কোরআন শিখতে হবে, পড়তে হবে
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালার ঘোষণা হচ্ছে, ‘অবশ্যই আমি এ কোরআনকে তোমার বাক প্রক্রিয়ায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে করে লোকেরা সহজে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’ -সূরা দুখান: ৫৮
সূরা কামারে বলা হয়েছে, ‘আমার এ কোরআনকে বোঝার ও উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। এ অবস্থায় এটি বোঝার এবং এ থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি?’
সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান আদেশ: আমি আল্লাহ বিশ্বাসী, নামাজ আদায় করি, জাকাত দেই, রোজা রাখি, হজপালন করি কিন্তু কোরআন তেলাওয়াত শিখিনি, কোরআন তেলাওয়াত করি না, আল্লাহতায়ালার অনেক আদেশ পালনকারী হলেও আমি কি আল্লাহর সর্বপ্রথম আদেশ লঙ্ঘনকারী নই? আল্লাহতায়ালার সর্বপ্রথম আদেশই হচ্ছে, ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ -সূরা আলাক: ১
কোরআন না শিখে, না পড়ে, না বুঝে থাকার কোনো সুযোগ কি ঈমানদারের জন্য আছে? কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা আগে কোরআন তেলাওয়াতের এবং পরে নামাজ কায়েমের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘অহিযোগে যা নাজিল করা হয়েছে তা পড়ো এবং নামাজ কায়েম করো।’ -সূরা আনকাবুত: ৪৫
বাক্শক্তি কোরআনের জন্য: কোরআন শেখা এবং শিক্ষাদান করার গুরুত্ব কত বেশি, তা সূরা আর রহমানের প্রথম চার আয়াতে আল্লাহ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এভাবে, ‘পরম দয়ালু আল্লাহ। তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি কথা বলতে শিখিয়েছেন।’
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বাক্যটির আগে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত, গুরুত্ববহ ও চিন্তা-গবেষণার বিষয়। আসলে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণের মাপকাঠি কোরআন। আল্লাহতায়ালা মানুষকে বাক্শক্তি দিয়েছেন কোরআন শেখা ও শিক্ষাদানের জন্য।
প্রকৃত কোরআন বিশ্বাসী: কোরআনের ওপর ঈমান আনয়নকারীর সংখ্যা অনেক হলেও আল্লাহর দৃষ্টিতে কোরআনের ওপর প্রকৃত ঈমান আনয়নকারী কারা? আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাদের যে ধর্মগ্রন্থ দান করেছি তা যারা সঠিকভাবে সত্য বুঝে তেলাওয়াত করে তারাই এর প্রতি ঈমান রাখে এবং যে কেউ এটা অবিশ্বাস করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ -সূরা বাকারা: ১২১
শ্রেষ্ঠ হতে হলে: আমরা ছেলেমেয়েদের অনেক কিছু বানাতে চাই (নিজেরাও অনেক কিছু হতে চাই বৈ কি)। সে বানানোকে শ্রেষ্ঠত্বে পরিণত করতে চাইলে, ছেলেমেয়েদের সেরা মানুষ ও আলোকিত মানুষ বানাতে চাইলে একমাত্র পন্থা হচ্ছে কোরআনে কারিম শেখানো।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’
আনন্দ ও পুঞ্জীভূত সম্পদ: আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে আনন্দ করতে হবে কোরআনের জন্য। আর কোরআন মজিদই হচ্ছে পুঞ্জীভূত সম্পদের চেয়েও সেরা সম্পদ। সেরা আনন্দের জন্য আর সেরা সম্পদের অধিকারী হওয়ার জন্য কোরআন শেখার কোনো বিকল্প নেই।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ (কোরআন)। তোমাদের রবের তরফ থেকে এবং অন্তরে যা রয়েছে তার নিরাময় এবং মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত। বলো, এ কোরআন আল্লাহর অনুগ্রহে ও তার রহমতে। সুতরাং এতে তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। তারা যা কিছু সম্পদ পুঞ্জীভূত করে তা অপেক্ষা এটা কতই না শ্রেয়!’-সূরা ইউনুস: ৫৭ ও ৫৮
কোরআন শেখার অন্তরায়: মানুষ যাতে কোরআন না শেখে, না পড়ে, না বোঝে এ ব্যাপারে শয়তানের রয়েছে প্রচণ্ড বাধা। জিন-শয়তানের বাধা ছাড়াও মানুষের নিজের বাধাগুলো হচ্ছে চক্ষু লজ্জা, সময়ের অভাব, কঠিন মনে করা, কোরআনবিহীন ফায়দা লাভের মাধ্যমে মুক্তির আশা। মানুষরূপী শয়তানদের বাধা হচ্ছে মানুষকে কোরআন শিখতে না দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখা।
তবে প্রকৃত ঈমানদার মুসলিমকে সব বাধা অতিক্রম করে কোরআন শিখতে হবে, পড়তে হবে, বোঝার ও মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।
কাজেই আসুন, কোরআন শেখার কোর্সে অংশগ্রহণ করে কোরআন শিখি, প্রয়োজনে প্রাইভেট বা একাকী হলেও শিখি। সমাজসেবা ও শিক্ষার অংশ হিসেবে কোরআন শেখার কোর্সের বা ক্লাসের ব্যবস্থা করে অন্যদের কোরআন শেখানোর ব্যবস্থা করি।