বিপদে-আপদে আল্লাহর কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে

  • শফিকুল ইসলাম খোকন, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লাহ ক্ষমাশীল ও প্রেমময়, ক্যালিগ্রাফি: সাইফুল্লাহ সাফা

আল্লাহ ক্ষমাশীল ও প্রেমময়, ক্যালিগ্রাফি: সাইফুল্লাহ সাফা

মানব জীবনের অংশবিশেষ রোগ-শোক ও বিপদ-আপদ। এ সবকিছু আল্লাহ প্রদত্ত, আর এসব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা উপায়ও বলে দিয়েছেন। বলা হয়, রোগ-শোক ও বিপদের সময় আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা করতে, তাকে স্মরণ করতে হবে।

রোগবালাই যখন অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে, একটি রোগ যখন প্রায় সবাইকে আক্রান্ত করে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে, তখন তাকে মহামারি বলা হয়। ঠিক এ রকমই একটি মহামারি শুরু হয়েছে গোটা বিশ্বে, যার নাম- করোনা।

বিজ্ঞাপন

করোনা মহামারি একটি কঠিন বিপদ। আর ইসলামের শিক্ষা হলো- যেকোনো বিপদে বান্দা আল্লাহমুখি হোক এবং তার কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা করুক। আল্লাহতায়ালা এটা প্রত্যাশা করেন। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে বিপদে আল্লাহমুখি হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই শুধু চলতি মহামারি নয়, যেকোনো বিপদ দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হলো- নিজের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ -সুনানে তিরমিজি: ১০৬৫

বিজ্ঞাপন

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। -সুনানে ইবনে মাজা: ৪০১৯

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্লেগ রোগ (মহামারি) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। আল্লাহর নবী (সা.) তাকে জানান, এটি হচ্ছে এক ধরনের শাস্তি। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনের জন্য রহমত বানিয়েছেন। অতএব প্লেগ রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না; তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সওয়াবের সমান সওয়াব।’ –সহিহ বোখারি: ৫৭৩৪

বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি, পাপ কাজে সীমা লঙ্ঘনের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলো- নতুন নতুন রোগের বিস্তার। একে কেউ কেউ প্রকৃতির প্রতিশোধ আবার কেউ আল্লাহর গজব বা মহামারিও বলেন।

যেমন কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই, মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সঙ্গে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও।’ –সূরা আল বাকারা: ১৫৫

এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, পৃথিবীতে আমরা এসেছি পরীক্ষা দিতে। এটাই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। যদিও মহামারি রোগ, প্রকৃতির প্রতিশোধ কিংবা আল্লাহর গজব। তবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এটাকে মুমিনের জন্য রহমত বলেছেন। তিনি বলেছেন, পৃথিবীবাসীর জন্য মহামারি শাস্তি। তবে বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য এটি রহমত। -সহিহ বোখারি শরীফ

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেছেন, মহামারির সময় ধৈর্য্যধারণ করলে সওয়াব মিলে, আর মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে শহীদের মর্যাদা

মহামারির সময় আমাদের করণীয় কী? এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকেও রয়েছে দিক-নির্দেশনা। ইবনে মাজায় বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘পাপ কাজের কারণে মহামারি আসে। তাই প্রথম করণীয় হলো- পাপ থেকে খাঁটি তওবা করা। আশা করা যায়, আল্লাহ ক্ষমা করবেন।’

দ্বিতীয় নির্দেশনা হলো, মহামারি আক্রান্ত এলাকা থেকে কেউ বের হতে পারবে না এবং ওই এলাকায় নতুন করে কেউ ঢুকতেও পারবে না।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মহামারি এলাকা থেকে মৃত্যুর ভয়ে কিংবা আত্মরক্ষার জন্য পালিয়ে যাওয়া ভয়াবহ কবিরা গোনাহ।’

বস্তুত রোগ-বালাই ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা অনেক উপায় রেখে দিয়েছেন বান্দার জন্য। এখন সময় এসেছে আল্লাহকে স্মরণ করার, ইবাদত-বন্দেগি করার ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা ও আশ্রয় চাওয়ার।

সাধারণত দেখা যায়, বিপদ হলে মানুষ আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, নামাজ পড়ে। এখন তো আমরা বিপদের সময় অতিক্রম করছি। এই সময়ে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে, অতীতের পাপ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে, আল্লাহর আশ্রয় ও তার রহমত বেশি বেশি প্রত্যাশা করতে হবে।

শফিকুল ইসলাম খোকন: সাংবাদিক ও কলাম লেখক