পরিশ্রমীদের আল্লাহতায়ালাও সহায়তা করেন
বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে কাজ করতে হয়। পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছু অর্জন করতে হয়। পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতার প্রথম শর্ত হলো- প্রখর ইচ্ছেশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম। মানুষ যদি তার লক্ষ্যে অবিচল থাকে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে তবে একদিন সাফল্যের সুউচ্চ চূড়ায় পৌঁছাতে পারে। পরিশ্রম উন্নতির একমাত্র সিঁড়ি।
পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। আজ আমাদের চারপাশে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি দেখতে পাই। পৃথিবীর সোনালী ইতিহাসে অনেক সাফল্যমন্ডিত ব্যক্তির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। যুগে যুগে কালে কালে যারা স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছেন প্রকৃতপক্ষে তাদের এসব প্রতিভার পেছনে লুকিয়ে আছে কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়। আধুনিক বিশ্বে যা কিছু আবিষ্কার হয়েছে সবই পরিশ্রমের ফসল। তাই বলেছেন, ‘পরিশ্রমে ধন আনে, পূণ্যে আনে সুখ’
পরিশ্রম হলো সফলতা লাভ করার একমাত্র উপায়। যে কোন ব্যক্তি বা জাতির সফলতার পেছনে একমাত্র নিয়ামক হলো পরিশ্রম। মানুষ কোনো কাজে প্রথমবারেই সাফল নাও হতে পারে, দীর্ঘদিনের পরিশ্রম কিংবা নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রমের ফলেই ধরা দেয় কাঙ্খিত সাফল্য। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে তাতে হতাশ না হয়ে সেই কাজে কঠোর মনোনিবেশ করলে সফল হওয়া অবশ্যই সম্ভব।
একজন ছাত্র কঠোর অধ্যয়নের মাধ্যমেই ভালো ফলাফল করে থাকে। একজন কৃষক রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে চাষ করেন বলেই হাসিমুখে ফসল উত্তোলন করেন।
এটি খুব সহজেই অনুধাবনযোগ্য যে, পরিশ্রম হলো জীবনে সফলতা লাভের একমাত্র পন্থা। কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে প্রতিভা বা ভাগ্যের দ্বারা অসাধ্য সাধন করা যায়। কিন্তু পৃথিবীতে যারা কীর্তিমান তারা প্রতিভার চেয়ে কঠোর পরিশ্রমকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
কোরআনে কারিমের সূরা আনফালে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না সে নিজের ভাগ্য নিজের কর্মের দ্বারা পরিবর্তন করে।’ হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মানুষ তাই পায় যা সে করে।
আল্লাহতায়ালা প্রতিটি মানুষকেই প্রতিভা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যা প্রতিটি মানুষের ভেতর সুপ্ত অবস্থায় থাকে। যে ব্যক্তি কঠোর চিন্তা ও পরিশ্রমের দ্বারা এই সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারবেন তিনিই সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
ইসলাম ধর্মের প্রচারক হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কার কাফেরদের এতো অত্যাচারের পরেও সত্যধর্ম প্রচার থেকে বিরত হননি। বরং কঠোর পরিশ্রমের ফলে ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
গ্রীসের বাগ্মী প্রবর ডিডমস্থিনিয়া প্রথম জীবনে তোতলা ছিলেন। কিন্তু প্রবল ইচ্ছেশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের ফলে তিনি পরবর্তীতে গ্রীসের বিখ্যাত বক্তা হবার সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
মূঘল রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর প্রথম জীবনে রাজ্য থেকে বিতাড়িত হলেও পরবর্তীতে তিনিই সমগ্র ভারতবর্ষের সম্রাট হতে পেরেছিলেন কেবলমাত্র অধ্যবসায় বা পরিশ্রমের ফলে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। যারা কঠোর পরিশ্রমী, সৃষ্টিকর্তা তাদের সহায়তা করেন। পরিশ্রমহীন ব্যক্তিদের পরিণতি অতীব করুণ হয়।
প্রবাদ আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারাখানা। পরিশ্রমহীন মানুষেরা সকলের কাছে নিগৃহীত হয়। কোনো কাজে সফলতা লাভ করতে না পেরে সমাজের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। তাই সফলতার পথে এগিয়ে যেতে আমাদের কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।