আতঙ্ক থাকলেও মক্কা-মদিনায় করোনা ঝুঁকি নেই, দাবি সৌদির
করোনাভাইরাস আতঙ্কে সৌদি আরব সাময়িকভাবে সব উমরা যাত্রী ও পর্যটকদের দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি সরকার।
যদিও সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত কারো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এমনকি করোনার প্রাদুর্ভাবে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠেয় পবিত্র হজ নিয়েও নানা অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে।
এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, মক্কা-মদিনায় পরিস্থিতি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ? এটা নিয়ে সৌদি আরবের বিভিন্ন পত্রিকায় নানা প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। ওইসব প্রতিবেদনে বেশ জোরালো কণ্ঠে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কিন্তু মক্কা-মদিনা এখনও আক্রান্ত হয়নি। তারপরও সতর্ক রয়েছে মসজিদে হারাম কর্তৃপক্ষ।
এ জন্য প্রয়োজনীয় নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আপাতত উমরা যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলেও আগে থেকে মক্কা-মদিনায় অবস্থানরত উমরা যাত্রীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, মসজিদের অভ্যন্তর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, জীবানুনাশক ওষুধ ছড়ানো ও মাস্ক পরিধানসহ ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মসজিদে হারাম কর্তৃপক্ষ আত্মবিশ্বাসী ও সচেতন উমরা যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে। ফলে নিষেধাজ্ঞা ও আতঙ্কের মাঝে উমরা যাত্রীদের ভয়-ডরহীনভাবে মসজিদে হারামে নিয়মিত যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে। তারা নফল তাওয়াফ আদায়ের পাশাপাশি জামাতে নামাজ আদায় করছেন, কোরআন তেলাওয়াত করছেন। অন্য সময়ের জুমাবারের মতো এই শুক্রবারেও (২৮ ফেব্রুয়ারি, নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিন) মুসল্লিদের ভিড় ছিল।
এদিকে করোনা আতঙ্কে দিনে ৪ বার পরিষ্কার করা হচ্ছে মসজিদে হারাম। সাধারণত মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণ আগে দিনে দুইবার (প্রয়োজনে বেশি) পরিষ্কার করা হতো। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে এখন দিনে চার বার পরিষ্কার করা হচ্ছে।
মসজিদে হারামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জাবের উইদানি আরব নিউজকে জানিয়েছেন, মসজিদে হারামে সাড়ে ১৩ হাজার নামাজের গালিচা রয়েছে। মসজিদের মেঝে ধুয়ে পরিষ্কার করার আগে সেগুলো সব ভাঁজ করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ক্লিনিং ও কার্পেট বিভাগের এই পরিচালক আরও বলেন, মসজিদ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার কাজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মীরা অত্যন্ত উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। মসজিদ ধুয়ে ফেলার পর সুগন্ধি ছিটানো করা হয়।
নেদারল্যান্ডস থেকে উমরা পালন করতে আসা মাহমুদ আলী বলছিলেন, আমরা নিয়মিত হাত ধোয়ার পাশাপাশি মাস্ক পরিধান করছি। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিচ্ছি। এগুলোর সবই আমাদের চেষ্টা। কিন্তু সব কিছু নির্ভর করছে আল্লাহর ওপর। আশা করছি, তিনি আমাদের রক্ষা করবেন।
মক্কা এলাকার ইবরাহিম রোডের তিনটি ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাদের এখান থেকে মাস্ক বিক্রি বেড়েছে। মাস্কের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত মাস্ক রয়েছে।
সৌদি সরকারের ভিশন-২০৩০ এর অন্যতম লক্ষ্য হলো-বছরে ১ কোটি উমরা ভিসা প্রদান ও হজযাত্রীর সংখ্যা ৫০ লাখে উন্নীত করা। এ পথেই হাঁটছে দেশটি। এমতাবস্থায় উমরা ভিসা বন্ধ, তাদের পরিকল্পনায় ধাক্কা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে উমরা যাত্রীদের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি চীন, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং কাজাখস্তানসহ সাতটি দেশ থেকে আগত লোকদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা স্থগিত করা হয়েছে।
তবে কর্তৃপক্ষ জোর দিয়েই বলেছে, এসব স্থগিতাদেশ সাময়িক। কিন্তু কবে নাগাদ নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হবে সেটা এখনও স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ মনে করে, মানুষের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা নিয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।