই আয়োজনে মায়ের সঙ্গলাভে যারপরনাই খুশি। মা-ছেলে-মেয়েরা মিলে ইফতার তৈরি হতে নিয়ে প্যাকেট করেন, আর বাবা তা নিয়ে পৌঁছে দেন অসহায়দের দ্বারে দ্বারে।
এভাবে অপরের জন্য বিলিয়ে দেওয়া, নিঃস্বার্থ পরোপকারের দীক্ষা দানে একজন আদর্শ মায়ের বিকল্প নেই। হাতে কলমে সন্তানদের দীক্ষা দেওয়ার বিকল্প কোনো কিছুতে নেই। নিজের ব্যক্তিগত আমলের পাশাপাশি এভাবে সবাইকে নিয়ে ইফতার আয়োজনে সবাই খুশি মনেই অংশগ্রহণ করছে। একে অপরকে সহযোগিতা করছে। রোজার শুরু হতে নেওয়া এ মহতি উদ্যোগকে সফলতার সঙ্গে শেষ অবধি বাস্তবায়ন করে গেছেন তারা।
গৃহকর্ত্রী বলেন, পরিবারের সকলে মিলে এসব কাজ করতে পারা এক দিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে উপভোগের।
তিনি আরও বলেন, ইফতারে এই দৈনন্দিন এ আয়োজন সম্পাদনে পরিবারের প্রত্যেকের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। যাতে ইফতারের আগেই পুরো কাজ শেষ করা যায়। তারপর তা আমরা গরীব-অসহায়দের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেই।
তিনি বলেন, আমি নানা প্রকারের খাবার তৈরিতে পারদর্শী। এসব এখন মেয়েদের শেখানোর চেষ্টা করছি। যাতে তারা করোনার আবদ্ধের এই সময়গুলোতে নানা কর্মে পারদর্শী হয়ে উঠে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন আমরা সাধ্যমতো ইফতার প্যাক তৈরি করি। এতে ইফতার সামগ্রী ছাড়াও সৌদির জাতীয় খাবার থাকে।
এভাবে অপরের জন্য খাবার বিতরণে তিনি তৃপ্ত এবং তার পরিবারের সদস্যরাও আনন্দিত। এসবের মধ্য দিয়ে পরিবারের পরস্পরে একে অপরের কাছে আসা ও প্রীতি বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হলো।